সেদিন ছিল হোলি :: সমর আচার্য্য


রমেনের বউটা খুব সুন্দরী। যেমন দুধে আলতায় গায়ের রঙ, তেমনি গড়ন । মাথায় একরাশ কালো মেঘের মত চুল । রাস্তা ঘাটে যেখানেই যায় আট থেকে আশি কোন পুরুষের লোলুপ দৃষ্টির থেকে সে রেহাই পায় না । রমেন খুব সাদাসিধে। তবু তার মনের মধ্যে কেমন একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়,খুব জ্বলুনি ধরে। বিয়ের পর থেকে যেন ওর বন্ধুবান্ধব সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। আগে যারা দেখা হলে কথাটি বলত না আজ তারা ওর বাড়ি ছাড়তেই চায় না ।


সেদিন রমেন বৌকে বলে, তোমার দিকে যে ভাবে লোকে তাকায় তাতে আমার একদম ভালো লাগে না।   মনে হয় যেন এখুনি গিলে খেয়ে নেবে।


রমেনের বউ খিলখিল করে হেসে ওঠে। বলে, তা আমি কি করব বলো তো, আমি তো আর ওদের তাকাতে বলি না।

রমেনের ঘনিষ্ট বন্ধু পরেশ, রমেনের এই মানসিক যন্ত্রনা দেখে  অনেক বুঝায় তাকে।  বলে, এমন সন্দেহ বাতিক হওয়া একদম ঠিক না। কিন্তু তাকে ও রমেন আজকাল বেশ সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেছে।

বিয়ের পরের প্রথম দোলের দিনে রমেনের বন্ধুরা হই হই করে এসে জোর করে রমেনের বৌয়ের গায়ে, গালে, মুখে রঙ লাগিয়ে আনন্দে হাসতে লাগল।  রমেন আর নিজেকে ঠিক রাখতে না পেরে ওদেরকে অপমান করে বাড়ি থেকে বের করে দিল । তারপর বৌকে ঘরে টেনে নিয়ে গিয়ে বেদম মারধর করে বাড়ি থেকে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে যায় ।


 অন্য সবাই তখন হোলি খেলায় ব্যস্ত। স্বামীর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে তার হাতে মার খেয়েও এতটুকু কাঁদেনি রমলা।

শুধু ভাবছিল স্বামীর এই ভ্রান্ত ধারণা কি করে ভাঙানো যায়।

রমেন ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে পরেই রমলা ও বেরিয়ে এসে শাশুড়ি কে বলে। শাশুড়ি উদভ্রান্তের মত কান্নাকাটি করতে করতে পাড়া মাথায় করে তুলল।

সবাই রমেনকে খুঁজতে শুরু করল। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছিল না।

কিছুক্ষণ পরে খবর পাওয়া গেল, রমেন মাঠের মধ্যে মরে পড়ে আছে । পাশে কীটনাশক বিষের শিশি পড়ে আছে।


সেই হোলির দিনটা এখনো ভোলেনি রমলা। রমেনের ছেলের মা হয়েছে সে। তার রূপ আরও বৃদ্ধি হয়েছে। যেন ভাদরের ভরা নদী। আয়নার সামনে দাঁড়ালে তার নিজের রূপের প্রতি নিজেরই ঘেন্না ধরে যায়। এরই মাঝে নিজের পরিবার, বাইরের লোক, রমেনের কিছু বন্ধুর কাছ থেকে কত রকম ইশারা, প্রলোভন, প্রস্তাব পেয়েছে রমলা।


ছেলেকে বুকের মধ্যে চেপে ধরে অঝোরে কাঁদে আর ভাবে রমেনের কথা। কী ভালোই না বাসতো তাকে। নীরব কান্নায় বুক ভাসিয়ে মনে মনেই বলে, তুমি কেন আমায় অবিশ্বাস করলে রমেন ?

এমন করে আমায় অবিশ্বাস করে, সন্দেহ করে চলে গেলে? আমি যে শুধু তোমার ই ছিলাম, আছি, থাকবো। তুমি যে  তোমার বংশধর রেখে গিয়েছিলে আমার গর্ভে। ওর মাঝেই আমি তোমাকে খুঁজে পায়।

বাইরে তখন হোলি খেলা চলছে পুরোদমে। হোলির রঙ আর আবিরে বসন্তের আকাশটা যেন মোহময়ী হয়ে উঠেছে। শুধু রমলার কাছে আজকের দিনটি বড় বিবর্ণ, ম্লান, অভিশপ্ত লাগে।

Post a Comment

Previous Post Next Post