-----কাকে?
------ বাসবদত্তা চৌধুরীকে।
তিস্তার ভালো নাম বাসবদত্তা। এ নামটা তার স্কুল, কলেজ ,ইউনিভার্সিটি পরীক্ষার মার্কশিট ও সার্টিফিকেটে আছে। আর তাই কর্মক্ষেত্রেও ওই নামটাই আছে। তার বাইরে তার এই নামটা খুব বেশি লোক জানে না। এমনকি কর্মক্ষেত্রে তার সহকর্মীরা বা স্কুলের হেড মিস্ট্রেস তাকে তিস্তা নামেই ডাকে। কিন্তু এই ভদ্রলোক তার ভালো নামটা জানল কিভাবে? কে উনি?
তিস্তা কে চুপ করে থাকতে দেখে ভদ্রলোক বললেন, বাসবদত্তা চৌধুরী কি এখানে থাকেন?
একটু থতমত খেয়ে তিস্তা বলল, আমি বাসবদত্তা চৌধুরী। কিন্তু আপনাকে তো ঠিক......!
লোকটা দুই হাত জোড় করে কপালে ঠেকিয়ে বেশ বিনীত ভঙ্গিতে বলল, নমস্কার ম্যাডাম।আমার নাম শিবানন্দ সাহা। ডাকনাম মুকু। স্যার আমাকে মুকু নামেই ডাকেন। খুব ভরসা করেন আমাকে। তা উনি দিন তিনেক আগে বললেন, একটা খুব জরুরী কাজ আছে মুকু। তোমাকে একবার কলকাতা যেতে হবে। একটা চিঠি কলকাতায় বাসবদত্তা চৌধুরীকে পৌঁছে দিয়ে আসতে হবে। খুব জরুরী চিঠি, তাই হাতে হাতে দিতে হবে।
লোকটা আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল। তিস্তা হাত তুলে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, দাঁড়ান দাঁড়ান।কে আপনার স্যার ? আমাকে তিনি চিঠি পাঠাচ্ছেন কেন? তাছাড়া আপনি আমার ঠিকানাই বা জানলেন কি করে?
------ ঠিকানা তো স্যার খামের উপরে লিখে দিয়েছেন। তাছাড়া বারবার বলে আমাকে একরকম মুখস্ত করিয়ে দিয়েছেন।তেরো বাই চার বিলু দত্ত লেন, কলকাতা-সাত শূন্য শূন্য শূন্য শূন্য ........
আবারো তিস্তা হাত তুলে শিবানন্দকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ঠিক আছে ঠিক আছে, বুঝতে পেরেছি, ঠিকানাটা আপনার মুখস্ত। কিন্তু আপনার স্যার কে ,সেটা তো বললেন না!
----- রামকৃষ্ণ ঘোষাল। আমার স্যার। পুরুলিয়ায় থাকেন ।খুব নামী উকিল উনি। পুরুলিয়া জেলা কোর্টে প্র্যাকটিস করেন।দারুণ পশার। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চেম্বারে ভিড় লেগেই আছে। কলকাতা হাইকোর্টেও মাঝে মাঝে আসেন।
----- বুঝলাম। তা উনি আমাকে আবার কি চিঠি দিলেন? আমার সঙ্গে তো ওঁর পরিচয় ও নেই।
কই, দিনতো চিঠিটা।
----- যদি কিছু মনে না করেন তো একটা কথা বলি ম্যাডাম।
---- হ্যাঁ ,বলুন।
------ কাল সারারাত ট্রেন জার্নি করে ভোরে হাওড়ায় নেমেছি। তারপর খোঁজ খবর করে আপনার ঠিকানা খুঁজে বার করেছি। এভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা না বলে যদি একটু বসতে পেতাম তো খুব ভালো হতো।
----- হ্যাঁ নিশ্চয়ই। তিস্তা, ভদ্রলোককে ঘরের ভেতরে নিয়ে আয়।
তিস্তা খেয়াল করেনি, ওর মা কখন পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু মা এই অচেনা-অজানা লোকটিকে ঘরের ভেতরে বসে বলছে কেন? তাই ও বাধা দেওয়ার জন্য বলে, কিন্তু মা....
ওকে কথা শেষ করতে না দিয়ে তিস্তার মা গৌরী দেবী বলেন, ভদ্রলোককে বসতে দে। আমি চা করে আনছি।
(চলবে)

