বন্ধু ঐতিহ্য পত্রিকা,
আজ তোমাকে শোনাবো আমার মনের কথা। যাকে বলতে পারো "খাম খেয়াল "বিষয়ক দু চার কথা।
আগে-পরে ভেবে কাজ না করলে আমরা তাকে "খাম খেয়াল" অভিহিত করি। যাদের মধ্যে হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা অতি প্রকট, তাদের বলি – খেয়ালি, আড়ালে পাগলাটে। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই কমবেশি 'খামখেয়ালে'র বসত। শুধু মানুষ কেন প্রকৃতি এবং পশুপাখির খাম খেয়ালিপনাও লক্ষনীয়।
সেদিন ন'কড়ি খুড়োকে বলতে শুনলাম- "হবে না এতো গরম! পৃকিতি মা শোদ নেচ্ছেন। গাছ লাগানো কোতায় একোন ? শুদু সেমেন্টের ঢালাই রাস্তা আর পাকা ঘরবাড়ি। যারি দুপয়সা হচ্ছে, সোব ঠান্ডা মেসিন কেনছে। ওই গরমগুলো সব পৃকিতিকেই তাতাচ্ছে। পৃকৃতিও খাম খেয়ালি জুরেচে। গরম তো লাগাতার গরম। আবার বারি ঝরবে তো ঝরবেই। দেবে খরার ধান সোব মাঠেই পোচিয়ে।"
আমাদের গাইগরু ছিল নাম-খেয়ালি। গোয়ালা দুইতে এলে ইচ্ছেমতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতো। কেঁড়ে ভরতি দুধ দিতো। আবার এক একদিন বাছুর বা গোয়ালা কারোকেই কাছে ঘেঁষতে দিত না। এমন শিং নাড়তো যে ভয়ে কেউ সেদিন তার কাছে যেতো না।
রকমারি ম্যাগাজিন বই জমানোর সঙ্গে আমার খাম খেয়াল হলো বাড়ির চার পাশের ওই তিন -ছয় ফুট ছাড়ের মাটিতে গাছ লাগানো। পাতা বাহারি, কারিপাতা, রঙ্গনফুল ,পাথরকুচি , টগর, বেলি মানিপ্লান্ট লাগাতে লাগাতে পেয়ারা ও আম।
প্রতিবেশীদের দিকে শাখা প্রশাখা চালিয়ে দেয় গাছে। প্রতিবেশীরা সরাসরি আপত্তি জানালে উত্তরে জানাই– "গাছ আছে তাই পরিবেশ শীতল হচ্ছে। পাখি আসছে। অক্সিজেন পাচ্ছি। আম পেয়ারা পাখিতে খাবে। তোমরাও খাবে।"
এক ভোরে গাছ কাটার শব্দে ঘুম ভাঙলো। জানলা খুলে দেখি আমগাছটি কাটার পরে নর্দমাতে শুয়ে আছে। পেয়ারা গাছ পথের ধুলোয় অন্তিম শয্যায়।
মন খারাপে সেদিন আমি মৌন ছিলাম। রবীন্দ্রনাথের "বলাই" মননে আর বনফুলের "নিমগাছ" চিন্তনে সারাটিদিন।খাবার খেতেও ভুলেছিলাম সেদিনে।
মীনা রায় বন্দ্যোপাধ্যায়