অভিশপ্ত পিয়ানো :: সঙ্গীতা দে


 
বাগানটা কি সুন্দর দেখতে কিন্তু মাঝখানের জায়গাটা কেমন যেন ফাঁকা, কোন ফুল গাছ নেই। ওইখানে একটা পছন্দের গোলাপের চারা লাগাব ভাবছি।   
এমন সময় কেলি পেছনে থেকে ডেকে উঠল “মা দেখ কি সুন্দর এই পিয়ানোটা। আমি একটু বাজাব?”
উফফ এই হল কেলিকে নিয়ে সমস্যা গিটার বাজাতে কি ভালোবাসে, কিন্তু না সবসময় সব আবদার মানতে হবে এরকম কোন কথা নেই, তাই একটু গম্ভীর গলায় বলে উঠল “না কেলি তোমাকে একদিন শিখিয়েছিনা, না বলে অন্য কারোর জিনিসপত্রে হাত দিতে নেই।” 
কেলি তো শুনবার পাত্রী নয় তার জবাব সঙ্গে সঙ্গে তৈরি থাকে তাই পট করে বলে দিল “কিন্তু এখানে তো কেউ নেই কাকে জিজ্ঞাসা করব”?
অ্যাথেনা উফফ বলছিনা “দাড়াও এই বাড়িটাতে তো আমরা নতুন এসেছি আগে সবটা একটু ভালো করে দেখেনি তারপর হাত দিও কেমন? এখন যাও বাগানের ওই দিকটা দেখে এস,” 
শোনা মাত্রই বাইরের লনে চলে গেল তার একমাত্র পুতুলকে বেলাকে নিয়ে খেলতে। কেলির একমাত্র সুখ দুঃখের সঙ্গী, তার পুতুল, আর সেই পুতুলের নাম ছিল বেলা। 
এদিকে জন কখন অ্যাথেনার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে সে খেয়াল করেনি হঠাৎ পেছন ঘুরতেই চমকে উঠল। এতদিন জনের আসার অনুভুতি ভালো করে বুঝতে পারত, আজ কি হয়েছে কে জানে এরকপম চমকে উঠল কেন, কোনরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে সে বলে উঠল “জন, আমরা কি আজ থেকেই এখানে থাকতে শুরু করব?”
জন পরম আদরে জড়িয়ে ধরে উত্তর দিল “ হ্যাঁ, এখানে আজ থেকেই থাকব। তোমার পছন্দ হয়েছে বড়িটা?”  
অ্যাথেনা নিজেকে জনের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল “আর আমাদের জিনিসপত্রগুলো।” 

জন আবার অ্যাথেনার কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল “আমি ফুলফার্নিস বাড়িটা কিনেছিলাম তাই এখানকার কিছু জিনিস থাকবে।” 
অ্যাথেনার ভেতরে একটা অস্বস্তি হচ্ছিল তাই একটু সরে গিয়ে বলল “ও আচ্ছা। আসলে কেলি পিয়ানোতে হাত দিচ্ছিল, বায়না করছিল ওটাকে বাজানোর জন্য। আমরা কি তাহলে ওটা নিতে পারব?”
এই সময়ে ফোনটা বেজে উঠতেই জন তার পকেটে হাত দিতে দিতে বলল “হ্যাঁ হ্যাঁ এই বাড়িতে যা যা আছে সব আমাদের, ওদের যা নেওয়ার নিয়ে গেছে।” 
অ্যাথেনা বাড়িতে আসার পর থেকে কেমন একটা অস্বস্তি অনুভব করতে থাকল, কেউ যেন তাকে সবসময় লক্ষ্য করছে, কিন্তু বাড়ির ভেতরটা দেখে তো মনে বিশেষ কিছুই নিয়ে যায়নি। 
ইতিমধ্যেই কেলি এসে মায়ের পাশে দাঁড়ায় নতুন পিয়ানোটা বাজাতে পারবে শুনে সে এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে পিয়ানোর কাছে গিয়ে তার গায়ে কিছুখন হাত বোলায়। পিয়ানোর ঢাকাটা সরাতেই কোথা থেকে একটা প্রজাপতি এসে ওর ওপরে বসে। এটা দেখে বেশ ভালো লাগে কেলির।
বেশ কয়েকদিন পর থেকে কেলি দেখতে শুরু করে কেলি যখনি পিয়ানোটা বাজাতে একটা প্রজাপতি উড়ে এসে বসে। অবশ্য এই ব্যাপারটা অ্যাথেনার নজর এড়াইনি। এদিকে কেলি পিয়ানো বাজাতে না জানায় টুং টাং করতে থাকে। এরপরে তার হাতে আসে একটা ডায়ারি, সাথে একটা টুপি, সেখানে সে একটা গানের কিছু নোটেশন পায় কিন্তু সেটা হাতে পেলেও তার বিশেষ কিছু লাভ হয়না। কারন সে তো বাজাতেই জানেনা। 
কেলি বার বার তার মায়ের কানের কাছে একটা কথা ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকে “মা আমাকে একটু শিখিয়ে দাও না আমি ওটা বাজাতে পারছিনা।” 
অ্যাথেনা বার বার এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার জন্য বলে “এখন পড়াশোনা কর। পরে দেখব।”  এই সেই বলে সে কেলি বাঁধা দিতে থাকে, কারন অনেক টাকা খরচ করে এই বাড়িটা কেনার জনের হাত প্রায় ফাঁকা বললেই চলে, তাই এখন খুব মেপে চলতে হবে। এসব চিন্তা মাথায় ঘুরতে ঘুরতে চোখ পরে লনের ওই ফাঁকা জায়গাটাতে।  কিছুতেই বাগানেই ওই জায়গা থেকে গোলাপের চারাটা থেকে ফুল হচ্ছেনা, বাকি সব জায়গায় খুব সুন্দর ফুল ফুটেছে।
এদিকে কেলির মায়ের কথা শুনে মন খারাপ হয়ে যায়, তাই বেলাকে নিয়ে বিড়বিড় করতে করতে বেলাকে বলতে থাকে। “মামমাম তো শুনছেইনা আমার কথা, আমি যদি একটু বাজাতে পারতাম তাহলে নিজে নিজেই বাজাতাম।” লনে খেলতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় কেলি তার হাত থেকে পুতুলটি লনের ধারে ঝোপের মধ্যে পড়ে যায়। ঝোপের মাঝে বেলাকে খুঁজতে গিয়ে কেলি একটা একটা ছোট বাক্স হাতে পায় আর পায় একটা বাউলার টুপি।

কেলি কোনরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে হাতে করে জিনিসটা তুলে নেয় “এটা কি? দেখে তো একটা বাক্স মনে হচ্ছে। এর ভেতরে কি আছে? দেখতে হবে চল বেলা ওই বেঞ্চে বসে দেখি। বাক্সটার খুলতে দুট আংটার মত আংটি দেখতে পায়। কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করার পর সেটাকে পিয়ানোর ওপরে রেখে চলে যায়।” 
এরপরে রাতে খাওয়া দাওয়া করে শুতে যাবার আগে পিয়ানোর কাছে এসে বসলে। কিছুখন পরেই অ্যাথেনা এসে দেখে কেলি মন খারাপ করে বসে আছে। 
অ্যাথেনা দেখে সারাদিনের বেশিরভাগ সময় কেলি পিয়ানোর কাছে কাটায় তাই এসে মেয়েকে জিজ্ঞাসা করে “কি করছ তুমি এখানে? দেখছনা বাইরে বরফ পড়ছে। যাও গিয়ে শুয়ে পড়।” 
কেলি আর থাকতে না পেরে কেঁদে ফেলে, মাকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে “মা এবারে বড়দিনের পার্টিতে আমাকে স্কুলে পারফর্ম করতে হবে কিন্তু আমি কি করব? আমি তো পিয়ানো বাজাতে পারিনা?” 
অ্যাথেনা মেয়েকে বোঝাবার জন্য বলে “অন্য কিছু কর। নাচ, রিসাইটেশন, অ্যাক্টিং, পরের বছরে পিয়ানো শিখে পারফর্ম করবে কেমন।” কেলি মায়ের কথা শুনে কিছু না বলে একটু পিয়ানোটা নাড়াচাড়া করে শুতে চলে যায়। 
অ্যাথেনা মনে মনে বিড়বিড় করতে থাকে দিন দিন পিয়ানো শেখার ভুত তার মাথায় চেপে বসেছে কিছুতেই এড়ান যাচ্ছেনা, এদিকে এত খরচ কি করে সামলাবে কে জানে। সামনে বড়দিনের পার্টির তৈয়ারি করতে হবে। কত খরচ ভাবলেই মাথাটা খারাপ হয়ে যায়। ভেবেছিল গোলাপের ফুল গুলো ফুটলেই এখান থেকে ফুলের ডেকোরেশনটা করে নেবে। কিন্তু সেটাও হবে না মনে হচ্ছে।  
পরের দিন স্কুলে মন খারাপ নিয়ে যায় কেলি, ক্লাসে পড়া চললেও মন পড়ে থাকে পিয়ানোর দিকে, কি একটা অমোঘ আকর্ষণ কিছুতেই তার মনকে আঁটকে রাখতে পারেনা। কিন্তু কি হবে সে তো বাজাতেই পারেনা। 
বিকালে বাড়ি ফিরে পিয়ানোর কাছে বসে আছে হঠাৎ বাক্সটার দিকে চোখ পড়তেই কেলি বাক্সটা নিয়ে পিয়ানোর কাছে এসে খুলে সেই আংটিগুলি পরে ফেলল। কিছু একটা ঘটে গেল মুহূর্তের মধ্যে। আংটিটা পড়ার পড় যে কেলি টুং টাং বাজাতে পারত সে এখন ছোট ছোট টিউন বাজাতে শুরু করল। এর পড় থেকে পিয়ানোরটার উপরে যেন টান আরও বেড়ে গেল। কিন্তু এই আংটি গুলো খুলে দিলে সে আর বাজাতে পারত না, অথচ পড়ে থাকা কালীন সে যেন অন্য জগতে বিচরন করত। মনে হত কেই যেন তার হয়ে বা তার হাত দিয়ে পিয়ানো বাজাছে। এরপরে তার দিন দিন আকর্ষণ বাড়তে থাকল। মাঝে মাঝে রাতেই কেলি বাজাতে শুরু করল ঘুমের ঘোরে অ্যাথেনা এসে দেখত কেলি পিয়ানো বাজাচ্ছে এমন একটা ঘোরে বাজাচ্ছে যেন তার উপরে কেউ ভর করেছে। কি সুন্দর বাজাত যে তাকে বাজান বন্ধ করার কথা চাইলেও বলতে পারতনা। এরপরে সে স্কুলের পড়াশোনা আর খাওয়া দাওয়া ছাড়া বাকি সময়টা পিয়ানো বাজানোতে কাটিয়ে দিত। নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে নিয়েছিল। এরপরে বড়দিনের ফাংশনে খুব ভালো ভাবে পারফর্ম করতে পারায় স্কুলেও ভালো নাম হয়। ইতি মধ্যে তার একজন শিক্ষক জুটে যায় নাম থমাস যে কেলিকে পিয়ান শেখাতে চাই কোন রকমের পারিশ্রমিক ছাড়াই। 
থমাস একদিন কেলির স্কুল থেকে তার বাড়ির নাম্বার জোগার করে ফোন করে। ফোনটা রিং হয়ে চলেছে, একসময় ফোনটা রিসিভ হয়। ফোনের ওপারে “আপনি কি মিসেস অ্যাথেনা বলছেন? আমি কি কেলির মায়ের সঙ্গে কথা বলছি?”
অ্যাথেনা একটু ঘাবড়ে যায় চিন্তা হতে শুরু করে কোনরকমে উত্তর দেয় “হ্যাঁ বলছি, কেলি কি কিছু করেছে? কেলির কি কিছু হয়েছে?” 
থমাস মৃদু হেসে উত্তর দেয় “না না আসলে বড়দিনের অনুষ্ঠানে এত সুন্দর পারফর্ম দেখার পর আমি ওকে একটু পিয়ানো শেখাতে চাই। যদি আপনার আপত্তি না থাকে তো, চিন্তা করবেন এর জন্য কোন টাকা দিতে হবে না।” 
অ্যাথেনা এবার একটু নিশ্চিন্ত হয়ে উত্তর দিল “না না ঠিক আছে।” 
এরপরে অ্যাথেনা ভাবতে থাকে অনেক হয়েছে আর নয় আজ জন বাড়িতে আসলে, আজকে ওর সঙ্গে কথা বলতেই হবে। এদিকে জন বাড়িতে আসলে অ্যাথেনা বলে “জন আমার খুব চিন্তা হচ্ছে, তুমি কেলির অবস্থাটা দেখেছ। দিন দিন কেমন পাগলের মত হয়ে যাচ্ছে মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে যত নষ্টের গোঁড়া ওই পিয়ানোটাকেই ভেঙ্গে দিই।” 
জন অ্যাথেনাকে কাছে টেনে নিয়ে বলতে থাকে “অ্যাথেনা কি করছ? কেন পিয়ানোটাকে এই ভাবে নষ্ট করতে যাচ্ছ। ওটার কি দোষ। আর তাছাড়া কেলি তো পিয়ানোটা খারাপ বাজায় না, তাহলে কেন চিন্তা করছ?” 
অ্যাথেনা জনের উত্তরে বলতে থাকে “তুমি বুঝতে পারছ না জন,  এটার জন্যই তোমার মেয়ের আজ এই অবস্থা। 
জন সারাদিনের কাজের চাপে ক্লান্ত তার এসব শুনতে ভালো লাগে না তাই বলে ওঠে “তোমার যতসব বাজে বকা।” 
সারাদিনের ক্লান্তিতে চোখে ঘুম লেগেছে, ঠিক এসময় ডোরবেলটা বেজে উঠল। এতরাতে কে আবার ডোরবেল বাজায়। কেউ তো নেয়। দরজাটা বন্ধ করতে যাবে পায়ের কাছে একটা খাম এসে ঠিকল। এতরাতে পোস্টম্যান আসে নাকি। না আজ তো রবিবার। দরজাটা বন্ধ করে খামটা খুলে দেখে যে একটা ম্যাপল পাতা আর সেই পাতার উপরে লাল রঙ দিয়ে কিছু লেখা। “ যদি নিজের মেয়েকে বাঁচাতে চাও তাহলে পিয়ানোটাকে ভেঙ্গে ফেলোনা” এটা পড়ার পড় হাতে লাল রঙ কিছুটা লেগে যায় আলোয় গিয়ে ভালো করে দেখতে গেলে এটা তো টাটকা রক্ত। 
অ্যাথেনা সেদিন রাতে চিঠি পেয়ে আর এক মুহূর্ত নষ্ট না করে বাড়ির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করে। ঠিকানাটা খুজে পেতে খুব একটা বিশেষ কষ্ট করতে হয়নি অ্যাথেনার, কোন রকমে কেলিকে পিয়ানোর স্কুলে পাঠিয়ে সেদিন ছুটে গিয়েছিল বাড়ির মালিকের কাছে। তারপরে বাড়ির মালকিন অ্যাঞ্জেলিনার কাছে জানতে চেয়েছিল পিয়ানোর ব্যাপারে। 
অ্যাঞ্জেলিনা কোনরকম হেঁয়ালি নাকরেই সাফ ভাবে বলেছিল অ্যাথেনাকে “আপনি আমার কাছে কি জানতে চাইছেন? সেটা একটু স্পষ্ট করে বলুন।”
অ্যাথেনা নিজের সন্তানের ভালোর জন্য বলেছিল “দেখুন আপনি ওই বাড়ির মালিক আমাকে বলুন ওই পিয়ানোতে কি আছে?”
অ্যাঞ্জেলিনা খানিকটা অবাক হয়ে উত্তর দিল “আপনার মাথা ঠিক আছে তো, এসব কি বলছেন? ওটাতে আবার কি থাকবে?”
অ্যাথেনা পাগলের মত করতে থাকে আর বলে “দেখুন এটা আমার মেয়ের জীবনের ব্যাপার। প্লিজ ওকে বাঁচিয়ে নিন। ওটাই আমার মেয়ের জীবনকে নষ্ট করে দেবে বলে মনে হচ্ছে।” 
অ্যাঞ্জেলিনা অ্যাথেনার কথার মাথা মুন্ডু কিছু বুঝতে না পেরে বলে ওঠে “কি যা তা বলছেন? পিয়ানো কারোর মৃত্যুর কারন হয় নাকি। আচ্ছা ঠিক আছে আপনি সবটা আমাকে বলুন, তার পর আমি দেখছি।” 
অ্যাথেনা তার এতদিনের জমে থাকা ভয় এক নাগাড়ে সব কিছু বলে যেন খানিক হালকা বোধ করল। কিছুক্ষণ ভেবে অ্যাঞ্জেলিনা বলে আমার সঙ্গে আসুন। 
অ্যাথেনা কোন কিছুনা ভেবেই অ্যাঞ্জেলিনার পেছন পেছন এক জায়গায় যায়। 
অ্যাথেনা অ্যাঞ্জেলিনার পেছনে পেছনে যেতে যেতে জিজ্ঞাসা করে “আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে এলেন?
অ্যাঞ্জেলিনা শুধু একটা কথায় বলে “এই জায়গায় না নিয়ে এলে আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর গুলো দিতে পারতাম না।”
অ্যাথেনা প্রশ্ন করে “কেন?”
অ্যাঞ্জেলিনা বেশি কিছুনা বলে এটুকু শুধু বলে “কেন এখানে আমাদের কথা কেউ শুনতে পাবেনা। এবারে আমি যা যা বলব টা আপনি মন দিয়ে শুনুন। তার আগে আমাকে দেখান আপনি যেটা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন।” 
অ্যাথেনা তার ব্যাগ থেকে একটা খাম বার করে বলে “ আমি ওই চিঠিটা আমার সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি। কি ব্যাপার আমি যখন চিঠিটা পেয়েছিলাম তখন এটা টাটকা রক্তে লেখা ছিল এখন সেটা কালো কালিতে লেখা মনে হচ্ছে।” 
অ্যাঞ্জেলিনা খামটা দেখার জন্য বলে “কই দেখি? হুম বুঝতে পেরেছি। আপনার মেয়ের জীবনে গভীর সংকটের মুখে বলতে পারেন। আপনার বাড়িতে কোন অতৃপ্ত আত্মা ভর করেছে। আসলে আপনি এখন চার্চের মধ্যে আছেন আর এখানে কোন অতৃপ্ত আত্মার আসতে পারেনা।”  
অ্যাথেনা নিজের মেয়েকে বাঁচাবার জন্য বলে “প্লিজ আমাকে বলুন কি করে বাঁচাব আমার মেয়েকে।” 
একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে অ্যাঞ্জেলিনা বলে “এখান থেকে বাঁচার উপায় নেই। আমার একমাত্র ছেলে পল ছোট থেকেই পিয়ানো বাজাবার খুব শখ ওর তাই ওকে পিয়ানো কিনে দিয়েছিলাম। পিয়ানোটা ও খুব ভাল বাজাত কিন্তু কাল হল। ওর এই শখটাই ওর একজন বন্ধু থমাস সে ও তার সঙ্গে ভালো বাজাত পিয়ানোটা, কিন্তু পল ওর থেকেই ভালো বাজাতে শুরু করাতে থমাস ওর সঙ্গে হিংসা শুরু করে তারপরে হটাৎ একদিন পিয়ানো ক্লাসে গিয়ে আর ফিরে আসে না। আমার সন্দেহ হয় ওই থমাসই জানে আমার পল কোথায়?” 
 এরপরে পুলিশকেস করা হলেও তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। 
অ্যাঁথেনা নামটা শুনে চমকে ওঠে, আর বলে “কি নাম বললেন।” 

অ্যাঁঞ্জেলিনা বলে “থমাস। আমার সন্দেহ আছে ওর ওপরে। কিন্তু কোন প্রমান পাইনি।” 
অ্যাথেনা নিজে থেকেই বলে ওঠে “বর্তমানে ইনি কেলিকে পিয়ানো শেখান।”
ঠিক এই সময় ফোনটা বেজে উঠতেই, অ্যাথেনা ব্যাগ থেকে ফোনটা বার করে, দেখে জন ফোন করেছে। কি ব্যাপার ওর তো বাড়িতে থাকার কথা না, বাড়ির ল্যান্ডলাইন থেকে ফোন এসেছে। 
অ্যাথেনা তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করে বলে “কি হয়েছে তুমি এই সময়ে কেন ফোন করেছ?”
জন কোনকিছু না শুনে বলে “তুমি কোথায় তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এস। কেলির স্যার থমাস আর কেলি………।” বলতে বলতেই ফোনটা কেটে যায়।  
অ্যাথেনা বার বার জিজ্ঞাসা করতে থাকে “কেলির কি হয়েছে। কেলি এখন বাড়িতে কি করে ওকে তো আমি পিয়ানো স্কুলে দিয়ে এসেছিলাম।”
অ্যাঞ্জেলিনা অ্যাথেনার মুখে চিন্তার ভাঁজ দেখে জিজ্ঞাসা করে “কি হয়েছে? এনিথিং সিরিয়াস।”
অ্যাথেনা কিছু বুঝতে না পেরে বলে “ঠিক বুঝতে পারছিনা। আপনি কি আমার সঙ্গে যাবেন আমাদের বাড়িতে?”
তারা দুজনে তাড়াতাড়ি করে বাড়িতে পৌছায়। জনকে দেখে জিজ্ঞাসা করে অ্যাথেনা- কেলি কোথায়?
জন হাতের ইশারায় ওকে দেখায়, যেটা দেখে সবাই চমকে ওঠে। কেলি তার হাতটা শুন্যে ধরে আছে আর থমাসের দেহটা শুন্যে ঝুলছে। 
জন বলতে থাকে “আমি আসার পরে কেলি তার টিচার থমাসকে নিয়ে বাড়িতে আসে। পিয়ানোটা দেখানর জন্য এরপরে কেলি বাজাতে থাকে তারপরে থমাস পিয়ানোতে হাত দেওয়ার পড় কেলি কেমন যেন মুহূর্তের মধ্যে বদলে আমি খুব ভয় পেয়ে তোমাকে ফোন করি।”   
কেলিকে ডাকতে থাকলে কেলির গলায় যেন পলের গলা পাওয়া যায়। কেলি অ্যাঞ্জেলিনার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করে। 
কেলি ( পলের গলায়) তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে “জানো মা সেদিন আমি পিয়ানো ক্লাস থেকে বাড়ি ফেরার পথে আমার ড্রিঙ্কসে বিষ মিশিয়ে দিয়েছিল, এই থমাস, তারপরে যখন কোন রকমে বাড়িতে চলে আসি প্রচন্ড শরীর খারাপ নিয়ে। কিন্তু বাগান দিয়ে যাবার সময় থমাস আমাকে বাগানের পড়ে থাকা কোদাল দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে তারপরে আমার দেহটা বাগানের ওই ঝোপের পাশে পুতে দেয়।”     
 অ্যাথেনা এসময় আপনা আপনি বলে ওঠে “ওই জন্যই কি ওখানে গোলাপের চারা থেকে ফুল হয়না? আর হ্যাঁ একটা বাউলার টুপি ওই ঝোপ থেকে কেলি তুলে এনেছিল।” 
কেলি (পলের গলায়) বলতে থাকে “হ্যাঁ আজ আমি এই থমাসকে পেয়েছি আজ আমি ওকে শেষ করে দেব।” এই বলেই দেহটাকে আছড়ে ছুড়ে ফেলে কেলি। থমাসের কাউবয় টুপিটা বাগানে গিয়ে পড়ে, ঠিক পলের দেহটা যেখানে পুঁতে রাখা ছিল সেখানে। ঠিক এরপরেই কেলি অজ্ঞ্যান হয়ে যায়। অ্যাঞ্জেলিনা আর জন বাগানে গিয়ে ওইখানে মাটি খুড়ে পলের দেহটা পায়। 
তারপরে আর কোনদিন অ্যাথেনা তার মেয়ে কেলিকে পিয়ানো বাজাতে বন্ধ করতে বলেনি। মাঝে মাঝে অ্যাঞ্জেলিনা এসে কেলির বাজনা শুনে যায়, পুরো পলের মতো বাজায়। আর এখন পুরো লন জুড়ে নানার রঙের গোলাপ ফুটে থাকে।

Post a Comment

Previous Post Next Post