দেব্ তার গেরাম : সুনীল কুমার মণ্ডল


 

                  

আমি পুরুলার দুখা মাঝি গ,

মোর বাপ্ টো সুহাগ ক‌ইরে ডাইকত দুখুরে--- দুখু--

কেতো আদরেল লাম বটে!


হুজুর টুকু জোরে শুধান দিকি।

কী কন? চুরি!

ই বাবা! চুরি ক‌ইরব  দেব্ তার গেরাম গো,

উ টাত মোর লাতি বটে!

লাতিটরে কেউ চুরি করে হুজুর!

কী কন? কিমলে পাইছি?

সে বেবাক কয়থা।


মোর ছিলাটো ঐ পরাণ,

যেখন ইসকুলে প‌ইড়ত ,হেড মেসটর শুধায়,

"দুখারে, ছিলাটকে লজরে লজরে রাইখবি,

উহার মাথাটো খুব পোষকার"।

মাদ্ দ মিকে বিরাট পাশ দিলেক,

হেড মেসটর তাইর লেগে চাকতি পারা গলায়

ঝুলান দিছে,একটো ফুটো দিলেক।

বিদ্ দাসাগরের ফুটো।

আমি যেখন বীরসীনে ছিলম

মোর বাপ্ ব‌ইলত ইটাত দেব্ তার গেরাম বটে।

জেইনত দেবতাগো।

দেব্ তা বেবাক লেয়খা পয়ড়া ক‌ইরে ভালা ভালা

কাম করিনছে,মায়ের লেগে লদী পারানছে,

গরীব গুলানকে খাতি দিছে।আরো কেতো কাম।

ইসকুল করিনছে,মজুর মান্দারের লেগে ইতো দয়া,

ইতো বড় মন মানুষটোর!

উটাত দেব্ তাই গো।

আমি,অভাবের লেগে পাথর খায়দানে কাম ক‌ইরতে

পুরুলা চলেন যাচ্ছি।

যেখন মনটা কিমন কিমন ক‌ইরত,মনে কুনু 

তেজ লাই,তেখন হাড়িয়া খাঁয়ে ট‌ইলতে ট‌ইলতে

দেব্ তারে শুধানছি,

"ভগ্ মান মুদের কি কুছুই হবেক লাই!

আমি ঝাপসা চোখে দেইখতম,

দেব্ তা কাইনতে কাইনতে শুধানছে

"চোর ডাকাইতে দ্যাশটা ভরেন যাছে"।


তাইরপর হুজুর মোর ছিলাটো,ঐ পরাণ একটো

চাকরি পাছে।ওপিসারগো,মস্ত ওপিসার,

ক‌ইলকেতায়।


এক---- দু--- হাঁ তিন সন হবেক,

তিন সন কাটিন গিলা।

ছিলাটো লিজেই বিহা ক‌ইরলেক।

গেরামে লাচা হলেক,গানা হলেক।

ব‌উমাটো কিমন সোন্ দর !

টি বির বিটি ছিলা গুলার পারা সোন্ দর গো।

ঘুটঘুটা সনঝা বেলায় গেরামের কুঁইড়া ঘরে চান

আইসত।

পরাণ ব‌উমাটোকে লিয়ে ক‌ইলকাতায় ভাগিন গিলা।

এক সন দু সন তিন সন পারিন যাচ্ছে,

পরাণ আসেক লাই।কেতো ফুন করিনছি,কেতো

কাইনছি,তেবু পরাণ আসেক লাই।

উদিন সনঝা বেলায় দেব্ তার পাইয়ে গদগদায় 

চোখের জল ফেলানছি, বুকটো ভাসানছি,

পরাণরে --- পরাণ আয় বাপ বু‌ঢ়হা বাপটোকে

দেখান যা, ক‌ইতে ক‌ইতে ঘুমান যাছি।

একটো সপন দেইখলম,দেব্ তা মোকে একটো

রাইসতা দেখাইন দিলেক।


পুব পাড়াটোর দ‌ইত্তদের ছিলাটা ক‌ইলকাতায় থাইকে,

উহাকে বেবাক শুধালম।

এইকদিন উহার সাইতে ক‌ইলকাতায় যাছি।

ই কি ক‌ইলকাতা শ'র গো!

গাদা গাদা বাস ,টেরাক,টেকসি,কেতো নোক

ধুমধুমি পড়ানযাছে।

কেতো উচা উচা ঘর গিলান, আসমানে লাগান

যাবে যেগো! 

দ‌ইত্তদের ছিলাটা পরাণের ওপিস দেখান দিলেক।

যেই পরাণকে দেখেনছি,

বাপ‌ও কাইনদে বেটাউ কাইনদে।

সনঝা বেলায় উহার ঘরে লিয়ে গেল।

আমিতো অবাক হয়েন যাছি!

লাড়ু গপালের পারা একটো লুলু ছিলা 

পরাণকে ডেডি ডেডি শুধাইনছে।

পায়ে ঝুম ঝুম ক‌ইরে ঝুমঝুমি বাজিনছে।

পরাণটো মোরে শুধায় ,ইটো নাকি মোর লাতি বটে!

ইতো বড় ছিলা‌ হয়েন গিলা ,মোকে জানাস লাই।

লাতিটোকে দেইখে বেবাক রাগ জল হয়েন গেল।

ও মা! যেই লাতিটোকে লিব ভেবে হাইত বাড়ানছি,

বউমাটো লিতেই দিলেক লাই।

আমি নাকি নংরা।

ই কি কয়থাগো! পরাণ টোকে তাইলে মানুষ

ক‌ইরলম কিমনে।


বুকের ভিতরটয় দুম দুম ক‌ইরতে লাইগছে।

কাঁধের গামছাটো দিয়ে লুকায় লুকায় চোখের

জল মুছিনছি।

পরাণ টোকে শুধাই ,জেনতো দেব্ তার ফুটো

রাখিস লাই,

উহার লেইগে ব‌উমাটো ইমন হয়েন যাছে।


তাইরপর লুকায় লুকায়  লাতিটোকে লিয়ে রাইতের

টেরেনে দেব্ তার গেরামে যাছি।

দেব্ তার পাইয়ে লাতিটোকে দিয়ে কাইনদে

কাইনদে শুধাই,"দেব্ তা লাতিটোকে ভালা

রাইখবে ঠাকুর"।

ই বার কন্তো হুজুর, আমি কি চুরি করিনছি?।

মোর বনশের ছিলা ,জেনত দেব্ তার গেরামের

আইসবেক লাই!আশীববাদ লিবেক লাই! 

Post a Comment

Previous Post Next Post