নিজস্বতা : সায়ন্তনী দাস ধর


 

          নীরার আজকাল দুপুরে ঘুম আসে না। এমনিই নাতির জন্য একটা সোয়েটার বুনছিলেন। যদিও এসব নাকি আজকাল আউট অব ফ্যাশন....তবুও ....অভ্যেস! এমনসময় ফোন বেজে উঠল। নীরার গলা পেয়েই ও প্রান্তের মানুষটি হইহই করে উঠলেন, " নীরা, কেমন আছিস? কত বছর পর! তোর ফোননম্বর জোগাড় করতে তো....উফ্!" 

         অনুভা!!! এক পশলা ছেলেবেলা যেন নীরার সামনে ঝরে পড়ল ঝমঝমিয়ে। 

অনুভা: কেমন আছিস?

নীরা: সঙ্গীহীন হয়ে দুই ছেলের সংসারে ভাগাভাগি করে ভালই আছি....

অনুভা: সেকি রে? তোদের সেই বিশাল বাড়িটা?

নীরা: আর সেই বাড়ি! তালাবন্ধ অবস্থায় বিক্রি হওয়ার অপেক্ষায়.....কর্তা তো আমায় একা ফেলে পালালেন। ছেলেরাই ঠিক করল, ছয় মাস করে প্রত্যেকের বাড়িতে থাকব। 

অনুভা: ভাগের মা হয়ে গেলি শেষে?

নীরা: ভাললাগে না রে, একা থাকতে পারব না ভেবে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু ...কোন স্বাধীনতা নেই....সবসময় মনে হয় পরের বাড়িতে রয়েছি। না না, ওরা ভালবাসে, যত্ন করে...কিন্তু নিজস্ব সত্তা যেন হারিয়ে ফেলছি....

অনুভা: আমিও তোর মতোই একা আজ। কিন্তু থাকি নিজের বাড়িতে নিজের মত করে। বাঁচি নিজের ইচ্ছেয়।

আরও কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রাখেন নীরা। সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেললেন। কদিন ধরেই ভাবছিলেন, অনুভা অনুঘটকের কাজটি করলেন। আজই সন্ধ্যেবেলায় ছেলেদের জানাবেন নীরা, তিনি এবার নিজের বাড়িতেই ফিরে যাবেন- নিজের জগতে।

Post a Comment

Previous Post Next Post