পরাজয়ের স্বাদ : হিমাংশু সামন্ত


 

জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পরাজয় শব্দখানি অনেকের কাছে পরিচিত,

যে শিশু জন্মের পর পেলনা পিতা মাতার পরিচয় কাটলো অবহেলায়,

অন্যের করুনায় কাটালো জীবন পিতৃপরিচয়ের জন্য পেল লাঞ্ছনা,

সে শিশুটি জানে পিতৃপরিচয় না জানার গ্লানি অথবা পরাজয় ।

যে অনাথ শিশুরা রাস্তায় ট্রেনে খেলা দেখায় কিংবা গান শোনায় ,

শেষে হাত পেতে খাওয়ার জন্য কিছু চায় বিনিময়ে পায় তাচ্ছিল্য অবহেলা,

সে শিশুটি জানে তাচ্ছিল্যের পিছে কতখানি পরাজয় লুকিয়ে আছে।

যে জড় বুদ্ধির ছেলেটি সারাদিন পড়াশোনা করেও পরীক্ষায় শূন্য পায়,

সে জানেনা পরাজয়ের আসল কারণ কি?

হয়তোবা তার অন্য কোনো বিষয়ে প্রতিভা আছে যা অন্যেরা জানেনা।

যে ছেলেটি উচ্চশিক্ষিত হয়েও চাকরির জন্য ফেউ ফেউ করে ঘুরে বেড়ায়,

শেষে পরিবারের চক্ষুশূল হয় সে জানে পরাজয়ের স্বাদ কতখানি তিক্ত !

যে ছেলেটি চাকরি না পেয়ে প্রেমিকার গলায় মালা পরাতে ব্যর্থ হয়,

সে জানে প্রেমে পরাজয় কতখানি পীড়াদায়ক কিংবা যন্ত্রনাদায়ক।

যে ছেলেটি ভালো ক্রিকেট খেলে নির্দিধায় কত চার ছয় হাঁকে,

দর্শকদের মনকে রোমাঞ্চিত করে প্রতি ক্ষনে ও অনুক্ষনে,

কিন্তু কোনো একদিন প্রথম বলেই শূন্য সংখ্যায় ফিরে এল প্যাভিলিয়নে,

সেই একমাত্র জানে বিখ্যাত ব্যক্তির পরাজয় কতটা লজ্জাজনক।

যে প্রতিযোগী গানের লড়াইয়ে এল বিখ্যাত শিল্পী হবার স্বপ্ন নিয়ে,

কিন্তু প্রথম দিনেই বিচারকদের মন জয় করতে ব্যর্থ হয়ে গেল,

সে শিক্ষা পেল জয় পরাজয়ের মাঝে সূক্ষ্ম ব্যবধান কতখানি।

যে দম্পতির মানসিক দূরত্বের কারণে সম্পর্কের অবনতি ঘটে,

পরিশেষে পরস্পর পরস্পরের থেকে একেবারে আলাদা হয়ে যায়,

তারা জানে জীবন যুদ্ধে পরাজয়ের স্বাদ কতখানি তিক্ততার ও বেদনার।

যে বাবা মা সন্তানের উন্নতির লক্ষ্যে নিজে অভুক্ত থেকে প্রাণ উজাড় করে,

পরিশেষে সন্তান নিজের উন্নতির লক্ষ্যে তাদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয় ,

সেই বাবা মা জানে মানুষ করার লক্ষ্যে এই পরাজয় কত কষ্টের।

যে পিতা মাতা সকল সন্তানদের সমান নজরে দেখে না ,

বঞ্চিত সন্তান জানে এক চোখামির জন্য এই পরাজয় কত দুঃখের।

যে প্রেমিক প্রেমিকার জন্য সবকিছু উজাড় করে দেয় ভালোবেসে,

পরিশেষে উপেক্ষিত হয়ে মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকে দিনরাত,

সে প্রেমিক জানে এই উপেক্ষার পরাজয় কতখানি বিষম জ্বালাময়।

যে সুযোগ সন্ধানী বন্ধু মুখে মিষ্টি হাসি হৃদয়ে মিছরি ছুরি নিয়ে ঠকায়,

সাদাসিধে মনের বন্ধুটি জানে এই পরাজয়ের গ্লানি কতখানি পীড়াদায়ক।

যে অফিসের কর্মচারী সামান্য অপরাধের জন্য লঘু পাপে গুরু শাস্তি পায়,

সে জানে পরাজয়ের মূল্য কতখানি নির্মম এবং কঠোর।

যে মহান নেতা জনকল্যাণ কাজের লক্ষ্যে প্রত্যাশী হয়ে লড়ে,

কিন্তু গননার শেষে এক ভোটের ব্যবধানে হেরে ফিরে আসে,

সে জানে এই পরাজয় কতখানি হৃদয়বিদারক ও লজ্জাজনক।

জীবন যুদ্ধে জয় পরাজয় ঘুড়ির মতো উঠানামা করতে থাকে,

যে মহাভারতের অর্জুনের মতো লক্ষ্যে স্থির সেই শেষ হাসি হাসে।

Post a Comment

Previous Post Next Post