মধুপুর স্টেশনের ১নং প্লাটফর্মের ওভারব্রিজের তলায় জটলাটা দেখে এগিয়ে যায় পল্টু। আজকেও পকেটমার ধরা পড়ল? পল্টু স্টেশনের হকার। নিত্যযাত্রীদের প্রায় সকলেই ওকে চেনে, ভালোওবাসে।ওকে দেখতে পেয়ে অমলবাবু বলেন -- কী বিপত্তি দেখোতো পল্টু, বাচ্চাটা ওর মাকে খুঁজে পাচ্ছেনা।ওকে বসিয়ে রেখে নাকি বিস্কুট কিনতে গিয়েছিল। নিজের নাম ছাড়া আর কিছুই বলতে পারছেনা। এমন সময় ডাউনট্রেন আসার কথা ঘোষণা হতেই ভিড়টা কিছুটা পাতলা হয়েযায়। অমলবাবু বলেন --- তুমি একটু দেখো। ওর মা না ফিরলে ওকে রেলপুলিশের হাতে তুলে দিও। অমলবাবু ট্রেন ধরতে দৌড়ান।
পল্টু দেখে বছর তিনেকের বাচ্চাটা কেঁদেকেঁদে চোখমুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। কোলে তুলে নেয় পল্টু।বাইরে বেরিয়ে খাওয়ায়। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হওয়ার পরও যখন ওর মা ফেরেনা তখন পল্টু বলে --- চল্ আজ থেকে আমার ঠিকানাটাই তোর ঠিকানা।আজ থেকে তুই দীপ, শিখার দাদা।
দীপ আর শিখা একসঙ্গে বড় হতে থাকে। ইতিমধ্যে স্টেশনের বাবুদের ধরে স্টেশনেই একটি দোকান করার বরাত পায় পল্টু।
দীপ ঠিককরে গ্রাজুয়েশনটা শেষ করে দোকানটা সামলাবে। কিছুদিন থেকে বাবার শরীরটা ভালো যাচ্ছেনা।
শিখার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর দোকানটা পুরোপুরি দীপই সামলায়।পল্টু মাঝেমাঝে এসে বসে।
সেদিনও সকালে ভিড় ভালোই ছিল।তার মাঝেই দেখল একটি ছেলে দোকানের সামনের বেঞ্চটাতে একজন বয়স্কা ভদ্রমহিলাকে বসিয়ে রেখে কোথায় যেন গেল। দুপুরে দেখল ভদ্রমহিলা একইরকমভাবে বসেআছেন। এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল --- আপনি কোথায় যাবেন? তখন খেয়াল করেনি, এখন দেখল ভদ্রমহিলা বেশ অসুস্থ। আপনার সাথে কেউ নেই?
কাঁদতে-কাঁদতে ভদ্রমহিলা বললেন---- ছেলে ছিল, খাবার কিনতে সেই যে গেল......। নিজের খাবারটা দিয়ে দীপ বলল--- এটা খান। উনি না এলে আমি আপনাকে পৌঁছে দেবো।
সন্ধ্যার সময় দীপ বলে --- ঠিকানাটা বলুন,আমি পৌঁছে দিচ্ছি।
কাঁদতে-কাঁদতে ভদ্রমহিলা বলেন --
ওর নতুনবাড়ির ঠিকানাটাতো আমি জানিনা। ও আর ফিরবেনা,না?
নিজের কথা মনে পড়ে দীপের।
--- আপনি আমার বাড়িতে যাবেন। আর কাঁদবেন না।
মনেমনে যখন ছেলেটাকে দোষারোপ করছে দীপ, তখনই ভদ্রমহিলা বললেন---- আমি আমার নিজের কৃতকর্মের ফল পাচ্ছি। আমিও নিজের সুখের জন্য আমার বছরতিনেকের ছেলেকে বিস্কুট কিনতে যাওয়ার নামে স্টেশনে ছেড়ে রেখে চলে গিয়েছিলাম।
চমকে উঠে দীপ।