।। "পা...লা ছোটদা পা...লা।"
ওরা চার ভাই প্রাণপনে ছুটছে। ধপ করে একটা শব্দ শুনে গোবিন্দ পিছন ফিরে দেখলো পিছিয়ে পরা তার ছোটদা দামু মাটিতে পড়ে হাপাচ্ছে। আর একটু হলেই ওরা দামুকে ধরে ফেলবে। আর ধরতে পারলে রক্ষে নাই, পিটিয়ে হয়তো মেরেই ফেলবে। ঘুরে দাঁড়ালো গোবিন্দ। দামুকে মাটি থেকে তুলে পালাতে বলে পাশে পরে থাকা একটা চেলা কাঠ তুলে রুখে দাঁড়ালো।
একটু কাছে আসতেই দেখলো চার পাঁচ জন যারা ছুটে আসছে তারা কেউ তার পরিচিত নয়। বহিরাগত।
কাছে এসে আক্রমণ করতেই চেলা কাঠের ঘায়ে এক নিমেষে তাদের সব কটাকে ধরাশায়ী করে কাঠ ফেলে আবার ছুটতে লাগলো গোবিন্দ। এমন সময় ঠিক তার পিছনে একটা বোমা গাছে লেগে বিকট শব্দে ফেটে গেল। গোবিন্দ হুমড়ি খেয়ে মাটিতে পড়ে গেল। ওরা বোমা মারছে। সারা এলাকা ধোঁয়াতে ভরে গেল।
আবার উঠে ছুটতে লাগলো। না লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়ে গেছে লাগা বোম তার কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। ছুটে গিয়ে একটা খড়ের গাদার মধ্যে খড় ঢাকা দিয়ে নিজেকে আড়াল করে দেখলো কম করে পঞ্চাশ ষাট জনের একটা দল তাদেরকে হন্যে হয়ে খুঁজছে।
লুকিয়ে লুকিয়ে গোবিন্দ ভাবছে তার বাকি তিন ভাই এখন কোথায় কে জানে!
চেলা কাঠের ঘায়ে সদ্য আহত বন্য পশুদের হাতে ধরা পড়লে মারাত্মক একটা কিছু ঘটে যেতে পারে। কিছুক্ষণ খোঁজা খুঁজি করার পর না পেয়ে সেই পঞ্চাশ ষাট জনের দলটি ফিরে গেল।
পঞ্চায়েত নির্বাচন। গ্রাম দখলের লড়াই। এই নিবার্চনে বিরোধী একটি দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে গোবিন্দের মাসতুতো দাদা রামু। নমিনেশনের দিন থেকে নানা ভাবে তাকে হুমকি দেওয়া হয়। এক সময় নমিনেশন তোলার জন্য প্রাণনাশের হুমকি দিলে রামুদা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। তবুও প্রার্থী পদ প্রত্যাহার করে নি।
আজ সকাল থেকে ভোট দান পর্ব চলছে। বিভিন্ন ভাবে ভোটারদের প্রভাবিত করে তারা ভেবেছিল জিতে যাবে। কিন্তু একটার পর একটা রাউন্ড গণনার পরই বোঝা যাচ্ছিল গোবিন্দের দাদা রামু জিতে যাবে। আর তখনি শুরু হলো সন্ত্রাস। বোমা মেরে রামুর পক্ষে থাকা লোকেদের তাড়িয়ে দিলো। মাটি কামড়ে পরে ছিল ওরা চার ভাই। গোবিন্দ, গোপাল ও ওদের মাসতুতো দুই ভাই রামু ও দামু। গোবিন্দ ও গোপাল পাশের গ্রাম পলাশ পুরের বাসিন্দা হলেও তার মাসির গ্রাম এই বামুনডিহি গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে তাদের ভোট। তারা একই বুথের ভোটার।
আর এক রাউন্ড গণনা বাকি। নিশ্চিত হার বুজতে পেরে ওরা ওদের চার ভাইকে টেনে বুথ থেকে বের করে দেওয়ার পর থেকেই নিমেষে ঘটে গেল এত সব ঘটনা। এর পর ভোটের ফলাফল কি হবে সেটা বুঝতে পারলো গোবিন্দ। এখন প্রাণ নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারলে হয়।
খড়ের গাদা থেকে মুখ বের করে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলো গোবিন্দ। সন্ধ্যা পেরিয়ে তখন অনেকটা রাত। কটা বাজলো কে জানে! অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না। মনে হয় তারা আর এখানে কেউ নেই। ভয়ে ভয়ে খড়ের গাদা থেকে বেড়িয়ে বামুনডিহি গ্রাম থেকে বেরিয়ে মাঠের জল কাদা ভেঙে বাড়ির পথে এগুতে লাগলো গোবিন্দ। শুনতে পেল মানুষের গণতান্ত্রিক মতামত কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সন্ত্রাসীদের বিজয় উল্লাস।।