জন্মদিনের সকালটা বেশ অন্যরকম ভাবেই শুরু হয়েছিল সুমনার। যা আর পাঁচটা দিনের থেকে অনেকটাই আলাদা ! এইবারের জন্মদিনে সুমন ওকে যে, এরকম একটা উপহার দেবে, ও সত্যি ভাবতে পারেনি ! দিনের বাকি সময়টা ওর জন্য যে সত্যি অন্যরকম হবে তখন সত্যি সুমনা একটুও আঁচ করতেই পারেনি। পারেনি বলেই তো সুমনের মিষ্টি ব্যবহারে ও আল্হাদে সুমনা একেবারে ভেসে গিয়েছিল। ও সুমনের আসল উদ্দ্যেশ্য ধরতেই পারেনি।
আসলে সুমন মানুষ হিসেবে নিজেকে বিরাট চালাক ভাবে। কিন্তু সব দিকে ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে পারে না। আর তাই সুমনার জন্মদিনটা নষ্ট করার পরিকল্পনা সুমনের না থাকলেও অন্যের পরামর্শে তাইই করে ফেললো।
সুমনদের পাশের ফ্ল্যাটের এক মহিলার সুমনের প্রতি একটু বেশিই নজর ছিল। সুমনার জন্মদিনের সকালে সেই পাশের ফ্ল্যাটের মহিলা সুমনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর নামে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সুমন ও সুমনার সুন্দর কাটানো মুহূর্তের মধ্যে হঠাৎই প্রবেশ করে। এতে সুমন আনন্দিত হলেও সুমনা খুবই অস্বস্তি বোধ করে। সুমনের হাবভাব বলে দেয় যে , পাশের ফ্ল্যাটের এই মহিলার আগমন পূর্ব পরিকল্পিত। সুমনা এত কিছু প্রথমটায় না বুঝে বলে বসে , " দেখো , আমি মানছি তুমি ওকে ডাকো নি। কিন্তু ও যখন এসেই পড়েছে এবং কথাবার্তার ছলে আমাদের সুন্দর সময় নষ্ট করেই চলেছে , তখন অন্তত তোমার অবশ্যই ওকে কিছু বলার দরকার ছিল।" আসলে সুমন এরকমই। ও নিজের বউ ছাড়া আর কাউকেই কিছু বলতে পারে না ! আর এইজন্যই সুমনা এই ধরনের ক্ষেত্রে এত রেগে যায় ! অবশ্য রেগে যাওয়ারই তো কথা ! ন্যায় - অন্যায় বিচার না করে সুমন যেখানে নিজের স্ত্রীর ক্ষেত্রে কারণে - অকারণে রাগ দেখায় , আর সেখানে এইধরনের ক্ষেত্রে সুমন একেবারে নির্বিকার ! এতো সত্যি মানা যায় না ! তাহলে কি সত্যি অন্য কোন ব্যাপার , যা সুমনা ভাবছে ! এইসব অনেক কিছুই সুমনা সবসময় ভাবতে থাকে। সুমনকে জিজ্ঞেস করলে ও স্বভাবতই অস্বীকার করে। সুমন যতই না, না করুক , এইটুকু বোঝার মত বুদ্ধি তো সুমনার হয়েইছে। নতুন এই ফ্ল্যাট-এ আসার পর থেকেই যত গন্ডগোল। এর আগে ভাড়াবাড়িতে খুব সুন্দর করে গুছিয়ে ওরা সংসার করত। কিন্তু কপালে সুখ না থাকলে যা হয় ! এইসব ভাবতে ভাবতেই সুমনার দিন কাটে। তবে এটা ঠিক , জন্মদিনের এই অনাকাঙ্খিত উপহারটা ও কোনদিনই ভুলবে না বলে ঠিক করল।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এই তৃতীয় সম্পর্ক অনেক সুন্দর সংসারকে ভেঙে দেওয়ার মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংসারে স্বামী এবং স্ত্রী দুজনেরই এই ব্যাপারে সজাগ হওয়া প্রয়োজন। নিজেদের মধ্যে বিশ্বাস , ভরসা এবং ভালবাসা অটুট থাকলে এই ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে না। আগেকার দিনের সম্পর্ক গুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে , বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাড়ির মহিলা , অনেক কিছুই হয়ত জানতেন না। বাড়ির পুরুষ কর্তাটির হাতেই থাকত সব ! সেক্ষেত্রে তিনি যা বলতেন তার স্ত্রী স্বামীর আজ্ঞা ধরে নিয়ে সে সবই মেনে চলতেন। এতে সংসারে সুখও অটুট থাকত। ছেলে - মেয়েরাও মানুষ হত। সংসার সংসারের নিয়মে চলত। এখন স্বামী - স্ত্রী উভয়েই বাইরের জগতে যুক্ত থাকায় প্রত্যেকেরই নিজস্ব জগৎ থাকে এবং কেউ কারোর ব্যক্তিগত ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ দেখায় না। নিজেদের মত করে সময় কাটানোর সময়ও তাদের থাকে না। ফলতঃ দিনের শেষে উভয়ই নিজেদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হওয়ার কারণে একাকিত্বে ভোগে, তখন সঙ্গীর প্রয়োজনে বাইরের হাতছানিকে গ্রহণ করে। আমরা আসলে ঘরের থেকে বাইরের জিনিসকে বেশি গ্রহণ করি। ঘরের সব খারাপ , আর বাইরের সব ভাল ! এই তত্বেই আমরা বেশি বিশ্বাস করি। এর জন্য অবশ্য নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সদ্ভাবের অভাবই বেশি কাজ করে।
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে এই তৃতীয় সম্পর্ক সংসারে উপস্থিত বাচ্চাদের মধ্যেও খুবই প্রভাব ফেলে। আসলে এইসবের কারণে বাড়ির পরিবেশ ঠিক না থাকায় বাচ্চারা নিরাপত্তা হীনতায় ভোগে। এইধরনের ক্ষেত্রে অনেক সময় ঘটনা স্বামী - স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদকেও টেনে আনে।সেক্ষেত্রে বাচ্চারা আরোই নিরাপত্তার অভাব বোধ করে। এতে তাদের মন - মানসিকতা নষ্ট হয়ে যায় , জীবনের মূল্যবোধ হারিয়ে যায়। তারা এতটাই বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে যে, তারা নিজেদের জীবন নিয়েও সংশয়ে ভোগে। বাবা - মা হিসেবে আমাদের উচিৎ সন্তানকে সঠিক পথের দিশা দেখানো। তাদেরকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়া নয় ! বাবা - মা হিসেবে প্রাপ্য সম্মান পেতে গেলে এবং সন্তান যাতে জীবনে চলার পথে সঠিক ভাবে এগোতে পারে, তার জন্য আমাদের খুব ভেবে চিনতে চলতে হবে। নিজেদের জীবনের চাওয়া - পাওয়ার হিসেবে একটু কম বেশি হলেও সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সেসব মানিয়ে - গুছিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব বাবা - মা হিসেবে আমাদেরকেই নিতে হবে। বাইরের লোকের হাতছানিকে গ্রহণ না করে , নিজের ঘরের লোকের হাতটিকেই শক্ত করে ধরতে হবে। তবেই সব কূল রক্ষা পাবে।
