হারানো ওয়ালেট : কমল কুমার রায়


 

রাস্তায় চলতে চলতে  বিকাশ একটি বস্তু দেখতে পেল। এদিক ওদিক তাকিয়ে 

বিকাশ বললঃ- ওই বস্তুটা কি ছিল শিখা? 

শিখাঃ-মনে হয় কোন বর্জ্য পদার্থ হবে! 

বিকাশঃ- আরে না চলো গিয়ে দেখি। 

শিখাঃ-আচ্ছা চলো গিয়ে একবার দেখা যাক।

 বিকাশঃ-শোনো তুমি দেখতে পাচ্ছ এটা একটি ওয়ালেট। 

শিখাঃ-দেখতো খুলে কোনো পরিচয় পত্র আছে কিনা? 

বিকাশঃ- হ্যাঁগো এতে পরিচয় পত্র আছে। 

শিখাঃ- কি কি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে ? 

বিকাশঃ-  আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, এটিএম কার্ড,প্যানকার্ড। রয়েছে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর সহ ব্লুবুক। 

শিখাঃ-বেশ তাহলে ভালই হল, তাই নয় কি? 

বিকাশঃ- কেন বলতো? 

কি বুঝাতে চাইছ তুমি?

 শিখাঃ- দেখো এখনতো আধুনিক যুগ তাই খুব সহজেই মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব। 

বিকাশঃ- কেমন করে?

শিখাঃ- তুমি তো গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নাম্বার"RTO" অ্যাপে নাম নথিভূক্ত করে মালিকের সম্বন্ধে ধারণা করা যায় বা পরিচয় জানা যায়। 

 এবার আধার কার্ড দেখে কোন এলাকার ব্যক্তি ও অঞ্চল, ব্লক অফিসের নামও জানা যায়। 

বিকাশঃ- তাহলে এখন বাড়ি চলো। ঘরে গিয়ে দেখবো কি কি করা যায়?

( এরপর তারা কেনাকাটাও বাজার করে বাড়ির দিকে প্রস্থান করতে লাগলো)

 শিখাঃ- আজ আমরা তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এসেছি বলো শিখা।ফ্রেশ হয়ে নাও তারপর রাতে ওই ওয়ালেট সম্বন্ধে গবেষণা করব। 

বিকাশঃ- বলো শিখা যিনি এই ওয়ালেটা হারিয়েছেন তাহার কত বড় ক্ষতি হয়ে গেল!  তার যাবতীয় প্রয়োজনীয়তার চাবিকাঠি এখন আমাদের হাতের মুঠোয়।

 তিনি এখন হয়তো পাগলের মত আচরণ করছেন। 

আমাদের তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই ওয়ালেট ওই ব্যক্তিকে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। 

শিখা ঃ- অবশ্যই যদি এই ঘটনা আমাদের ক্ষেত্রে ঘটতো তা হলেও একই অনুভূতি আমাদের অন্তরে ঘটতো। 

তাই শীঘ্রই আমাদের কিছু একটা করতে হবে।

 বিকাশ ঃ-পরিচয় পত্রে নাম লেখা হরিদাস বাড়ুই, পিতা রামদাস বাড়ু্ই। পোস্টঃ-পাড়ুই জেলাঃ-বীরভূম। পরিচয় পত্রের নম্বর WB / 41/ 286 /------

  শিখাঃ- আমাদের অর্ধেক কাজ তো হয়েই গেল। এবার এক কাজ করো অনলাইনে পোস্ট অফিসের নিকটবর্তী গ্রাম ও পঞ্চায়েতের নাম  অনুসন্ধান করো। বিকাশঃ-আচ্ছা দেখছি দেখছি!  হ্যাঁ পেয়েছি পঞ্চায়েতের নাম ও ফোন নম্বর। 

শিখঃ-আচ্ছা কাল যোগাযোগ করবে।

 বিকাশঃ- কাল আমার অফিসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে, অনেকটাই ব্যস্ত থাকব তুমি বরঞ্চ ফোনটি করে  ব্যাপারটা জানিও। শিখাঃ-আচ্ছা দেখবো।এখন তুমি  খেয়ে নাও ও শান্ত হয়ে শয়ন করো কাল তোমাকে তাড়াতাড়ি অফিস যেতে হবে।

 বিকাশঃ- আচ্ছা চলো আমরা খাবার খেয়ে নি। শিখাঃ-চলো খাবারের আয়োজন করি। বিকাশঃ- তোমার হাতের রান্না একটা আলাদা মাত্রা  থাকে।আজ খাবার খুব তৃপ্তি করে খেয়েছি।  

শিখাঃ- বেশ ঘুমোতে চলো আর আমার প্রশংসা করতে হবে না।

(আনন্দের সঙ্গে  শয়ন করে সকালে চোখ কচলাতে কচলাতে বিকাশ ঘুম থেকে উঠলো।

বিকাশঃ- উদিত সূর্যের  স্নান দিনকে আনন্দময় করে তোলে বলো শিখা!

 আজ আমি তাড়াতাড়ি স্নান করে অফিসের পথে বেরিয়ে যাচ্ছি, তুমি ওই কাজটি যত্ন নিয়ে করবে। 

শিখাঃ-আচ্ছা ঠিক আছে।  অবসর সময়টি পাই তারপর দেখছি।

 বিকাশঃ- আমি বেরোচ্ছি শিখা। জয় মা, জয় মা।

 শিখাঃ- দুগ্গা, দুগ্গা।

( দুপুরের অবসরে শিখা ফোনটি খুলে অনলাইনে পঞ্চায়েতের নম্বরটি জোগাড় করেছে) তারপর নিজে ফোন করে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথোপকথনে বিস্তারিত জানিয়েছে ও তারা সুব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছে। যথারীতি বাড়ি থেকে ওই পঞ্চায়েতে যাওয়ার দিশা  বলেছেন। 

বিকাশঃ- শিখা খোঁজ নিয়েছিলে?

 শিখাঃ- হ্যাঁ নিয়েছি। সময় করে চলো ওই পঞ্চায়েত থেকে ঘুরে আসি।

 বিকাশঃ- কাল যাব অফিস ছুটি আছে। 

শিখাঃ- মোটরসাইকেলে কাল কাগজপত্র সব নিয়ে চলে যাব। এই কয়েকদিন ওই ব্যক্তির হয়তো অনেক অসুবিধা হচ্ছে। আমাদের কাজ যত দ্রুত ঐ ব্যক্তি কে কাগজ পত্র প্রদান করা ও তার কষ্ট লাঘব করা। 

বিকাশঃ-কই রেডি তো  আর দুগ্গা দুগ্গা বলে যেন ওই ব্যক্তিকে আজ আমরা পেয়ে যাই। (এই বলে তারা গন্তব্যের দিকে রওনা দিল)। সকালে বেরিয়ে তারা দুপুরের দিকে গন্তব্যে পৌছালো এরপর সেখানে গিয়ে পরিচয়কারী ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। তারপর ওই গ্রামের ওই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ  স্থাপন করেন এবং ওয়ালেট প্রদান করেন।

হরিদাস বাড়ুইঃ- আমি  হরিদাস বাড়ুই, পিতা- রামদাস বাড়ুই। আমার ওয়ালেট বাজারে রাস্তায় হারিয়ে গিয়েছিল। বিকাশঃ-আপনি এই গুরুত্বপূর্ণ বস্তুটার দিকে নজর রাখবেন তো।

 হরিদাস বাড়ুইঃ- বাবা বয়স হয়েছে তো, চোখেও একটু কম দেখি। স্মৃতিশক্তি ও কমজোর হয়ে যাচ্ছে। আমি মেয়ের বিবাহের কেনাকাটার জন্য বাজারে গিয়েছিলাম। জিনিসপত্রের যা দাম মস্তিষ্ক সচল রাখতে পারছি না বাবা।

শিখাঃ- কাকু নিজেকে একটু সামলে নিয়ে ধীরে ধীরে সকল কাজ করুন। তাড়াহুড়োতে অনেক কিছুই বিগড়ে যায়। 

হরিদাস বাড়ুইঃ-  হ্যাঁ  মা অবশ্যই খেয়াল রাখবো। এই উপকারের জন্য আমি তোমাদের কাছে চিরঋণী।

 বিকাশঃ- এমন কথা কখনো বলবেন না, এটা সভ্য সমাজে আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। তাই আমরা আমাদের কর্তব্য পালন করেছি মাত্র। 

শিখাঃ- হ্যাঁ কাকু আমরা কর্তব্য পালন করেছি মাত্র। 

হরিদাস বাড়ুইঃ- বাবা তোমাদের কাছে আমার একটি অনুরোধ, আমার মেয়ের বিবাহে তোমাদের উপস্থিতি একান্ত ভাবে কামনা করি। 

 বিকাশঃ- অবশ্যই কাকু আমরা আসবো। আপনি সবকিছু খুব শান্ত মাথায় কাজ করুন দেখবেন সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

শিখাঃ-অবশ্যই আসবো কাকু বোনের বিবাহের অনুষ্ঠানে ।ভালো থাকবেন। 

(অতিথি আপ্যায়ন খাওয়া-দাওয়া  সেরে বাড়ির দিকে প্রস্তান করতে উদ্যত হল)।

হরিদাস বাডুইঃ- হারানো ওয়ালেট পেয়ে আমি আজ খুব খুব খুশি।  ভালো থেকো তোমরা। আশীর্বাদ থাকল আমার তোমাদের সকল কাজে।

Post a Comment

Previous Post Next Post