পৈতৃক ভিটে : সুমন পাত্র



 

শুকনো পাতায় আছে ভরে, ছাদ, উঠোন, সিঁড়ি, 

যে ছাদেতে শীতকালে দিতে মা তুমি বড়ি। 

তুলসী মঞ্চ এখনও আছে, আগে যা ছিল তাই, 

তুলসী গাছটা গেছে মরে, আগাছা নিয়েছে ঠাঁই। 

যেদিকে তাকাই, ছোটবেলাটা, নাচছে হাত-পা ছুঁড়ে, 

ছাদে যাবার সিঁড়ির মাঝে, অশথ্ব উঠেছে ফুঁড়ে। 

মাগো! তোমার নিজের পছন্দের বানানো সেই বাড়ি, 

 বাবা যেতেই, তোমাকে নিয়ে, গেলাম তড়িঘড়ি।    


আজও সেই উঠোন জুড়ে, রোদ উপচে পড়ে, 

শীতকালে এই রোদের লোভে, যেতাম না স্নানঘরে, 

তেল মাখিয়ে দিতে গায়ে, ঢালতাম জল কষ্টে, 

আজও তেমন বাড়িটার স্মৃতি, রয়েছে আষ্টেপৃষ্ঠে। 

মাগো! তোমার নিজের পছন্দের বানানো সেই বাড়ি, 

কেউ নেই দেখার লোক, হয়েছে পোড়ো বাড়ি। 


যেদিক দিয়ে পুকুর পাড়ে, যেতে স্নানের তরে, 

রাস্তাটা হারিয়ে গেছে, জংলি ঝোপঝাড়ে। 

পিছনদিকের পাঁচিলটা, গেছে অনেকটাই হেলে, 

অযত্নের দান এই সব, যেমন রেখেছি ফেলে, 

আমার বউ, ছেলে, কেউ, আসবে না এ গাঁয়ে, 

পাবেনা ছোঁয়া পিতৃপুরুষের, মিলিয়ে যাবে পায়ে। 

মাগো! তোমার নিজের পছন্দের বানানো সেই বাড়ি,

কাজের জন্য গেলাম দূরে, হলো যে ছাড়াছাড়ি। 


ঠিক শনিবার বিকেল বেলায়, আসতো বাবা বাড়ি, 

মাদুর পেতে বসতো দাওয়ায়, হাতপাখাটা ধরি, 

তুমি ব্যস্ত রান্নাঘরে, গন্ধ যেতো দূরে, 

খেলার মাঝে, দুয়েকবার, আমরাও যেতাম ঘুরে। 

বাবাও আনতো সঙ্গে করে, নিমকি, জিভেগজা, 

বাবার জন্য, কমতো বকা, হতোও খুব মজা। 

মাগো! তোমার নিজের পছন্দের বানানো সেই বাড়ি,

ঘড়ির কাঁটার হিসেব নেই, টানছে আমার নাড়ি। 


তোমরা নিশ্চয়ই রোজ দেখো, না ফেরার দেশ থেকে, 

সাধের বাড়ির কি পরিণতি, ঝিঁঝিঁ উঠছে ডেকে, 

শুকনো পাতা ঝাঁট দিতে মা, শলার ঝাঁটা দিয়ে, 

পাতা গুলো জ্বালিয়ে দিতে, উনুনে আঁচ দিয়ে। 

মাগো! তোমার নিজের পছন্দের বানানো সেই বাড়ি,

দেখো তোমরা, আমি হয়তো, আর, আসতে নাও পারি।

Post a Comment

Previous Post Next Post