মনে পড়ে আজো , ভুলিতে পারিনা আজো সেই মানুষটিকে। হ্যা, যার কথা বলছি উনি হৃদয় নাথ। সবাই হৃদয় কাকু নামেই উনাকে চেনে। ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত ত্রিপুরার এক প্রত্যন্ত গ্রাম। গ্রামের নাম কোনার ঘাট। গ্রামের কাছেই ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমানা। সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশের রেল লাইন। ত্রিপুরায় তখনো রেল আসেনি বললেই চলে। আসাম থেকে কয়লার ইঞ্জিন যুক্ত এটা ট্রেন কালো ধোঁয়া উড়িয়ে ত্রিপুরা আসাম সীমান্ত শহর ধর্মনগরে আসে। এও আবার সপ্তাহে দুবার। সেই কারণেই ট্রেন দেখা খুব মজার বলেই মনে হতো অনেকের কাছে। তাই প্রতিদিন সীমান্তে দাঁড়িয়ে অনেক লোক ট্রেন দেখার আনন্দ উপভোগ করে। কোনার ঘাট গ্রামটি একটি কৃষিপ্রধান গ্রাম। গ্রামের নব্বুই ভাগ লোক কৃষি ও পশুপালনের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো গরু চুরি। বাংলাদেশী চুরের দল রাতের আঁধারে সিঁদ কেটে গরু নিয়ে পালিয়ে যায়। এই গরু চুরির অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে গ্রামের বহু লোক গ্রাম ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায়। এই গ্রামের একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি হৃদয় নাথ। অমায়িক লোক তিনি। সম্ভ্রান্ত পরিবার। জমি ছিল প্রায় এক দ্রোন মানে চল্লিশ কানি। গবাদি পশু ছিল অগনিত। গোলা ভরা ধান আর গোয়াল ভরা গরু। অভাব ছিল না কিছুই। এত সম্পদের মালিক হয়েও ছিল না অহঙ্কার। সারা বছর ধরে গরীব দুঃখীদের সাহায্য করতেন। পূজা পার্বণ এলে , বিশেষ করে দূর্গা পূজার সময়ে তিনি গ্রামের প্রতিটি দুস্থ পরিবারের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করতেন। তাঁর আতিথেয়তা তুলনাহীন। সবাই থাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখত। সাহস ও ছিল অসাধারণ। একবার চোর সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকতে চেষ্টা করছিল। হৃদয় কাকা চোরের উপস্থিতি বুঝতে পেরে রাম দা নিয়ে এম্বোস পেতে বসে থাকে। যেই মাত্র চুর সিঁধেল ভিতর মাথা ঢুকালো, হৃদয় কাকার রাম দায়ের আঘাতে চুরের শিরোচ্ছেদ করে দিল। বেগতিক দেখে অন্য চুরেরা পালিয়ে গেল। এই দৃশ্য দেখার জন্য গ্রাম তথা বিভিন্ন প্রান্তের লোকেরা বাড়িতে ভিড় জমালো। সেই দিন থেকে গ্রামের গরু চুরি বন্ধ হলো। সরকার হৃদয় কাকাকে তার সাহসীকতার জন্য পুরস্কৃত করলো। সেই হৃদয় কাকা আজ আর নেই। রয়েছে তাঁর ফেলে যাওয়া স্মৃতি।
Tags:
বাংলা গল্প