গল্প হলেও সত্যি : সুমি সাহা


আমার জীবনটা বেশ সুন্দর ছিল। অভাব  ছিল কিন্তু অনেক ভালোবাসা ছিল। ভালোবাসার দরুন কোন কষ্ট কোনদিন অনুভব করিনি কিন্তু ভগবানের তা সহ্য হলো না হঠাৎ করে একদিন আমার জীবনে ঘন কালো অন্ধকার নেমে এলো। সুস্থ সবল মানুষটা কথা বলতে বলতে আমার কাঁধে মাথা রেখে না ফেরার দেশে চলে গেলো। আমি বোঝার মত সময় পেলাম না। দুই সন্তানকে নিয়ে আমি আতান্তরে পড়লাম।        আগামী দিনে কি হবে? কেমন করে চলবে? ভগবান  মনে হয় আমার কষ্টটা বুঝতে পেরেছিলেন তাই আমার মেয়ের একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেয় আমার এক সহপাঠী। আমরা একসাথে পড়াশোনা করেছি। আমার ছেলেও ছোটখাটো চাকরি করতো। ওরা দুজনে মিলে সংসার চালায়।            
তারপর বছর তিনেক পর ছেলে বিয়ে করে। তারপর মেয়েও বিয়ে করে। বিয়ে করে মেয়ে জামাই বাইরে চলে যায় চাকরির সুত্রে। এর কয়েক দিন পর আমার  বৌ অন্যের হাত ধরে আমার   ছেলেকে ছেড়ে চলে যায়। আমার ছেলে সারাদিন কাজের জন্য বাইরে বাইরে থাকে। রাত্রে ঘরে ফেরে।         
আমি একা হয়ে যাই। তারপর বেশ কেটে যাচ্ছিল সময় গুলো। আমার এক বন্ধুর কথায় কলম তুলে নিয়ে লেখা লিখি শুরু করি। হঠাৎ আমার জীবন আবার বিপর্যয় নেমে আসে। আমার ছেলের মারাত্মক এক্সিডেন্ট হয়। অনেক কিছু ভেঙে যায়। প্রায় আটমাস আমার ছেলেকে নিয়ে নাজেহাল অবস্থা হয়। প্রথম দুদিন বাড়ির লোককে কাছে পেয়েছিলাম পরে আর পাই নি। ভগবান মানুষ চিনতে তখন শিখিয়ে দিলেন। সব সময় আপন লোক আপন হয় না।          আমার মেয়ে তখন আসতে পারেনি কারন তখন সদ্য সদ্য কনসিভ করেছে। আমি বারণ করি। ঐ সময় ভগবানের মত এসে পাশে দাঁড়ায় আমার এক বন্ধু আর আমার বেয়াই। ওরাই আমার বাজার করে দেওয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সব করে দিত রোজ এসে। নিজের লোকেদের পাশে পাই নি। আট মাস বাদে ছেলে সুস্থ হয়েছে। নতুন জীবন পেয়েছে। কাজে জয়েন করেছে। আমার একটা টুকটূকে ফুটফুটে নাতনি হয়েছে। এখন সবাই ভালো আছে। ভগবান সত্যি কারের মানুষ চিনতে শিখিয়েছেন। বিপদে যে পাশে থাকবে সেই প্রকৃত আত্মীয়। এটা গল্প হলেও সত্যি।

Post a Comment

Previous Post Next Post