অতিথি : সঙ্গীতা দে


 

আজ সকাল থেকেই মেয়ের মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে আছে। কারণ আজ বাবা মায়ের সঙ্গে তার ঘুরতে যাবার কথা ছিল। কিন্তু না সকাল সকাল বাড়িতে তার মাসি আর মেসোমশায় এসে হাজির হওয়ায় যাওয়াটা শেষে ভেস্তে যায়। একমাত্র মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বাবা বুঝতে পারে যে মেয়ের ভারী রাগ হয়েছে। একসময় আম্মা এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে যে “জানত দিদিভাই অতিথি নারায়ন, তাই বাড়িতে অতিথি এলে কখনো তাকে তাড়িয়ে দিতে নেই, তাদের ভালো করে আপ্যায়ন করতে হয়। আর এরকম মুখভার করেও থাকতে নেই।” 

“আপ্যায়ন কি আম্মা?” তিতলি তার আম্মাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞাসা করল। 

“অতিথিদের পছন্দমত খেতে দিতে হয়, তাদের সুবিধা অসুবিধা দেখতে হয়, তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হয়। বুঝেছ। আজকের পর থেকে আর কোনদিন কোন মানুষ তোমার বাড়ির দরজায় এলে তাকে তাড়িয়ে দেবে না। মনে থাকবে” আম্মা বলতে বলতে মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।  

“তাহলে আম্মা তুমিও কি ওদের নকুলদানা খেতে দেবে” এ কথা শুনে পাশে মা দাঁড়িয়েছিল, সেও হেসে ফেলল।

কিছুদিনপর আম্মা আর বাবা বাজার থেকে বাড়িতে ফিরে দেখে তিতলি আবার মুখ ভার করে দরজার কোণে দাঁড়িয়ে আছে। আম্মাকে দেখে চোখে জল চলে আসে। আম্মাও বুঝতে পারে নিশ্চয় তার একমাত্র নাতনির কিছু হয়েছে, না হলে এইভাবে মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে থাকার মেয়ে সে নয়। 

তাই আম্মা কোলে নিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই আম্মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে। আম্মা জিজ্ঞেস করলে বলে “কি হয়েছে, তুমি কাঁদছ কেন?”

তিতলি বলে “আম্মা তুমি তো বলেছিলে অতিথি নারায়ণ, তাহলে আজকে দরজায় যখন একজন ভিখারি এসে খাবার চাইছিল, তাহলে মামনি তাকে খেতে না দিয়ে কেন তাড়িয়ে দিচ্ছিল। আর আমি আমার টিফিন থেকে একটা পেস্ট্রি তাকে খেতে দিয়েছিলাম বলে মামনি আমাকে বকল”

আম্মা “ও আচ্ছা এই ব্যাপার। “

“তাহলে ওই ভিখারী কি নারায়ণ নয়? ও তো শুধু খাবারই চেয়েছিল, থাকতে তো চাইনি” তিতলির এই কথায় সবাই চুপ করে রইল। 

আম্মা মনে মনে ভাবল না নাতনির শিক্ষা ঠিক দিকেই এগোচ্ছে।   

 মানুষের জীবনে বড় হওার সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞান হলো মানবিকতা। একমাত্র এটা থাকলেই মানুষ মানুষের মত হয়ে উঠতে পারে।

Post a Comment

Previous Post Next Post