ফিরা রথ বিভ্রাট : নিতাই শর্মা


 

ধর্ম মানে ধারন করা। আমরা যারা ধর্মভীরু ধর্মকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি। এ যেন আমাদের মনের শক্তি যোগায়। সমাজে দু ধরণের মানুষই দেখা যায়। আস্তিক ও নাস্তিক। যারা ধর্ম মানে না তারা নাস্তিক। আর যারা ধর্ম মানে তারা আস্তিক। তারা নিজ নিজ ধর্মের প্রতি আস্থা রেখে চলেন ‌জগতে আস্তিকদের সংখ্যাটাই বেশী। প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করেন‌ ‌। ধর্ম যার যার উৎসব তার । যে যেই ধর্মেরই হোক আনন্দে কোন বাঁধা নেই। দূর্গোপূজো হিন্দুদের পবিত্র ও সবচেয়ে বড়ো উৎসব। হিন্দুরা দূর্গাপূজা করে। কিন্তু দেখা যায় হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান সব অংশের লোকেরা দূর্গাপূজা দেখেন ও আনন্দ উপভোগ করেন। আবার মুসলিম সম্প্রদায়ের বড়ো উৎসব ঈদের সময় ও উভয় সম্প্রদায়ের সম্প্রীতি লক্ষণীয়। কোন ধর্ম খারাপ নয়। প্রত্যেক ধর্মের কিছু নিজস্ব অণুশাসন বিধি রয়েছে। এগুলো ও বিজ্ঞানভিত্তিক। কিন্তু দেখা যায় অনেকেই ধর্মীয় অনুশাসন অবজ্ঞা করে নিজেদের মতো করে পালন করে। ধর্মীয় উৎসবগুলো পালনের ক্ষেত্রে তিনটা পদ্ধতি রয়েছে। যথা - সাত্যিক , তামসিক ও রাজসিক। আজকাল মানুষ সাত্যিকভাবে পূজা পার্বন করেন না। প্রত্যেক যেন নিজেদের আনন্দ উল্লাসের জন্যই পূজা পার্বণ করে। নাচ গান মদ্যপান যেন বিধি হয়ে গেছে। পূজোর যে মৌলিক নিয়ম-কানুনগুলো রয়েছে এগুলো এখন গৌন। পূজোর মানে হয়ে দাঁড়িয়েছে আনন্দ করা। গগন চুম্বী প্যান্ডেল করে দর্শক টানা বড়ো হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ফলে বহু অবাঞ্চিত ঘটনা ঘটে চলেছে হামেশা। এরকম একটা ঘটনা ঘটেছে কোমারঘাটে ইসকনের ফিরা রথে। নিয়ম অনুযায়ী রথ তৈরী করা নিম কাঠ দিয়ে । এতে কোন লৌহ থাকা চলবে না। রথের নির্মাণ শুরু হয় অক্ষয় তিথিতে। নির্মাতাগণ অতি সংযমের সঙ্গে রথ নির্মাণ করে থাকেন। কিন্তু কার কথা কে মানে। ইসকনের রথ তৈরী করা হয় পুরো লৌহ দিয়ে। কাঠের কোন অস্তিত্বই নেই সেই রথে। শুধু রথ তৈরী করা হয় বিদ্যুতের ও উপরের উচ্চতায়। প্রশাসনিকভাবে যে রাস্তা দিয়ে রথ নিয়ে যাবার কথা সেই পথ বাদ দিয়ে অন্য পথ ধরে রথ টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রচুর ধর্মপ্রাণ লোক রথের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। রথের দড়িতে টান পড়ে। হঠাৎ সকলের অগোচরে রথের লোহার চুড়া স্পর্শ করে ভারী বিদ্যুৎ পরিবাহী তারে। সঙ্গে সঙ্গে তার ছিঁড়ে পড়ে রথে ও ধর্মপ্রাণ ভক্তদের উপরে।দাউদাউ করে আগুন জ্বলে জ্যান্ত মানুষকে দেহে। কোন কিছু বোঝার আগেই প্রাণ রায় সাত জনের। গুরুতর আহত হন আরো প্রায় তিরিশজন‌ ।

ঘটনার ফলে আজো মানুষের কান্নার রোল কানে ভাসে এলাকাবাসীর । অবিবেচনাপ্রসূত কর্মের ফলেই এই বিভ্রাট। এর জন্য জগন্নাথ কখনো দায়ী নয়। দায়ী ফিরা রথের কর্মকর্তাগণ।

Post a Comment

Previous Post Next Post