চেয়ে চেয়ে দেখলাম তুমি চলে গেলে : সুমি সাহা


  আমার জীবনের অভিশপ্ত রাত হলো ১৪ ই জানুয়ারি ২০১৩ । সেদিন ছিল রবিবার। সারাদিন আমি সংসারের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। আমার ছেলে মেয়ে নিজেদের কাজে সারা সকাল ব্যস্ত ছিল। আমার স্বামীর সেদিন তাঁর অনেক বড় কাজ ছিল। সকালেই চা আর বিস্কুট খেয়ে বেড়িয়ে যায়। যাবার সময় বলে সারাদিন খুব ব্যস্ত থাকবে। ।দুপুরে এক ফাঁকে আসে সবাই মিলে একসাথে মধ্যাহ্ন ভোজ পারলাম। আমার স্বামী রোজ দুপুরে একটু বিশ্রাম নিত।সেদিন না নিয়ে কাজে বেড়িয়ে যায়। । সেদিন রবিবার বলে ছেলে মেয়ে সবাই বিকালে বন্ধু বান্ধবীদের সাথে বেড়িয়ে গেলো। আমি সারা সন্ধ্যা একা। হঠাৎ দেখি আমার স্বামী এসেছে হাতে খাবার। আমার জন্য কিনে এনে নিজে হাতে সাজিয়ে আমাকে দিয়ে বলেএই তুমি সব খেয়ে নাও। আজ খুব ব্যস্ত ফিরতে আমার রাত হবে। নিজে সামনে বসিয়ে খাইয়ে কাজে গেলো। আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আর ভাবছিলাম কি হলো আজ এই লোকটার। যা জীবনে কখনো করেনি। ।আমি খেলাম। উনি খেলেন না। আমাকে খাইয়ে চলে গেলো কাজে। আমি রাতের খাবার বানাই। আমার ছেলে মেয়ে বাড়ি এসে ওরা রাতের খাবার খেয়ে নেয়। দূরদর্শনের পর্দায় মন দিয়ে অনুষ্ঠান দেখে। । আমার স্বামী সাধারণত সন্ধ্যা আটটায় রোজ ফিরে আসতেন। যতই কাজ থাকুক কিন্তু সেদিন এতটাই ব্যস্ত ছিলেন যে সেদিন এলেন রাত বারোটায়। এসে বললেন আমি খাবো না অনুষ্ঠান বাড়িতে খেয়ে এসেছি। আমরা যেনো খেয়ে নেই। ।আমি শুধু বাকি ছিলাম খেতে। আমার সন্ধ্যা বেলার খাওয়ার জন্য পেট ভরা ছিল তাই আর খাইনি। । । আমি ওনার পাশে শুয়ে শুয়ে মোবাইলে গেম খেলছিলাম। উনি ঘুমাচ্ছিলেন।আমি খেলতে খেলতে খেয়াল করিনি কখন রাত দুটো বেজে গেছে। হঠাৎ দেখি আমার স্বামী ঘুম থেকে উঠে বলছেন পিঠে ব্যথা করছে। আমি বললাম ডাক্তার ডাকি, উনি বললেন না মনে হয় ব্যায়াম করতে গিয়ে খি্ঁচ লেগে গেছে। আমি বললাম অন্য কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা উনি বললেন না। আমি তখন ওনার পিঠে তেল মালিশ করে দেই। তারপর একটু আরাম লাগে। আমাকে এবার জিজ্ঞাসা করে এতো রাত হয়ে গেছে কেন ঘুমাই নি। আমি বললাম খেলতে খেলতে এত রাত হয়ে গেছে বুঝতে পারিনি। উনি বললেন সারাদিন এত পরিশ্রম করো একটু ঘুমাও। আমি এখন ভালো আছি। যদি আবার শরীর খারাপ লাগে তোমাকে বলবো। । । তারপর আমার সাথে ঘন্টা দেড়েক গল্প করার পর আবার শরীর খারাপ হতে শুরু করে আমি সাথে সাথে ছেলে মেয়ে কে ডেকে তুলি। আমার যৌথ পরিবার। তাদেরকে ডাকি। তারপর আমি আমার ছেলে মেয়ে দেওর দেওরপো সবাই মিলে গাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। গাড়িতে উনি হঠাৎ দেখি আমার কাঁধে মাথা রেখে শুয়ে পড়েছে। আমি ভাবলাম ঘুমিয়ে পড়েছে। যখন হাসপাতালে পৌছালাম দেখি ডাকছি সাড়া দিচ্ছে না। ভাবলাম অজ্ঞান হয়ে গেছে হয়তো। । । স্ট্রেচারে করে ভেতরে নিয়ে গেলাম। ডাঃ আমাকে বললেন আমি কে হই? আমি বললাম স্ত্রী। আমাকে বললো বাইরে গিয়ে বসুন। অনেকক্ষণ বসে আছি কেউ বাইরে আসছে না। হঠাৎ দেখি আমার জামাইবাবু এলেন, আমার হাত ধরে জানালো বাড়ি চলো। । আমি বললাম ওকে ফেলে রেখে একা কেমন করে যাবো। জামাইবাবু জানালো ওরা এখানে দেখবেন না। বাড়ি গিয়ে ডাঃ ডেকে দেখাবো। আমি সরল মনে বিশ্বাস করে বাড়ি এলাম। যখন বাড়ি এসে পৌছালাম দেখি লোকে লোকারণ্য। আমি এতো লোক কেন? আমি ওকে না নিয়ে চলে এলাম। জামাইবাবু জানালো পেছনের গাড়ি করে আসছে। । আমাকে সবাই ঘরে এনে বসায়। তারপর দেখি আমার স্বামীকে সবাই ধরাধরি করে এনে নিথর দেহটি শুইয়ে দিলো। সে চলে গেছে আমায় ফেলে না ফেরার দেশে। আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম সে চলে গেলো। কিছু বলে গেলো না। । । ভোর চারটের সময় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সেদিন ছিল " মকরক্রান্তি "।

Post a Comment

Previous Post Next Post