স্বরবর্ণ : কল্পনা মিত্র


 

রোজ সাতসকালে রাস্তার ধারের ফুটপাতে  টুকরো টুকরো চক নিয়ে বসে পরে  পাঁচ-ছয় বছর বয়সের ছেলেটা সঙ্গে থাকে ছড়ার বই না হলে বাঙলা স্বরবর্ণ-ব‍্যঞ্জনবর্ণের বই। কোনদিন খোপ এঁকে এঁকে  লেখে  'অ' য় 'অজগর আসছে তেরে'...'ইঁদুর ছানা ভয়েই মরে' ইত‍্যাদি কিংবা  'আতাগাছে তোতাপাখি ডালিম গাছে মৌ' প্রভৃতি নানান রকমের ছড়া। বইয়ে যেমনটি লেখা আর আঁকা থাকে ঠিক তেমন করেই সে আঁকে আর লেখে। তার মা গলির মধ‍্যের দেড় কামরার ঘরের ছোট্ট জানলার ছিটের পর্দা একটুখানি ফাঁক করে দেখে সে দৃশ‍্য। সকালে অফিস যাওয়ার তাড়া মাথায় করে বাজার করতে যাওয়ার পথে কিংবা ফেরার পথে মানুষেরা একটু দাঁড়িয়ে সেগুলো দেখে খুশী মনে এক টাকা কিংবা দুটাকার কয়েন ওর পাশটিতে রেখে যান,কখনোবা পাঁচ-দশ টাকার কয়েনও জোটে। এমনকি  ঠিকে কাজ করা মেয়ে-বৌগুলোও মাঝে-সাঝে যত্ন করে তার পাশে সিকিটা,আধুলিটা রেখে যায়। যাদের হাতে সময় থাকে তাঁরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার নিত‍্য নতুন নতুন আঁকা দেখেন আর তারিফ করেন।

প্রথম যেদিন ছেলেটা একা একা খড়ি আর বই স্লেট হাতে স্কুলে যাবে বলে বেড়িয়েছিল,সেদিন ঠিক  ওইখানেই হোঁচট খেয়ে পরে গিয়েছিল।  মা পর্দার ফাঁক দিয়ে এ দৃশ‍্য দেখেও ছেলেকে ধরে তোলার জন‍্য ছুটে যায়নি। শুধু জলভরা চোখে বিরবির করে বলেছিল,-"মাণিক,তোকে যে এখন থেকেই একলা পথ চলতে হবে। তোর হাত ধরার মতন আর যে কেউ তোর পাশে নেই সোনা।" চোখ চেয়ে সে দেখেছিল ফুটপাতে পেনসিল বাক্স খুলে ছিটকে ছড়িয়ে যাওয়া  খড়িগুলো সে উবু হয়ে বসে তার ছোট্ট ছোট্ট হাতে কুড়োচ্ছে। ছিটকে পরার ফলে তার হাতেখড়ির স্লেটটা খান খান হয়ে গেছে। রাস্তার ধূলোয় পরে থাকা খোলা বইটার পৃষ্ঠাগুলো হালকা বাতাসে তির তির করে কাঁপছে। সেদিন মাণিকের স্কুল যাওয়া আর হলোনা। ওখানেই খড়ি নিয়ে বসে পরলো। খোলা বইটার পৃষ্ঠার ছটফটানি থামানোর জন‍্য তার ওপর পাশে পরে থাকা ইটের টুকরো রেখে খড়ির টুকরো দিয়ে পথের ওপর খোলা পৃষ্ঠার ছবিখানি আঁকতে  শুরু করলো।   শ্বশুরমশাইয়ের বন্ধু প্রতিবেশী নবীনকাকা সেই পথ দিয়ে  যাচ্ছিলেন থমকে দাঁড়িয়ে বললেন -"কি রে মাণিক কি করছিস? ইস্কুল যাবি না?" ছবি আঁকতে ব‍্যস্ত মাণিক বাঁ হাতে নাক মুছতে মুছতে মাথা নেড়ে 'না'বললো। নবীন কাকু ওর আঁকা দেখে ওর মাথায়  হাত বুলিয়ে বললেন,-"আহারে,তোক দেখার জন‍্য বাবা আর দাদু কেউ রইলো না...তবে শক্তিপদরর মুখে শুনেছিলাম তুই ভারি সুন্দর আঁকিস,আজ সচক্ষে দেখলাম।" নবীনকাকু পকেট হাতরে একটা দশটাকার নোট ওর পেনসিল বাক্সে রেখে সেটা বন্ধ করে তার পাশে রেখে বললেন, -"চকোলেট কিনে খাস।" ইতিমধ্যে কিছু পরিচিত-অপরিচিত পথচারীরা  দাঁড়িয়ে পরে ওর ছবি আঁকা দেখছিলেন। নবীনকাকাকে টাকা দিতে দেখে তাঁরাও একে একে ওর পাশটিতে পাঁচ- দশ টাকার কয়েন রাখছিলেন। সুষমার দুচোখের জল বাঁধ মানছিল না।


হাতেখড়ির আগেই মাণিক অ,আ লিখেছিল। তাই দেখে তার দাদু বাড়ি মাথায়  করে বলছিলেন,-"দেখিস খোকা, এ ছেলে বড় হয়ে বিদ‍্যাসাগর হবে...! এই এতোটুকু ছেলে এতো স্পষ্ট আর পরিষ্কার করে বেশ খানিকটা স্বরবর্ণ লিখে ফেলেছে!...বড় হয়ে কি যে হবে আমি ভাবতেই পারছি না।" তারপর পুত্রবধূর উদ্দেশ‍্যে বলেছিলেন-"দেখে নিও বৌমা, তোমার ছেলে নির্ঘাত দিগ্গজ হবেই হবে।"

আজ সুষমা মনে মনে বললো,-" কি করে তোমার নাতি দিগ্গজ হবে বাবা  তোমরা তো আমাদের একা রেখে চলে গেলে। ওকে হাত ধরে ইস্কুলে নিয়ে যাওয়ার জন‍্য তোমরা কেউ রইলে না।"


বড়বাজারে খাতা লেখার কাজ করতেন স্বামী।  শ্বশুরমশাই কলেজ স্ট্রীট থেকে প্রুফ দেখার কাজ নিয়ে আসতেন। বাড়িতে বসে প্রুফ দেখার ফাঁক ফাঁকে নাতির সঙ্গে  সময় কাটাতেন। সবেমাত্র একমাস আগে এই এলাকার  স্কুলে নাতির নাম লিখিয়ে এসেছিলেন। সকালে বাবার হাত ধরে স্কুলে যেতো ছোট্টো মাণিক। ফিরতো দাদুর হাত ধরে। ছেলে যেদিন প্রথম স্কুলে গেলো, সেদিন শ্বশুর মশাইকে যেন 'কথা'য় পেয়েছিল। বলছিলেন,-"বুঝলে বৌমা তোমার ছেলে দিগ্গজ হবে। ওর মধ‍্যে ঈশ্বর প্রদত্ত গুণ আছে। কি সুন্দর করে আর কতো সহজেই বইয়ের লেখা আর ছবিগুলো আঁকে! হাতেখড়ির আগেই খড়ির টানে অ,আ,হ্রস সই,দীর্ঘি লিখে ফেলেছিল। বুঝলে বৌমা, আমার বন্ধু মৃণাল একথা শুনে বলছিল ওটা ওর  ঈশ্বর প্রদত্ত  ক্ষমতা...তাই ওই অতটুকু ছেলে স্বরবর্ণ লিখেছিল এমনকি তার সঙ্গের ছবিগুলো এঁকেছিল...কি সুনিপুণ সেই কাজ!  আমি বলি কি বৌমা, এবার তুমিও লেখাপড়ার চর্চ্চা করো। দিগ্গজের মা তুমি, ফোর ক্লাস পযর্ন্ত তোমার ইস্কুলের গণ্ডী! সেটি আর মােনে নেওয়া যাবেনা।" তারপর হেসে বলেছিলেন,-"বেশ বেশ,আমি যতটুকু বিদ‍্যে জানি তোমাকেও শিখিয়ে দোবো। প্রুফ দেখার কাজটাও শেখাবো। কলেজ স্ট্রীট থেকে বেশী বেশী কাজ আনবো, ঈশ্বরের ইস্কুল দুপুরে হলে বাপ-বেটী মিলে প্রুফ দেখবো কি বলো? পারলে তোমাকেও সঙ্গে করে নিয়ে যাবো। বই পাড়ায় নিয়ে গিয়ে পথঘাট চিনিয়ে আনবো নাহয়।" সেদিন তাঁর'কথা'য় উৎসাহ আর আবেগ ঝরে পরছিল । এরপর তিন হপ্তা পেরোয় নি, বড়বাজার আর কলেজস্ট্রীট থেকে বাপ আর ছেলে নাকি একই বাসে উঠেছিল। সেই বাসের ব্রেক ফেল হয়ে যে পথদুর্ঘটনা ঘটে তাতে দুজনের জীবন চলে যায়।  ঘরে যে যৎসামান্য অর্থ ছিল তা  ক'দিনে শেষ..সুষমার লক্ষীর ভাঁড়ও শূণ‍্য.. যেটুকু চাল-আলু ছিল হবিষ‍্যিতেই শেষ হয়ে গিয়েছিলো। পাড়া প্রতিবেশী কিছু দিয়ে গিয়েছিলেন বাহ্মণ ভোজনে তাও প্রায় শেষ। ছেলে এতদিন  ক্ষিধা কি তা বোঝেনি।...বাপ-দাদু থাকতে পেটের অন্নের অভাব হয়নি কোনোদিন। আগেরদিন যেকটা চাল ছিল ঝেড়ে-মুছে  সেটা ফুটিয়ে ভাত রেঁধেছিল। তাই তিনবেলা জলে ফুটিয়ে ছেলেকে খাইয়ে পরেরদিন সকালে বাদবাকি বাসিটুকু ওইভাবে ফুটিয়ে তাকে খাইয়ে স্কুলে পাঠিয়েছিল আর দেবতার উদ্দেশ্যে  বলেছিল,-"আজ আমাদের ছেলে বাড়ি ফিরে খাবার  পাবে না! তুমি তার সব কেড়ে নিয়েছো। তার জন‍্য একমাএ আমাকে রেখেছো।..আজ ছেলে 'খিদে কি জিনিস' তা যদি বুঝতে পারে তাহলে 'মা'হয়ে আমি তা সইব কি করে! তার আগেই আমাকেও ওর কাছ থেকে কেড়ে নাও প্রভু।"


সর্বক্ষণ ঘোমটা মাথার গৃহবধূ সে। তার শান্ত স্বভাবের জন‍্য শ্বশুর মশাইয়ের কাছে সে ছিল চোখের মণি । সর্বহারা সুষমা কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না। লোকের বাড়ি বাসন মাজার কাজ! ছেলেকে দিগ্গজ করতে হলে সেটাও করতে পারবে কিন্তু সদ‍্য সব হারানো,অতিসাধারণ, মুখচোরা মেয়েটির পক্ষে এ কাজে নামতে হয়তো একটু সময় লাগছিল । ছেলের থেকে নিজের চোখের জল আড়াল করার জন‍্য আর একান্তে পরবর্তী পদক্ষেপ  কি হবে সে সমস্ত জট পাকানো চিন্তা করার অবসরটুকু পাওয়ার তাগিদে সে  সদ‍্য নেড়া মাথা ছোট্ট ছেলেটাকে একা একা ইস্কুল পাঠিয়েছিল। যাওয়ার পথে যা ঘটলো পর্দার আড়াল থেকে সুষমা সবটাই দেখেছে। ছেলেকে 'খিদে কি' বোঝানো থেকে রক্ষা করার জন‍্য ঈশ্বরের এই কৌশলকে সে  মনে মনে প্রণাম না জানিয়ে পারে নি সেদিন। 

সেদিন পয়সাগুলো জড়ো করে পেনসিল বাক্সয় ভরে বাড়ি ফিরে ওইটুকু ছেলে তা তার মায়ের হাতের দিকে বাড়িয়ে দিয়েছিল। সুষমা ভেবে পাচ্ছিল না এইটুকু ছেলেকে সে কিকরে বোঝাবে তারই ভরণপোষণের জন‍্য আজ এই অর্থের বড় প্রয়োজন ছিল। এই ছোট্ট দুধের ছেলেটা অর্থ কি,অর্থের প্রয়োজন বা অর্থাভাব কি তা বোঝেনা,শুধু বোঝে অর্থ এনে মায়ের হাতে তুলে দিতে হয়। সে বাবা আর দাদুকে দেখেছে তারা মায়ের হাতে অর্থ তুলে দিতেন। সুষমা আঁচল পেতে ছেলেকে বলেছিল  পয়সাগুলো তার আঁচলে ঢেলে দিতে। ছেলের হাত থেকে তার প্রথম উপার্জনের পয়সা গ্রহণ করে নবীনকাকুর দেওয়া প্রথম দশটাকার নোট শূন্য  লক্ষীর ভাাঁড়ে রেখে  বাকিগুলো আঁচলে  বেঁধে নিজের  দুই চোখের জলকে অনেককষ্টে দমন করে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিল । 

পরের দিনও ছেলেকে স্কুলে পাঠিয়ে জানলার পর্দা একটু ফাঁক করে তার যাত্রাপথের দিকে চেয়েছিল সুষমা। দেখছিলো, গতকালের ঠিক ওই জায়গাতে পৌঁছে ছেলে খানিক থমকে দাঁড়িয়ে কালকের মতন বসে পরলো । তারপর খড়ি ভরা বাক্স খুলে খড়ি বের করে পাশে একটি ছড়ার বই খুলে রাখলো। দাদু কলেজস্ট্রীট গেলে মাঝেমাঝেই নানান রকম ছড়ার বই আনতেন। আর বাবা ওর জন্মদিনে বড়বাজার থেকে এনে দিয়েছিল এক বাক্স চক। স্লেটের পেনসিলের সাথে  পেনসিল বাক্সতে সবসময় সে এই চকের কিছু টুকরো রাখতো। সুষমা স্বগোক্তি করেছিলো,-"আজও স্কুলে  গেলিনা সোনা!" নবীন কাকু আজও এসে দাঁড়ালেন।বললেন,-"দাদুভাই,ইস্কুল যাবে না? "ছেলে না সূচক মাথা নাড়লো। নবীনকাকু বললেন,-"তোকে দেখলে দুঃখ হয় বাবা। শক্তিপদটা যে কেন  ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে এতো তাড়াতাড়ি চলে গেল!" নবীন কাকা একটা লজেন্স কিনে এনে ওর মুখে ঢুকিয়ে  দিয়ে বললেন,-"রোদ মাথায় পরার আগে বাড়ি ফিরে যেও কেমন।" তারপর তার মাথায় স্নেহ মাখানো হাত রেখে বললেন,-"আমার তো রোজ রোজ পয়সা দেওয়ার ক্ষমতা নেই,তাই আজ থেকে রোজ তোমাকে  একটা করে লজেন্স দেবো।" সেদিনও পথিকেরা থমকে দাঁড়িয়ে ছিলেন আর যথারীতি  তার পাশটিতে পয়সা কিংবা কয়েন রেখেছিলেন। 


 অনেক চিন্তা ভাবনার পর আজ সুষমা ছেলেকে বলে দিয়েছিল,-"নবীন দাদুকে বলবি একবার আমাদের  বাড়ি আসতে।" নবীন দাদু  মাণিকের মুখে সেই কথা শুনে এসেছিলেন। সুষমা ওনাকে আসতে দেখে দরজা খুলে ওনাকে ঘরে এনে বসিয়ে। বলেছিলো-"কাকাবাবু ছেলেটা অভিভাবকের মতন আমাকে আগলে রেখেছে...কিন্তু আমার ওকে আগলানোর কথা..। ছেলেটা ইস্কুলে যায় না,পথে বসে ছবি আঁকে! এভাবে কতোদিন চলবে! আমি ভাবছি লোকের বাড়ি কাজ করবো। আপনার সন্ধানে যদি কোনো ভালো পরিবারে কাজের লোকের প্রয়োজন থাকে বলবেন।"

নবীন কাকুর চোখে জল এসেছিলো। বলেছিলেন,-"শক্তিপদ আমার  শিশুবেলার বন্ধু। ওর নাতি আর বৌমার এই দুর্দশা মানতে পারছিনা। আমার যদি ক্ষমতা থাকতো নাতি সোনাকে মানুষ করার দায়িত্ব নিতাম। তুমি যুবতী, তুমি যে,কোনো লোকের বাড়ির কাজ করবে মন থেকে তা মানতে পারছি না। তবে তুমিও নিরুপায়...দেখি  সে রকম পরিবারের সন্ধান পেলে তোমাকে নিশ্চয়ই  বলবো।"


দিনকয়েকের মধ‍্যে নবীন কাকা এসে সুষমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন  একটি কাজের সন্ধানে। এক নিঃসন্তান প্রৌঢ়  দম্পতির পরিবারে।  গৃহকর্ত্রী বলেছিলেন,রান্না বান্না আর তাঁদের দেখাশোনা করতে হবে। রাতদিন থাকতে পারলে ভালই হয়। সুষমা এমনিতেই শান্ত স্বভাবের। নবীনদাদুকেই বলতে হয়েছিল সুষমা আর তার ছেলের দুর্ভাগ্যের কথা। এর সঙ্গে মাণিকের  ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতা আর এই দুর্দিনে সেই ক্ষমতার ব‍্যবহারের কথাও বলতে ভোলেন নি। ঘরের ভিতর বসে সমস্ত শুনছিলেন গৃহকর্তা। এবার তিনি  বেরিয়ে এলেন ঘর থেকে। ভদ্রলোক মিলিটারীতে ছিলেন।দুর্ভাগ‍্যক্রমে তাঁর শরীর থেকে একটা পা বাদ দিতে  হয়েছে। তিনি নবীন বাবুর সাথে ঈশ্বরের কাছে যেতে চেয়েছিলেন।


হঠাৎ শব্দ তুলে পা কাটা মিলিটারি দাদুর ক্রাচটা মাণিকের খড়ি দিয়ে আঁকা ছবির পাশে থামতেই চমকে তাকিয়েছিল সে। দাদুর গমগমে কন্ঠস্বরে যেন তার হারানো দাদুর স্নেহ ঝরে পরছিল। তিনি বলছিলেন, -"তোর দাদুর জায়গাটা আমাকে দিবি ঈশ্বর, আজ থেকে তোকে মানুষ করার দায়িত্ব আমি  নিলাম।" 


সেই মানিক আজ অনেক বড় হয়েছে। দিগ্গজ না হলেও চিত্রশিল্পি হিসেবে তার বিশ্বজোড়া খ‍্যাতি। অথচ হাতেখড়ি হওয়ার আগেই নাতিকে স্বরবর্ণের প্রতিটি অক্ষর পরিচ্ছন্ন ভাবে লিখতে দেখে তার দাদু নাকি বাড়ি মাথায় করে বলেছিলেন -" হাতেখড়ির আগেই আমার  নাতিবেটা সবকটা স্বরবর্ণ লিখে ফেলেছে, তোমরা দেখে নিও এ ছেলে দ্বিগ্গজ হবে!"  সেই থেকে দাদু তাকে নাকি ঈশ্বরচন্দ্র বলে ডাকতেন। এসব কথার সমস্তটাই তার মায়ের কাছে শোনা। মা বলেন -"  সেদিন ভেবেছিলাম হয়তো হবি দ্বিগ্গজ। তোর এমনই কপাল  বাস এ‍্যাকসিডেন্টে একসঙ্গে  বাপ-দাদুকে হারিয়ে তুই দরিদ্র বিধবা মায়ের দুচোখের মানিক ছাড়া আর কিছুই রইলি

 না।" মানিক ভাবে সেদিন হয়তো এটাই ছিল ওর জীবনের প্রথম আঁকা ছবি কারণ সেদিন হয়তো সে স্বরবর্ণগুলোকে বই দেখে এঁকেছিল মাত্র। তাই দিগ্গজ হওয়া তার হলো না। মিলিটারি দাদু ওর পিঠ চাপড়ে বলেন,-"নাতিবেটা, তুই তো ছবি এঁকে দিগ্বজয় করেছিস। আসলে এটাই তো ছিল তোর দাদুর ভবিষ্যৎ বাণী!"

Post a Comment

Previous Post Next Post