প্রহেলিকা :: সাগরনীল বসু রায়


সদাব্যস্ত বড়রাস্তার ধারে অযত্নে ফেলে রাখা শৃঙ্খলিত এক প্রস্তরমূর্তিকে একবার ব্যঙ্গের সুরে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, "হ্যাঁচকা টানে উপড়ে ফেলতে পারছ না এই শেকল? তোমার না পাথরের তৈরী অবয়ব?"

উদাসভাবে সে উত্তর দিয়েছিল, "চাইলেই পারতাম! এখনও হয়ত পারি, কিন্তু করি না। আমার মনে হয় যারা আমায় অক্লান্ত পরিশ্রমে পাথর কুঁদে বানিয়ে এই রাজপথের ধারে বসিয়েছিল, তারা হয়ত চেয়েছিল আমাকে পরাধীন অবস্থায় দেখিয়ে স্বাধীনতার যথার্থ মূল্যটা তোমাদের বোঝাতে!" স্বভাবতই, এই কথাগুলোকে সেদিন মনে হয়েছিল নেহাতই তার অক্ষমতার অজুহাত।

বছরখানেকের মধ্যেই অতিমারীর তান্ডবে, আর দুনিয়াজোড়া লকডাউনের রক্তচক্ষুতে যখন প্রত্যেকেই ভয়ে, আতঙ্কে সপরিবার গৃহবন্দী, তখন মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছিলাম তার সেই কথাগুলোর সারসত্য। পলকে গভীর অনুশোচনায় সঙ্কুচিত হয়ে গিয়েছিল মন।

অবশেষে লকডাউনের পালা সাঙ্গ হলে একদিন অনেক কষ্টে সঙ্কোচ কাটিয়ে গিয়েছিলাম তার কাছে। ইচ্ছা ছিল মাথা নীচু করে ক্ষমা চাওয়ার। কিন্তু অনেক খুঁজেও পাই নি তাকে সেখানে আর!

হতাশ হয়ে ফিরে আসার সময় দেখেছিলাম, এককোণে শুধু ঘাসের মধ্যে অযত্নে উল্টে পড়ে আছে মরচেধরা শেকলে বাঁধা তার ধূলিধুসরিত পাথরের হাতখানি..মুঠোটা খোলা..

পাষাণাত্মা আজ বোধহয় স্বাধীন..মহাকালের ব্যপ্তির মাঝে সেও অজানার দুনিয়ায় মিলিয়ে গিয়েছে!

নয়ত সরকারী সৌন্দর্যায়নের বলি হয়েছে কি পুরোনো মূর্তিটি? অনেক ভেবেও এর উত্তর পাই নি..ফিরেই এসেছিলাম অগত্যা!

..ঘুম ভেঙে উঠে বুঝেছিলাম স্বপ্ন দেখছিলাম..কিন্তু কি জীবন্ত আর রঙীন..একমুহূর্তের মায়া..না কি মায়াভরা একটি মুহূর্ত??



Post a Comment

Previous Post Next Post