খিচুড়ি : সায়ন্তনী দাস ধর


           

          আজ সকাল থেকেই অঝোরে নেমেছে বৃষ্টি। জানলা দিয়ে উদাস দৃষ্টি মেলে বসে আছে কমলিনী। গতকালই এই নতুন ভাড়াবাড়িতে ছোট্ট মেয়ে সোনাইকে নিয়ে তার নতুন সংসার পাতা। ঠিকমত বাসনকোসন, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এখনও কিনে উঠতে পারেনি সে। ঘরে বাজারও সেরকম নেই। হাতে টাকাপয়সা সেভাবে না থাকলে যা হয় আর কি! 

      অমর ও কমলিনী অনেক আদরে যত্নে ভালোবাসায় গড়ে তুলেছিল এক নিটোল সুখী পরিবার। কিন্তু সবই এক লহমায় মিথ্যে হয়ে গেল! কিভাবে পারল অমর এভাবে তার বিশ্বাস নিয়ে খেলা করতে? নাঃ! এরপরে কমলিনীর পক্ষে আর এক ছাদের তলায় থাকা সম্ভব হয়নি।

        "মা, মা, কি বৃষ্টি! আজ খিচুড়ি করবে?" সোনাইয়ের কথায় ভাবনার জগত থেকে ফিরে আসে কমলিনী।

" খি...খিচুড়ি...আ...আচ্ছা সোনা।" কমলিনী চিন্তায় পড়ে যায়। অন্যমনস্কভাবে সে রান্নাঘরে ঢোকে। দেখে, ডাল তো নেই। চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসে তার। মনে পড়ে, বৃষ্টি হলেই বাবা, মেয়ে- দুজনেই বায়না ধরত খিচুড়ির, সঙ্গে অবশ্যই থাকত নানারকম ভাজা। সব ভুলে গেল অমর! নাঃ! খিচুড়ি তাকে বানাতেই হবে। চটপট হাঁড়িতে তেল গরম করে চাল দেয়; হলুদ, চিনি, নুন দিয়ে নাড়াচাড়া করে জল ঢেলে দেয়। কিছু শাক ছিল, সেটাও দিয়ে দেয়। 

          খেতে বসে সোনাই খুশিতে আত্মহারা," কি ভাল খিচুড়ি হয়েছে মা, শুধু খিচুড়িই খেতে ভাল লাগছে।" চোখের জল লুকিয়ে ভাবে কমলিনী, মেয়েটা এ-কদিনেই বড় হয়ে গেল।

Post a Comment

Previous Post Next Post