প্রদর্শনী : কমল কুমার রায়



আকাশঃ- আজ আমি খুব ব্যস্ত।( ফোনে কথা বলছে)। আমার একটা প্রদর্শনী উদ্ভোদনে যেতে হবে। কাল ফাঁকা থাকবো, ফোন কর। 

লিলিঃ- আচ্ছা ঠিক আছে। তো কোথায় হচ্ছে  প্রদর্শনীর উদ্বোধন?

 আকাশঃ- ঐ যে নেতাজী সংঘের ক্লাবে। 

লিলিঃ- বেশ তুমি এখন যাও।রাখছি তাহলে এখন।

 আকাশঃ- ঝুমা মাসি তোমার রান্নার অবস্থা কতদূর? 

পেটে চুইচুই  করে ডাকছে আর শান্ত করতে পারছি না।তোমার হাতের রান্না খেয়ে বেরবো কাজে।

 ঝুমা মাসিঃ-  তাইতো অনেকটা দেরী হয়ে গেল দাদাবাবু।

 একটু ধৈর্য্য ধরো, আমি খুব শীঘ্রই তোমাকে খাবার বেড়ে দিচ্ছি।

 আকাশঃ-স্নানটা তাহলে সেরেই আসি মাসি।

 ঝুমামাসিঃ- হ্যাঁ  যাও দাদাবাবু আমার সব তৈরি হয়েই গেছে।

 তুমি স্নান সেরে আসতেই তোমার  খাবার বেড়ে দিচ্ছি। 

আকাশঃ- 

(স্নান করতে বাথরুমে প্রবেশ করল এবং কিছুক্ষণ পর স্নান করে বাথরুম থেকে বের হল)

মাসি দিয়েছ নাকি খাবার? 

ঝুমামাসিঃ-

 হ্যাঁ দাদাবাবু দিয়েছি

খাবার টেবিলে বেড়ে। 

আকাশঃ-

কই দেখি তো কী কী করেছ? বাহঃ ভাত, ডাল,  রুই পোস্ত, চাটনি ও পাপড়। এতসব কিছু করেছ! বাহ !  বাহ! 

ঝুমামাসিঃ- তুমি সেই সকালে ঘর থেকে বেরিয়ে যাও আর আসো রাতে। কত কষ্টই না করো। আমি তাই যথাসাধ্য করার চেষ্টা করি। 

 আকাশঃ- দারুন মাসি। খাসা হয়েছে খাবারগুলো। 

মাছ কোথায় পেলে? বাজারে না ঘরের কাছে?

ঝুমামাসিঃ- দাদাবাবু আজ বাজারে যাইনি।মাছবালা  ভোলা এসেছিল দরজায়। বেছে বেছে এই রুইমাছ নিয়েছি। আবার সবজিওয়ালা রতন তার ঠেলাগাড়ি করে সবজি নিয়ে এসেছিল তার কাছ থেকে সবজি নিলাম। 

আকাশঃ-

 ঝুমা মাসি তুমি না গ্রেট। কতটা যত্ন নিয়ে কাজগুলো করো। আমার তো সময়ই হয়না। 

ঝুমামাসিঃ-

দাদাবাবু আর একটা পাপড় দেব? 

 আকাশঃ-

 না না আর খেতে পারব না। আমি উঠছি মাসি তুমি এবার খেয়ে নাও।

 ঝুমামাসিঃ-

 আচ্ছা দাদাবাবু।

 স্বপনঃ-

কিরে কেমন আছিস এখন চিনতে পারছিস আমায় (ফোনে কথোপোকথন)।

 আকাশঃ-

বল বাটুল তুই কেমন আছিস ? আমি ভালো আছি।

 স্বপনঃ-

 আমায় কি করে বুঝলি আমি স্বপন।

 আকাশঃ-

 বন্ধুকে হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করলে তার সবকিছুই উপলব্ধি করা যায়।

 স্বপনঃ-

 তা তুই তো এখন অফিসের কাজে খুবই ব্যস্ত শুনেছি।

 আকাশঃ-

বয়সটা কি কম হলো রে বন্ধু!

 উচ্চপদে আসীন হলে সর্বদা চাপ ও ব্যস্ততায় থাকতে হয়।

স্বপনঃ-

 বাংলোর পরিবেশটা কেমন রে বন্ধু ? 

আকাশঃ-

 খুবই ভালো পূর্বদিকে জঙ্গলে ঘেরা। নিকটবর্তী তে নদী আছে। সবুজের সমারোহ বসন্তকালে আবার ঝরাপাতার দৃশ্য। নব পত্রের ডানা মেলা। পলাশের ওই রঙিন পুষ্পের পরিস্ফুটন মনকে একদম চনমনে করে দেয়। 

স্বপনঃ-

তাইতো বন্ধু তাহলে ভালোই আছিস?

 আকাশঃ-

তোর পরিবারের বাকিরা কেমন আছে রে? 

 স্বপনঃ-

 ওই চলে যাচ্ছে টুকটাক করে।

 আকাশঃ-

 বেশ ভালো থাকিস আবার ফোন করিস। মাঝে মাঝে আমি অবসর পেলে তোকে ফোন করবো। 

স্বপনঃ- বাই বন্ধু। 

আকাশঃ-বাই বন্ধু।

 ঝুমামাসিঃ- দাদাবাবু আমার খাওয়া হয়ে গেছে। থালাবাসন গুলো একটু মেঝে নিচ্ছি।  তুমি বিশ্রাম নিতে যাও। 

আকাশঃ-

আচ্ছা। তুমিঔ কাজ সেরে বিশ্রাম নাও।

ঝুমামাসিঃ-

 বেশ! বেশ! তুমি যাও। 

(ঘুমাতে ঘুমাতে আকাশ হঠাৎ চিৎকার করে উঠলো। যেওনা তুমি যেওনা) 

ঝুমামাসিঃ-

 দৌড়ে এসে দরজায় নক করে বলল কি হয়েছে দাদাবাবু। 

আকাশঃ-

ও কিছুনা মাসি স্বপ্ন দেখলাম।

 ঝুমামাসিঃ-

 ও - ও। একটু জল খেয়ে ঘুমিয়ে  যান  দাদাবাবু, প্রদর্শনীতে যেতে হবে। 

( স্বপ্নের ঘোরে আকাশ পুরাতন স্মৃতি ভাবতে লাগলো) 

আকাশঃ-

বাবলু আজ স্কুলের পড়া শেষ হলেই ওই কৃষ্ণচূড়া গাছটির কাছে দাঁড়িয়ে থাকবো। আর টুপাই, অনিলকেও বলে দিস। 

বাবলুঃ-

আচ্ছা বাড়ি যাবিনা। ওর জন্য সাইকেল নিয়ে দাঁড়াবি। বেশ টুপাইকে আর অনিলকে বলে রাখবো।

( অনিল কৃষ্ণচূড়ার গাছে অপেক্ষা করতে থাকে এবং দূরে তাকিয়ে দেখল আকাশ,  টুপাই আর বাবলু একসাথে হেঁটে হেঁটে আসছে।)

 আকাশঃ-

 অনিল ওকি চলে গেল বাড়িতে? 

 অনিলঃ-  না রে সন্ধ্যা এখনো পেরিয়ে যায়নি রাস্তা দিয়ে। 

আকাশঃ-

 হঠাৎ করে এগিয়ে গিয়ে সন্ধ্যার পথ আগলে ধরল) বলল তোমায় একটা কথা বলতে চাই।

 সন্ধ্যাঃ-

বল কি বলবি ? ক্লাস তো আমায় করতে দিস না। শুধুই আকার-ইঙ্গিত করতে থাকিস। অন্যরা কি ভাবে বলতো? 

আকাশঃ-

 আমি তোকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি। 

সন্ধ্যাঃ-

 তোর মাথা খারাপ, বাড়ির লোক জানতে পারলে চাবকিয়ে  দেবে আমায়।

 আকাশঃ-

 তুই কি আমায় পছন্দ করিস না?   সন্ধ্যাঃ-

আমার তোকে খুব ভালো লাগে। তুই পড়াশোনায় খুব ভালো তাই। 

তোর দ্বারা আমার মতো মেয়েরাও পড়াশোনায় একাগ্রতায় মত্ত থাকে। 

আকাশঃ-

তাহলে তুই তো আমাকে পছন্দ করিস। 

সন্ধ্যাঃ-

শোন আমাদের বয়স এখন কম। তবুও আমি একটু বেশি সামাজিকতার দিকটা উপলব্ধি করতে পারি। তাই একটা কথা বলি আমাদের ভালোবাসা এইভাবে চলুক যাতে তুই ও আমি নিজেকে সমাজে তুলে ধরতে পারি।

আকাশঃ- ঠিক আছে তাই হবে।

[ এইভাবে চলতে চলতে স্কুল থেকে কলেজের সময় অতিবাহিত হয়ে যায় ও তাদের মধ্যে সম্পর্কের গুরুত্ব বাড়তেই থাকে।]

 টুপাইঃ-

আকাশ জানিস ঘটনাটা। 

আকাশঃ- 

কিরে কি হয়েছে?

 টুপাইঃ- সন্ধ্যা চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাড়ি ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেছে। (আকাশের আকাশ  সম্পূর্ণরূপে ফাঁকা হয়ে যায়, তার যোগাযোগের ঠিকানা ও সন্ধ্যার বাড়ি থেকে চেপে রাখা হয়েছে।)

আকাশঃ-

কি আর করব বল, চেষ্টায় ত্রুটি তো করিনি। তবে শোন এ জীবনে কাউকে আর হৃদয়ে  দেবনা ঠাঁই।  জীবনকে পরিচালিত করব নিজস্ব আঙিনায়। ধনাত্মক চিন্তাভাবনায়।

 টুপাইঃ-

জীবনে হার মানবি না বন্ধু। 

আকাশঃ-

 কেউ প্রেমে আহত হলে নিজেকে নিঃস্ব ভাবে, মাদকাসক্ত হয়, বিপথগামী হয়, আত্মহত্যার মত পথ বেছে নেয়। আমি কিন্তু কোনটাই করবো না। জীবনে কেউ এসেছিল মনের মধ্যে, ঠাঁই দিয়েছিলাম, আগলে রেখেছিলাম, কিন্তু কুচক্রীদের পাল্লায় পড়ে আড়ালে চলে গেছে। মেনে নিতে হবে এটাই জীবন। তাই দনিজেকে নিংড়ে নিয়ে সমাজে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবোই এটাই আমার শপথ।

 টুপাইঃ-

বন্ধু তোর ভালো হোক এই কামনাই করি। 

[আকাশ ও চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে  "বিডিও" হিসেবে কাজে যোগদান করলো [যেতে যেতে কার্যক্ষেত্রে একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ দেখে আঁতকে ওঠে চিৎকার করতে লাগলো। 

সন্ধ্যা, সন্ধ্যা তুমি কোথায়? 

আকাশঃ-

 বিছানা থেকে উঠে বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে জল দিল তারপর জল খেয়ে শুয়ে পড়ল। 

ঝুমামাসিঃ-

দরজায় ঠকঠক করে বলল দাদাবাবু উঠুন বিকাল তো হয়ে গেছে। 

আকাশঃ-

আসছি মাসি আসছি। তুমি আমায় এক কাপ গরম চা করে দাও সঙ্গে কিছু খাবার।

 ঝুমামাসিঃ- আচ্ছা দাদাবাবু দিচ্ছি। 

( মাসি রান্নাঘরে কাজ করতে লাগলো। ঐদিকে আকাশ খবরের কাগজটা পড়তে পড়তে দেখল আজকের প্রদর্শনীর খবরটা। এরপর আকাশ যাওয়ার জন্য রেডি হতে লাগলো। 

আকাশঃ-

মাসি খাবার বাড়ো। আমি খেতে বসবো।

 ঝুমামাসিঃ- আচ্ছা দাদাবাবু   দিচ্ছি।

আকাশঃ-

 মাসি আজ একটু দেরি হবে আসতে।তুমি পাড়লে সব দেখাশোনা করে খেয়ে নিও।

ঝুমামাসিঃ- আচ্ছা ঠিক আছে। 

আকাশঃ-

  খাবার খেয়ে  প্রদর্শনীর স্থানের দিকে রওনা হল। সকলে তাকে বসার অনুরোধ করলো এরপর বরণ করার সময় তাকে মঞ্চে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করা হল এবং বরণডালা নিয়ে একজন মহিলা অগ্রসর হয়ে তার সামনে এলো। 

আকাশ হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। ওই মহিলা তার হাতে করে চন্দনের টিপ তার কপালে লাগিয়ে দিল। বাকরুদ্ধতার পর সে ছবির প্রদর্শনীর উদ্বোধন করলো। ছবি গুলো সব পর্দার দ্বারা ঢাকা ছিল। সে আরো হতবাক হয়ে গেল।সেখানে কিছু ছবিতে  কৃষ্ণচূড়ার গাছে ধারে সন্ধ্যার কথোপকথনের দৃশ্য চিত্রায়িত ছিল, বিদ্যালয় কক্ষের চিত্রাবলী, প্রেমিককে ছেড়ে যাওয়ার দৃশ্য প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছিল। সঙ্গে অন্যান্য মান্যগণ্য ব্যক্তিদের ছবি ও স্থান পেয়েছিল। একটু অবসরে আকাশ ওই মহিলাকে অর্থাৎ সন্ধ্যাকে আলাদা করে ডেকে নিল।)  আকাশঃ-

তুমি এখানে কেমন করে? 

সন্ধ্যাঃ-  চিত্রাঙ্কনের নেশায়।

 আকাশঃ-

তোমার মাথায় 

সিঁদুর নেই, হাতে শাঁখা পলা কিছুইতো দেখছি না।

বিয়ে করোনি? 

 সন্ধ্যাঃ-

কি করে দেখবে মনের মানুষই তো পেলাম না। তোমার পরিবারে কে কে আছে? 

আকাশঃ-

আরে কেউ নেই।

 সন্ধ্যাঃ-

কেন তুমিও কি বিয়ে করোনি? 

 আকাশঃ-

 তুমি আমার জীবনে সন্ধ্যার কালো পর্দা নামিয়ে চলে গিয়েছিলে সুদূরে।

 তবুও আমি শপথ নিয়েছিলাম আমি হারবো না জীবনে। এই জীবন একবারই প্রাপ্য। একে মাধুর্যময় করে রাখতে চেষ্টা করব। তাই  আজ এই পজিশনে দাঁড়িয়ে আছি সমাজসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে।

সন্ধ্যাঃ-

তুমি ভুল ভাবছো। আমি  তোমায় ছেড়ে যায়নি। আমায় পরিবার থেকে বাধ্য করা হয়েছিল তোমার থেকে দুরে সরে থাকতে। তাই আমিও শপথ নিয়েছিলাম কাউকে দ্বিতীয়বার হৃদয়ে বসাতে পারবো না। তাইতো আজ আমি এই পজিশনে সততার সঙ্গে অতিবাহিত করে চলেছি।  চাকরী সামলাচ্ছি আবার চিত্রাঙ্কনও করে চলেছি। 

আকাশঃ- আমার একটি অনুরোধ আমায় এই বয়সে আবার একটু তোমার হৃদয়ে স্থান দেব।আমি বড় অসহায় তোমাকে ছাড়া অসম্পূর্ণ মানব জীবন। 

সন্ধ্যাঃ- হৃদয়ের আর্তনাদ আমাকে তোমার হৃদয়ে  একটু স্থান দেবে।যাতে অসম্পূর্ণতার কষ্ট দূর করে বাঁচতে পারি।

আকাশঃ- দেব।তোমায় পরিপূর্ণতার রূপ দেবোই।

চলো আমার সঙ্গে। 

সন্ধ্যাঃ- কোথায় যাব?

আকাশঃ- আমার ঘরে।

লিলিঃ- কী কেমন হল আজকে তোমাদের  প্রদর্শনী।

( সকলের মুখে হাসি, এরপর কলিং বেলের আওয়াজ শুনে ঝুমামাসি দরজা খুলতেই)

আকাশঃ- ঝুমামাসি আমার স্বপ্ন সফল হয়েছে যাকে খুজে ছিলাম তাকে পেয়ে গেছি আমার জীবন। আমার সন্ধ্যা। এখন থেকে আমরা দুজনে একসঙ্গে থাকবো জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত।

Post a Comment

Previous Post Next Post