ছায়াসুশীতল শান্ত পরিবেশে আমার গ্রামটি অবস্থিত। গ্রামের উত্তরপ্রান্ত ছুঁয়ে সােজা প্রবাহিত হয়েছে। স্বচ্ছসলিলা বিদ্যাধরী। নদীর কিনারা ছাড়িয়ে দক্ষিণ মুখে এলেই দিগন্তবিস্তৃত অবারিত মাঠ। মাঠের পুব-পশ্চিম লাগােয়া বাড়িঘরের জটলা। টালি-খড়ের ছাওয়া মাটির ঘর, দু-চারটে পাকা দালানকোঠাও আছে। এ-পাড়ায়, ও-পাড়ায় যাওয়া-আসার যােগসূত্র গাঁয়ের পায়ে-হাঁটা পথ। পথের দুধারে কোথাও বাঁশের ঝাড় কোথাও ঘেটু আশশ্যাওড়ার জঙ্গল, কোথাও হিজল, অর্জুন করঞ্জার শাখা প্রশাখায় গুলঞ্চ লতার বিস্তার, কোথাও ঝুরি নামিয়ে গ্রাম-ইতিহাসের নীরব সাক্ষী প্রাচীন বট। তাল-খেজুর-পাকুড়-অশ্বখ আছে এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। গাঁয়ের পুবদিকে আম-কাঁঠালের বাগান ‘রাখালের খেলাগেহ।
পশ্চিমে ঘরামিপাড়াকে ডাইনে রেখে নয়ানজুলির ছােটো বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে কয়েক পা এগােলেই মজে যাওয়া পদ্মদিঘি। তাহলেও দু-চারটে পদ্ম ফোটে এখনও। সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের বর্ণালি শােভা দেয় নয়ন-মন জুড়িয়ে। জ্যোৎস্নার দুধ সাগরে ডুব দিয়ে ওঠা নৈশ প্রকৃতির রূপমাধুর্যের তুলনাই হয় না। পশুপাখির বিচিত্র কলতানে ভরে থাকে গাঁয়ের প্রকৃতি-অঙ্গন। গাড়ি ডাকে হাম্বা রবে। ফুলের কানে কানে গুনগুনিয়ে কথা বলে অলি। কোকিল ডাকে মধুশ্রী পঞ্চমে। ‘ডাকে কুবাে কুব কুব লুকায়ে কোথায়। বউ-কথা-কও ডাক, চাতকের কাতর ধ্বনি, ঘুঘুর ক্লান্ত-স্বর গ্রাম্য প্রকৃতির বিশিষ্ট ধ্বনিসম্পদ।
