অভাগীরা মা বাবা সহ তিনজনে দারিদ্র্যতার মধ্যে ও বেশ ভালোভাবে দিন গুজরান করছেন। অভাগীর বয়স সাত আট হবে। তারা থাকেন শহর সংলগ্ন বস্তি এলাকার এক ছোট্ট কুটিরে। প্রতি বছর বর্ষা এলে এদের কষ্টের সীমা থাকে না। বর্ষায় বন্যার জল ঘরের চাল ডুবে যায়। তাদের আশ্রয় নিতে হয় আশ্রয় কেন্দ্রে। বছরে দুই তিনবার ওদের এই কষ্ট সহ্য করতে হয়। অন্য সময় মোটামুটি ভালোভাবেই থাকা যায়। এদিকে অভাগীর বাবা একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করে সামান্য বেতন পান। বাড়ি থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে অনিল মজুমদারের ফ্লাওয়ার মিলে কাজ করেন। মাসে মাসে যা মায়না মিলে তা দিয়ে কোন ক্রমে বাপ মা মেয়ে দুবেলা দুমুঠো খেয়ে দিনাতিপাত করেন। অবশ্য মা হাতের (সেলাই কাজ) জানেন। কিন্তু কোন খদ্দের জোটে না। অভাগীকে গায়ের একটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়েছে। সে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস নিদারুন। বর্ষাকালের সন্ধ্যাকালে অভাগীর বাবা সাইকেলে চেপে মিল থেকে ফিরছে। হঠাৎ দৈত্যাকার একটা ট্রাক অভাগীর বাবাকে চাপা দিয়ে দ্রুত গতিতে চলে যায়। খবর আসে বাড়িতে। কান্নায় ভেঙে পড়ে মা মেয়ে পাড়া পড়শিরা। কিন্তু বিধির লিখন কে খন্ডাতে পারে ? শুরু হয়ে গেল অভাগীদের কষ্টের দিন। অন্তহীন দুঃখ তাদের জীবনকে আঁধারে নিমজ্জিত করে। এবার সংসার। চলার আর কোন উপায় নেই। এদিকে উপায় না পেয়ে অভাগীর মা অন্যের বাড়িতে কাজ নিল। কিন্তু অভাগীর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেল। এভাবে কষ্টের সংসার চলছে একই গতিতে। দেখতে দেখতে অভাগীর বয়স আঠারো পেড়িয়ে গেল। পাড়ার সমালোচক মহিলারা সমালোচনা শুরু করে দিল। মেয়েকে বিয়ে দাও, নতুবা পাড়া ছাড়তে হবে। বড়ো বেকায়দায় পড়লেন অভাগীর মা। অভাগীকে দেখতে এতটা খারাপ লাগেনা। মোটামুটি সুন্দরই। অনেক পাত্র আসছে কিন্তু কেউ পণ ছাড়া বিয়ে করতে রাজি হয় না। অবশেষে দুরবর্তী এক স্থান থেকে বিয়ের প্রস্তাব এলো। পাত্র বিপত্নিক। তাকে পণ দিতে হবে না। তাই অভাগীর মা রাজী হয়ে গেল। পাড়ার সজ্জন ব্যক্তিদের কাছ থেকে সাহায্য সহায়তা নিয়ে বিয়ের দিন ধার্য হল। অবশেষে বিয়ের দিন উপস্থিত হল। পাড়ার লোকেদের সহায়তায় বিয়ে বাড়ি সাজানো হল। রান্নাবান্না চলছে। সানাই বাজছে। রাত নটায় বরের গাড়ি এলো। সাথে এলো জনা পঞ্চাশেক বরযাত্রী। বর্ণমালা সাজিয়ে বরকে বরণ করতে গেল। সাথে রয়েছে পাড়ার মা বোন ও ছেলে মেয়েরা। হঠাৎ একজন চেঁচিয়ে বলল বর বুড়ো। বরের বয়স ষাট হবে। কথাটা শুনে অভাগীর মার হাত থেকে বর্ণমালা পড়ে গেল। সাথে সাথে তিনিই পড়ে গেলেন মাথা গুড়িয়ে। চারিদিকে শুরু হল হৈ হট্টগোল। এই অবসরে বরের গাড়ি পালিয়ে গেল বরকে নিয়ে। বাড়িতে কান্নাকাটি পড়ে গেল অভাগীর নিকট আত্মীয়দের মধ্যে। এবার কি হবে! মেয়ে যে লগ্নভ্রষ্টা হবে। মহা ফাঁপরে পড়ল সবাই। একজন বলল , উপায় একটা আছে। কুঞ্জ সাজাতে আশা রাইমোহন অভাগীর জন্য উপযুক্ত পাত্র। সবাই মিলে তাকে ধরল। বেচারা রাইমোহন কোন মতেই রাজি হল না। সে সুযোগ বুঝে এক দৌঁড়ে চম্পট দিল বাড়ি। কিন্তু অভাগীর শুভাকাঙ্ক্ষীরা ছেড়ে দেবার পাত্র নয়। তারা গেল রাইমোহনদের বাড়িতে। তার মাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে কোন প্রকারে রাজি করানো হল। বর সাজল। শাঁখা বাজলো ,সানাই বাজলো। রাইমোহনের সঙ্গে অভাগীর বিয়ে হল। একেই বলে নিয়তি। বিধির বিধান কভু না করা যায় খন্ডন।
Tags:
বাংলা গল্প

