পূজোর ছুটি তে শ্রীরামপুর ট্যুর এ্যান্ড ট্রাভেলস্ ভলভো সুপার লাক্সারি বাসে গ্রুপ ট্যুরে আয়োজন করেছে।পাঁচ দিনের ট্যুর গন্তব্য গয়া রাজগীর নালন্দা পাওয়াপু্রি দেওঘর তপোবন।পথিকৃৎ সেন কোলকাতায় একটি সলিসিটার ফার্মে চাকরী করেন।স্ত্রী দোলা ছেলে অমিত মেয়ে অনিতা আর চাকরি এই তার ধ্যান জ্ঞান,নিজস্ব জগৎ যা হয় মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় পরিবার।শেষ বেলায় কটা সিট খালি ছিল পাড়ার ছেলেরা জোড়াজুড়ি করে বললো পথিকৃৎ দা এবার তোমাকে যেতেই হবে এককালীন কিছু টাকা দিও আর বাকিটা ঘুরে এসে দু'তিন বারে দিলেই হবে,তোমার জন্য রেট টাও কমিয়ে দিয়েছি।ছেলে মেয়েরা ছোট-ছোট তারা তো শুনেই লাফালাফি দোলা কে জিজ্ঞেস করতে ও নিমরাজি তাছাড়া বিয়ের পর আজ অবধি দূরে কোথাও বেরোবার সাধ থাকলেও সামর্থে কুলোয় নি পথিকৃতের,অগত্যা সাত পাঁচ ভেবে গোছগাছ করে বেড়িয়ে পড়া আর কি।এলাকায় শ্রীরামপুর ট্যুর এ্যান্ড ট্রাভেলস্ বেশ নাম করেছে।গাড়ি তে উঠেই অনেক চেনা মুখের দেখা,পাড়ার প্রতিবেশী।সবাই বেশ উৎফুল্ল হই চৈ করছে।হর্ণ দিয়ে গাড়ি ছাড়ার ইঙ্গিত দিলো,অবশেষে বিকাল নাগাদ গাড়ি ছাড়লো, ড্রাইভার টিভিতে গান চালু করেছে "ও টুনির মা তোমার টুনি কথা শোনে না"বাচ্চারা সব হাততালি দিয়ে নাচতে শুরু করেছে,ওদের সিট পিছনে ছিল বেশ মজা নিচ্ছে সবাই।আস্তে আস্তে সবাই থেমে যেতে লাগলো গাড়ির ভেতরে আলো নিভিয়ে দিলো।বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার শুধু গাড়ির আলো দেখা যাচ্ছে।সিটে বসে দোল খেতে খেতে চোখটা লেগে এলো এমন সময় হঠাৎই সার্ডেন ব্রেক কষে গাড়িটা ডান দিকে দোল খেয়ে বাঁদিক নিয়ে আবার তীব্র গতিতে ছুটতে লাগলো।সবাই আতঙ্কে চেঁচামেচি শুরু করেছে ড্রাইভার হর্ণ দিয়ে উর্ধশ্বাসে গাড়ি ছুটিয়ে চলেছে।অনেকেরই সামান্য মাথা ঠুকে গেছে,কে যেন বলে উঠলো মাল খেয়ে গাড়ি চালাচ্ছে নাকি?এই জন্যই এরা খিস্তি শোনে।আমাদের গাড়ির পেছনে একটা গাড়ির জোরালো আলো ক্রমশঃ স্তিমিত হয়ে গেল।শেষে গাড়ি টা কোডারমা ঘাটির কাছাকাছি একটা ধাবায় দাঁড় করালো অনেক টুরিস্ট বাস দাঁড়িয়ে আছে।কানাঘুষা শোনা গেল গাছের গুঁড়ি দিয়ে আমাদের গাড়িটা ডাকাতরা আটকাতে চেষ্টা করেছিলো এবং গাড়ি নিয়ে পিছনে তাড়া করেছিল।চালকের দক্ষতায় এ যাত্রায় বেঁচেছে অথচ না জেনে কতো কুকথা সবাই বেচারা ড্রাইভার কে বললো।গাড়ি থেকে নেমে রাতের খাবার ও চা টা খেয়ে অন্ধকারে বাথরুম করে ফ্রেশ হয়ে আবার গাড়িতে ওঠা হলো। এবার সামনে পিছনে পুলিশ জীপ দিয়ে সবকটা বাস একসাথে ছাড়া হবে ছোট্ট পাহাড়ি রাস্তা।সবাই একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো।গাড়ি গুলো এয়ার হর্ণ বাজিয়ে প্যাসেঞ্জারদের ডাকতে শুরু করলো।
যাহোক সকলেই প্রায় নিশ্চিত হয়ে আবার যাত্রা শুরু হলো।এত কিছু ঘটনা কিন্তু দোলা জানেই না,বাচ্চাদের নিয়ে ঘুমোচ্ছিলো পথিকৃৎ ও কিছু বলিনি পাছে আবার ভয় পায়।মেয়ে মায়ের কোলে ঘুমোচ্ছে অমিত বলছে বাপী আর কত দূর,সারারাত কি বাস চলবে,ড্রাইভার কাকু ঘুমোবে না?কোয়েশ্চেন ব্যাঙ্ক খুলে বকবক করতে করতে ও একসময় ঘুমিয়ে পড়লো।সিট টা পুশ ব্যাক করে দোলা পথিকৃৎ এর কাঁধে মাথা রেখে ঘনিষ্ঠ হয়ে চোখ বুজে থাকলো।পথিকৃৎ মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ক্রমশঃ দোলার ঘন ঘন তপ্ত নিঃশ্বাসে পথিকৃৎ পুড়তে পুড়তে বললো কি হয়েছে?দোলা বললো ভালো লাগছে না।এই কথার মানে অতি সহজেই বুঝতে পেরে দোলার মুখটা বুকের মাঝে রেখে উষ্ণ সোহাগের চুম্বনে ভরিয়ে দিল।বিয়ের এতো বছর পর এই প্রথম কোথাও বেড়াতে বেড়িয়েছে।ছোট বেলার খেলার সাথী কৈশোরে প্রেমে রূপান্তর অবশ্য এর পরিণতি পেতে কঠিন লড়াই করতে হয়েছে পথিকৃৎ কে,পৃথিবী একদিকে আর ভালোবাসা একদিকে।প্রায় বেকার অবস্থায় জেদ করে মানবিক কারণে বিয়েটা করে।দৈনন্দিন অভাব অনটনের সাথে লড়াই করে আজ একটু স্থিতিশীল অবস্থায় এসেছে। আজ ওরা সত্যিই সুখী দম্পতি।এই ভাবেই কখন দু'জনে ঘুমিয়ে পড়ে ।ওদিকে বাস ঘো ঘো শব্দে এঁকে বেঁকে ছুটছে মাঝে মাঝে রাতের বুক চিরে গাড়ির হর্ন বেজে ওঠে।
ভোরের আলো ক্রমশঃ ফুটে উঠছে।একটু ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা পরিবেশ বাস এসে থামলো গয়ায়।আস্তে আস্তে সবাই নামতে লাগলো।আয়োজকরা স্টোভে চা বানাতে ব্যস্ত।ঠান্ডায় চা টা পেলে নেহাত মন্দ হয় না পথিকৃৎ মনে মনে বললো।পাশেই ঘরোয়া পরিবেশে চারটে ডরমেটারি ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে।দুটো মেয়েদের আর দুটো ছেলেদের।চা টা খেয়ে সবাই রুমে গেল,অনেকের আবার বাথরুমে যাবার তাড়া।হই চৈ কলরব বেশ যেন হাটের মাঝে বসতি।ইতিমধ্যে টিফিনের প্যাকেট চলে এলো ডিম কলা পাউরুটি আর একটা সন্দেশ।ফ্রেশ হয়ে টিফিন খেয়ে সবাই বেরিয়ে পড়লো।আশেপাশে হিন্দি ভাষী অতি সাধারণ মানুষের বসবাস,জায়গা টা ভীষন অপরিচ্ছন্ন ক্ষাণিক এগোতেই দিগন্ত বিস্তৃত ধূ ধূ বালুচরে কেউ মাথা নেড়া হচ্ছে কোথাও শ্রাদ্ধের পারলৌকিক ক্রিয়া কর্ম হচ্ছে।এটাই হলো সেই প্রসিদ্ধ ফল্গুনদী কিন্তু শুধুই বালুকারচর বালি খুড়লে তবেই জলের দেখা পাওয়া যায়।দোলা বললো এখানে পিন্ডদান করলে আত্মার শান্তি লাভ হয় আর পুনর্জন্ম হয় না।পথিকৃৎ যদিও নাস্তিক নয় তবে যুক্তি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করে। প্রতি উত্তরে বল্লো আচ্ছা দোলা হিন্দুরা ছাড়াও পৃথিবী তে আরও অনেক জাতি আছে তারা তো এখানে এসে শ্রাদ্ধ শান্তি করে না তাহলে তাদের পরিবারের আত্মার মুক্তি কিভাবে হয়?মানুষ ছাড়াও জীবজন্তু মারা যায় তাদের আত্মার কি হবে?দোলা একটু অখুশি হয়েই বললো অতোসতো জানি না বংশপরম্পরায় তাইতো সবাই বলে সব কি মিথ্যে ?আরে মিথ্যেই হোক সত্যিই হোক তার তো একটা যুক্তি থাকবে,ছাড়ো তোমাকে বোঝানো আর রাবন কে গেঞ্জি পরানো এক ব্যাপার। পথিকৃৎ দোলা কে বল্লো চলো এবার রুমে ফেরা যাক। অমিত বোন কে নিয়ে বালি তুলে তুলে চূড়া বানিয়ে খেলছে।দোলা সাইড ব্যাগ থেকে জলের বোতল বার করে হাত ধূয়ে দেয় ওরা বায়না ধরেছে আর একটু খেলবে।অমিত বলছে দেখনা মা খুড়লে কেমন জলে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে।না বাবা এখুনি গাড়ি ছেড়ে দেবে তো!চলো অনেক খেলা হয়েছে বেলা হয়ে গেল এবার খেতে হবে।লাঞ্চের মেনু ভাত গরম বেগুনী,ঝুরো আলু ভাজা ফুলকপি কড়াইশুটি গাজর দিয়ে ভেজ ডাল চিকেন কারি চাটনি পাপড়।খাওয়া দাওয়া সেরে বিকেলের আগেই গাড়ি ছেড়ে দিল পথিকৃৎ দু'চোখ ভরে ফল্গুনদী কে দেখে নিল আর তো কোনদিন আসা হবে না..........
পথে বুদ্ধগয়ায় বুদ্ধদেবের মূর্তি দর্শন করে প্রায় সন্ধ্যে সাতটা গাড়ি এসে থামলো রাজগীরে"রামকৃষ্ণ লজ" হোটেলে।দোলার আব্দারে পথিকৃৎ আলাদা করে একটা ডবল বেডরুম ভাড়া নিল।লাগেজ থেকে তোয়ালে বার করে দোলা বাথরুমে গেল।পথিকৃৎ একটা তোয়ালে জড়িয়ে একটু জল খেয়ে একটা সিগারেট ধরালো। ছেলে মেয়ে গুলো ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।দোলা ওদের তুলে মুখ হাত-পা ধুয়ে জামা চেঞ্জ করে দিয়ে নিজেও একটা হাল্কা আকাশী রঙের শাড়ি ম্যাচিঙ ব্লাউজ পড়ে রেডি হতে হতে বাথরুমে টোকা দিল আরে তোমার হলো?এই লোকটা বাথরুমে ঢুকলে আর বেরোতে চায় না!পথিকৃৎ বাথরুম থেকে বেরিয়ে মুচকে হেসে বল্লো ওহ্ গোপাল ভাঁড় ঠিক কথাই বলেছিল পায়খানা করার মতো শান্তি আর কিছুতেই নেই!একটা পাঞ্জাবি আর পায়জামা পড়ে সবাই কে নিয়ে বেরলো। হোটেলের পাশ দিয়ে একটা পিচ ঢালা চওড়া রাস্তা তার গা দিয়ে ই খাড়া একটা পাহাড় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বেশ শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ।ছেলে মেয়েরা জীজ্ঞাসা করলো বাপী এটা কি?ও বল্লো পাহাড়।তাই মা পাহাড় এমন দেখতে হয়?ওদের হাত ধরে পায়ে হেঁটে রাস্তায় বেড়াতে বেড়াতে বেশ সুন্দর মিষ্টি গলায় দোলা একটা রবীন্দ্র সংগীত গুনগুন করতে শুরু করে।স্বপ্নের আবেশে বিভোর ওরা দুজনে,ওদের মতো সুখী যেন এ পৃথিবীতে আর কেউ নেই।হঠাৎ পথিকৃতের ডাকে সম্বিত ফেরে এই আমরা অনেক দূরে চলে এসেছি অচেনা জায়গা চলো ফেরা যাক।রুমে আসার কিছুক্ষণ পর রাতের খাবার পালা শেষ করে নিল।কাল সকাল সকাল উঠতে হবে সাইড সিনে যাওয়ার প্রোগ্রাম।অনিতা বাবার নেওটা ও বল্লো বাপী আমার দিক করে শোও অমিত বায়না ধরলো না বাপী আমার দিকে শোবে এই বলে দুজনে ঝগড়া শুরু অগ্যতা পথিকৃৎ বললো ঠিক আছে আমি মাঝখানে মুখ করে থাকছি আর্ধেক তোর আর্ধেক দাদার। সাময়িক বিরতি,দুজনে দুদিকে গলা জড়িয়ে ধরলো।অমিত হেঁচকা টেনে মুখটা ওরদিকে ঘোরাতেই অনিতা চিল্লে উঠলো হবে না বলে মুখটা ওর দিকে ঘুরিয়ে নিল।বেচারা পথিকৃৎ বলতে লাগলো ওরে আমার মুন্ডুটাই তো ছিড়ে যাবে।এসব দেখে উফ্ এরা দু'জনে এক জায়গায় থাকলেই ঝটাপটি শুরু করে,বলে দোলা পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল।পথিকৃৎ আড়চোখে দেখে মুচকি হেসে বলল তোমার আবার কি হলো?ও কোনো উত্তর দিল না।ছেলে মেয়েরা ঘুমিয়ে পড়তে দোলার পাশে গিয়ে কাছে টেনে নিয়ে সোহাগ করতে থাকে।এ'কবছরে দোলার একটা অভ্যাস হয়ে গেছে সারাদিন পরে স্বামীর কাছে ছাড়া রাতে ঘুমাতে পারে না।
সকাল বেলা দরজায় টোকার আওয়াজে ওরা উঠে পড়লো।দরজার ওপাশ থেকে কেউ একজন বললো আরে পথিকৃৎ দা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিন সবাই বেরিয়ে পড়েছে।দোলা ছেলে মেয়ে কে ডাকতে থাকে ওরা উঠতে চাইছে না বলছে আর একটু ঘুমাই না মা।জোর করে ওদের তুলে তৈরি হয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লো।ঘোড়ায় টানা টাঙ্গা করে যেতে হবে।জীবনে প্রথম ঘোড়ার গাড়ি তে চেপে ভ্রমন বেশ রোমাঞ্চকর। অবশেষে পাহাড়ের টিলায় এসে ঘোড়ার গাড়ি দাঁড়ালো।ওখান থেকে পাহাড়ের চূড়ায় একটা বৌদ্ধ মন্দিরে যেতে হবে।চারিদিক খোলা একটা হাতোল চেয়ার মাঝ বরাবর রড দিয়ে আঁটা লোহার তারের দড়ির সাথে আঙটায় আটকানো রোপওয়ে,বেশ ভয়ের ব্যাপার যাহোক টিকিট কেটে পথিকৃৎ মেয়েকে নিয়ে এবং দোলা ছেলেকে নিয়ে পরপর দুটি চেয়ারে চেপে বসলো।বাচ্চা গুলোকে চেপে ধরে ওদের চোখ চাপা দিয়ে যাত্রা শুরু হলো।মাঝপথে নিচের দিকে তাকালে বুক কেঁপে ওঠে।প্রায় আধঘণ্টা পর পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছায়।অপূর্ব বৌদ্ধ স্থাপত্য চোখ জুড়িয়ে গেল।বুদ্ধদেবের মূর্তির সামনে একটা ছবি তোলা হলো।বেলা এগারোটা নাগাদ নীচে নেমে এলো এবার গন্তব্য ঐতিহাসিক নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভগ্নস্তূপ।
নালন্দা একজন গাইড আমাদের গ্রুপে ভাড়া করা হলো। তিনি ই সব বলছেন।দূরে একটা টিলা দেখিয়ে বললো ঐখানে হিন্দি সিনেমা "জনী মেরা নামের"শুটিং হয়েছিল।ছাদ বিহীন একটা ধ্বংস স্তূপের কাছে দেখলাম আগেকার ছোট ইটের তৈরি নিঁচু চওড়া বেঞ্চের মতো গাইড বলতে লাগলো বিশ্বের রাজা হর্ষবর্ধনের সময় বিশ্বের বহুপ্রান্ত থেকে প্রায় হাজার হাজার ছাত্র এখানে পড়তে আসতো তারা সব এখানে থাকতো একটা ঘরে তিন/চার জন করে থাকার ব্যবস্থা ছিল তারা ঐ বেঞ্চের মতো জায়গায় টি শোবার জায়গা হিসাবে ব্যবহার করতো।কিছুক্ষণের জন্য পথিকৃতের সেই যুগের ছবি মনের স্মৃতি কোঠায় ভেসে উঠলো।মিউজিয়ামে রাখা মাটির আসবাবপত্র কিছু চাল কালো কয়লার মতো ও সেই যুগের মুদ্রা।দোলা জিজ্ঞাসা করল এগুলো সব মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেছে!হ্যাঁ আমরা তো ইতিহাসে পড়েছি। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার সাথে বাস্তব জ্ঞানের জন্য এসব ঐতিহাসিক ভ্রমণের প্রয়োজন আছে।বাচ্চাদের কে বিস্কুট জল খাইয়ে এবার ফেরার পালা সকালের টিফিন রাস্তায় সেরে নিয়েছিল তবু বেশ বেলা হয়েছে।একটা জিনিষ এখানে হজমের কোনো গন্ডগোল নেই, আমাদের তো ওখানে কথায় কথায় গ্যাস অম্বল। দুপুরের খাওয়া সেরে একটু বিশ্রাম বিকালে আবার বাসে ওঠার পালা এবার গন্তব্য দেওঘর.......
রাত্রি আট টা নাগাদ দেওঘর পৌঁছালো একটি হোটেলে থাকার ব্যবস্থা।পাশেই পরম প্রেমময় ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের আশ্রম কিন্তু রাত হয়ে যাওয়ায় জন্য বন্ধ। বাইরে কতগুলো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।এই এলাকায় নাকি মহুয়ার রস পাওয়া যায়,একদল গেল আনতে।আলদা রুমে ঢুকে ওরা ছেলে মেয়েদের শুইয়ে জামাকাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে নিল।ঔৎসুক বশতঃ মহুয়ার রস মুখে দিতে গলা বুক জ্বালা।ছিঃ এইসব মানুষ খায় কি করে পথিকৃৎ বললো।রাতের খাবার খেয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লো সত্যিই বেশ ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসছে।একটু মহুয়ার রসে বেশ যেন ঝিমঝিম ভাব।দোলা পথিকৃতের বুকে মুখ গুঁজে দিল।
সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে একটু ফ্রেশ হয়ে জামাকাপড় পড়ে রেডি হতে লাগলো ইচ্ছা করেই ছেলে মেয়ে কে ডাকে নি।চা ব্রেকফাস্ট সেরে ছেলে মেয়েকে ডাকে পথিকৃৎ।বাচ্চাদের পা,পিঠ টিপে দেয় বাবুরে উঠে পড়ো এবার।ওদের স্নান করিয়ে জামাপ্যান্ট চেঞ্জ করে দিল।বেলা দশটা ঠাকুরের আশ্রমে খাবার লাইন কুপন কেটে ঐখানেই দুপুরের খাবার সেরে তপোবন বেড়াতে যাওয়া আসলে এবার বাড়ি ফেরার পথে।ত্রিকূট পাহাড়ে
কিছু মানুষ কাঠ কেটে ফিরছে।হঠাৎ একটা মড়ার খুলি দেখে পথিকৃতের চোখ চকচকে করে উঠলো।আপন মনে বললো কি রে যাবি ?তো চ' হাতে করে মড়ার খুলি নিয়ে নিচে নামতে থাকে।
দোলা বললো আরে ভুতে ধরবে যে তোমাকে।কেন না এসব অপঘাতে মৃত্যু।
ওহঃ তাইতো আচ্ছা দোলা কতো কুকুর বিড়াল তো অপঘাতে মারা যায় কখনো দেখেছো ওদের ভুতে ধরেছে?
আমি চাই ছেলেমেয়েরা দেখে বুঝুক ভুত বলে কিছু নেই ওরা যেন কখনো ভুতের ভয় না করে।বাসের কাছে আসতেই সবাই প্রায় একযোগে যেন বিদ্রোহ শুরু করে দিল।অগত্যা ঐ খুলিটা রেখে পথিকৃৎ একটা কাঠকয়লা দিয়ে বিড়বিড় করে বল্লো ওরা নিয়ে যেতে দিচ্ছে না তুই এখানে থাক।বাসের সবাই মনে করলো পথিকৃৎ মন্ত্র বলছে।সবাই বাসে ঢোকার আগে জল দিল হাত-পা ধুয়ে তবে বাসে উঠতে দিল।বাস হর্ণ বাজিয়ে ছেড়ে দিল। অনেকে জিজ্ঞেস করলো তোমার ভয় লাগেনা ওভাবে মড়ার খুলি ধরতে?
পথিকৃৎ বিজ্ঞের মত জবাব দিলো,আরে অমাবস্যার রাতে ঐ খুলিটা জাগালে অনেক কাজ হয়।
সবাই বিস্ফোরণ দৃষ্টি তে প্রশ্ন করলো কিভাবে হবে,ওতো মরে গেছে??
---- অমাবস্যার রাতে শ্মশানে যে আগুনে মড়া পোড়ানো হয় সেই আগুনে খুলিটাকে ভালো করে ঘি মাখিয়ে সিঁদুর পরিয়ে ওর মধ্যে দুধ ঢেলে গরম করলে ও জেগে উঠবে।ঐ দুধ দিয়ে অনেক কাজ হয়।
---- সবাইয়ের মুখ পাংশু হয়েগেছে ঢোক গিলে বলে ওরে বাব্বা,পথিকৃৎ দা তুমি তো দেখছি অনেক কিছু জানো!
----- আরে না- না এতক্ষণ যা বললাম সব ঢপ মিথ্যে কথা।আসলে এভাবেই গুনীন তান্ত্রিক সেজে মানুষ কে বোকা বানায় বুজলি।
---- কেউ আর তর্ক করার সাহস পেলো না,সবাই চুপচাপ বাস আপন গন্তব্যে ছুটতে লাগলো...........।