অন্তর্দহন : অসিত কুমার রায়



'কি নিষ্পাপ মুখটা, দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করে...' অস্ফুটে পলাশ বলে উঠে। তিথির মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে পলাশ একবার বুঝে নিতে চেষ্টা করে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন কিনা তার আদরের হিয়া। ভালোবেসে পলাশ তিথিকে হিয়া নাম দিয়েছিলো।   

     চোখটা লাল হয়ে আসছে পলাশের, শরীরটাও কেমন যেন একটু কাঁপছে। একটু পর যা যা ঘটতে চলেছে সেসব ভেবেই শরীরে এক চরম উত্তেজনা দেখা দেয়।

     

     অনেক পুরনো কথা মনে পড়ে যায় পলাশের।

'২০১৯- এর জুন মাস'- একে তো আষাঢ় মাস- প্রচণ্ড বাজে আবহাওয়া, প্যাচপ্যাচে বৃষ্টি আবার মুডটাও সেদিন পলাশের খুব একটা ভালো ছিলনা। কিন্তু কি আর করা...বাবা এতটাই জোর করলো যে যেতেই হলো।


   পলাশের মাসতুতো দাদার বিয়ে। একরকম হঠাৎ করেই ঠিক হয়েছিল। ফোনে বারবার অনুরোধ করেছে মাসি- 'দেখ বাবু, খুব চাপে আছি, বিয়ের এতো জোগাড় বাকি, তোরা সবাই আসিস। তোর দাদা নাহলে খুব কষ্ট পাবে।

      

     'সকাল থেকেই বৃষ্টি, এইসব দিনে কেউ বিয়ে নেয়?'- মা'র সামনে রাগে গজগজ করে পলাশ। ড্রাইভারটার দুদিন থেকে শরীর খারাপ, বাবাকে ডাক্তার গাড়ি চালাতে বারণ করেছে আর ভাইয়ের তো হাত এখনো পাকা হয়নি। এদিকে বিয়ের তারিখ, দুটো বাড়ির মিষ্টি সাপ্লাই করতে হবে। বাবা আর ভাই আজ দোকান সামলাবে। পলাশ ওর মা'কে নিয়ে বৌভাতের দিন বিকেলের দিকেই পৌঁছে যায় ওর মাসির বাড়ি।

  

        সন্ধ্যায় বেশ একটা সাজো সাজো ব্যাপার।

অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গিয়েছে অনেকক্ষণ, খাওয়া-দাওয়াও বেশ চলছে। কিন্তু পলাশ একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে যেন। এক মেয়ের চোখেই যেন কুপোকাত পলাশ। এ হবার ছিলোনা যদিও। পলাশ খুব মা-ভক্ত। মায়ের কাছে কথাটা বলেই ফেলে।

       

         ক'দিন পরের ঘটনা; বিয়েটা ঠিক হয়ে গেল পলাশ আর তিথির। মেয়েটা একটু লাজুক হলেও কথাবার্তা বেশ বলে। সবার মনে ধরেছে এই মেয়েকে। দেনা পাওনার কোনো ব্যাপার নেই, পলাশের বাবার মিষ্টির ব্যবসা, তেতলা বাড়ি, গাড়ি সব‌ই রয়েছে। আর তিথির বাবা গরীব মানুষ, চাষবাস করেন। তিনি ভাবতেই পারেননি যে এতো বড়ো ঘরে মেয়ের বিয়ে দেবেন।

       

         পলাশ তিথিকে কলেজে অ্যাডমিশন করায়। সদ্য হায়ার সেকেন্ডারি পাশ তিথির পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে চায়নি সে। তিথি কাজেকর্মে পটু, গরীব ঘরের মেয়ে সে, খাটুনি করতে জানে। কখনো কোনো জিনিস চাইতে হয়না ওর। দোকানদারি শেষ করে প্রায় প্রতি রাতেই কিছু না কিছু ব‌উয়ের জন্য নিয়ে হাজির পলাশ।

     

    আজকাল ফোনটা একটু বেশিই ঘাঁটতে দেখা যাচ্ছে তিথিকে। পলাশ কিছু বলে না। "জানিস পলাশদা, তুই তো দোকানে থাকিস; যখন‌ই আমি তোদের বাড়িতে দেখা করতে আসি, বৌদি ফোনটা ধপ করে রেখে দেয়। বুঝিনা, কাকে যে ফোন করে? তোকে তো নিশ্চয়ই করেনা?" বলে পাশের বাড়ির ছুটকি। "ধুর বোকা, আমার সাথেই কথা বলে, ও আসলে একটু লাজুক তো"- বলে পলাশ।

     

        ঝড় ব‌ইতে শুরু করে মনে। ছুটকিকে না হয় মিথ্যে বলে দিলো কিন্তু ও নিজেকে কি বোঝাবে? তিথি কি তবে...!!! আর ভাবতে পারেনা পলাশ।

সে এবারে একটু বেশিই কেয়ার করা শুরু করে তিথির। বোঝার চেষ্টা করে তিথিকে।

         

      একটু এপাশ ওপাশ করে তিথি। চমকে ওঠে পলাশ। "ঘুম ভেঙ্গে গেল না তো? যা করার, খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে। ও ঘুম থেকে জেগে গেলে সব প্ল্যান মাটি..." মনে মনে ভাবে পলাশ। মদ খাচ্ছে সে; বাজারের রাতুল দা বলেছিল একদিন, "দেখ ভাই, যেকোনো বড় কাজে সাকসেস পেতে সুরা পান আবশ্যক"। সত্যিই তো, মদ না খেলে ও হয়তো এতো বড় কাজ কোনোদিন করতে পারতো না। প্রায় হাফ বোতল শেষ; মাথাটা ঝিমঝিম করছে যেন। দেওয়াল ঘড়িটা ঢং ঢং করে জানান দিলো, রাত দুটো বেজেছে।

     

      ঘটনাটা দু'মাস আগের। বাড়ি যাওয়ার জন্য খুব জেদ করছিল তিথি। বিয়ের প্রায় দু'বছর হতে চললো, এর মধ্যে বেশ কয়েকবার বাপের বাড়ি গেছে ও। এবার‌ও পলাশ মানা করেনি। তিথি কে রেখে দু'দিন পর বাড়ি ফিরে আসে পলাশ। কথা ছিল, পনেরো দিন পর পলাশ তিথি কে নিয়ে আসবে।   

       "আমি এখন আসতে পারবোনা, তুমি নিতে এসো না", ফোন করে তিথি বলে দেয়। একটু রাগারাগী করে পলাশ, এরপর ফোন কেটে দেয়।

প্রায় একমাস হয়ে যায়, মেয়ে শ্বশুরবাড়ি যায়না কেন; এ নিয়ে মেয়েকে প্রশ্ন করে তিথির বাবা। উত্তর মেলে না। তিনি এরপর পলাশকে ফোন করে তিথি কে নিয়ে যেতে বললে সে ও সাত-পাঁচ বলে দেয়।


     অসহ্য লাগে পলাশের। কথা বলে সব মিটিয়ে ফেলতে চায় পলাশ। আসলে সে এই দু বছরে তিথি কে এতো ভালোবেসেছে যে ওকে ছাড়া থাকা দায়।

সাতদিন আগের ঘটনা, পলাশ সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ে ব‌উকে ঘরে ফেরাতে। জামাই এসেছে, তিথির বাবা মা খুব খুশি। তবে খুশি নয় একজন‌ই, আর সে হল তিথি নিজে। স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, শ্বশুরবাড়ি ফিরবে না সে। 

                     পলাশের ভেতরটা ফেটে যায় কষ্টে। কি দেয়নি সে তিথি কে। এতো ভালোবাসা, এতো উপহার, কোনো কিছুর অভাব রাখেনি; পলাশের বাবা-মা পর্যন্ত তিথি কে মাথায় করে রেখেছে... আর তার পরেও...!!!


  মেয়ের বাবা তো কেঁদে আকুল। কষিয়ে কয়েকটা চড় মারে মেয়েকে। জামাইয়ের পা জড়িয়ে কাঁদতে থাকে তিথির বাবা। খুব কষ্ট আর প্রচন্ড রাগ নিয়ে বাড়ি ফেরে পলাশ। বাবা-মা কে কোনো জবাব দিতে পারেনা সে,‌ কেন বাড়ির বউ বাড়িতে ফিরলো না?

  

          পরদিন সকালে ফোন যায় পলাশের কাছে। শ্বশুরবাড়ির পাশের একটা ক্লাবের কয়েকজনের সাথে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়েছিল পলাশের। তাদের‌ই একজনের ফোন, " পলাশ দা, ছেলেটার নাম সন্দীপন...তিথি দের পাশেই বাড়ি। তুমিও চেনো ওকে। কয়েকদিন দেখেছি একসাথে। একদিন ধমক দিয়েছিলাম আমরা, কিন্তু কাজ হয়নি। উলটে আমাদেরই দুটো কথা শুনিয়ে দিয়েছে তোমার ব‌উ। বলেছে, ও আমার দাদা হয়। গতকাল তুমি চলে যাওয়ার পর দুজনে মিলে আলিপুরদুয়ার  গেছিল। যতদূর জানি সিনেমা দেখেছে আর

পার্কে ও..." - কথা পুরোপুরি শোনার আগেই ফোনটা কেটে দেয় পলাশ। 

    

           আজ পুরনো আড্ডায় যায় পলাশ। ভালো ক্রিকেট খেলতো একসময়। বিয়ের পর বিশেষ আর যাওয়া হতো না মাঠে। সকাল আর রাতে দোকানে থাকতে হয়, তাই সে দুপুরের খাবারের পর সন্ধ্যা পর্যন্ত ব‌উকে সময় দিতো। অনেকদিন পর পলাশকে মাঠে দেখে ছেলেরা বেশ খুশি হয়। পুরনো অভ্যাসমতো একটা সিগারেট ধরায় ও। খেলেনি পলাশ, শুধুই একের পর এক সিগারেট জ্বালিয়ে গিয়েছে। সন্ধ্যা হয়ে আসে..."পলাশ দা বাড়ি যাবে না?" 'যা তুই, আমি একটু পরে যাচ্ছি'- অতনুকে উত্তর দেয় পলাশ।

       

         রাতে বাড়ি ফেরেনি দেখে ছেলেকে খুঁজতে বের হয় পুলক বাবু। মাঠের একপাশে শুয়ে শুয়ে কান্নার সাথে গোঙানির মতো আওয়াজ করছিল পলাশ। পুলকবাবু শিহরিত হয়ে উঠেন। দোকানের কর্মচারী রাজু আর পুলকবাবু- দুজনে মিলে ওঠায় পলাশকে। মুখ দিয়ে বিচ্ছিরি গন্ধ আসছিলো, পাশেই একটা ভাঙা মদের বোতল পড়ে আছে।

         

      পরদিন 'ঘোষ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার' খোলেনি। বাড়ির পরিবেশ থমথমে। পলাশ সবকিছু খুলে বলে ওর বাবাকে। বাচ্চা ছেলের মতো হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকে সে। অনেকদিন পর সেদিন পুলকবাবুর ফোন যায় কুমারগ্রামের সেই এঁদো পাড়ায়। "আমরা আপনার কি ক্ষতি করেছিলাম বেয়াই মশাই? আমার ছেলের জীবনটাকে নরক না বানালে‌ই চলছিলো না? কোথায় আপনার সেই গুণবতী লাজুক মেয়ে? ও আজ থেকে আমাদের বাড়ির বউ নয়। যে ছেলের সাথে মন দেয়া নেয়া চলছে, তার বাড়িতেই পাঠিয়ে দিন। খুব তো বড় মুখ করে মেয়ের গুণকীর্তন করেছিলেন..." ফোন রেখে দেন পুলকবাবু।

        

   বিকেলের দিকে একটা ফোন আসে পুলকবাবুর কাছে। জানতে পারেন, তিথির বাবা গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছেন। মারা যান নি, তবে শরীরের ২৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। নিজের মেয়ে যে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে আছে, ভাবতেও পারেননি তিনি। জামাই, বেয়াই এর কাছে লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে গেছে ওনার। এটা ছাড়া যে আর কিছুই করার ছিলোনা।

  

     প্রায় সমস্ত কথাই রাষ্ট্র হয়ে গেছিলো বাজারে। পুলকবাবুর মান-সন্মান ধুলিসাৎ। অনেক বড়ো মনের মানুষ পুলকবাবু। ছেলেকে বুঝিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাঠায় বৌমাকে ফিরিয়ে আনতে। গত পরশুদিন বাড়ি ফিরেছে তিথি। কাল রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরে পলাশ দেখে তিথি কাকে যেন ফোন করেছিল। পলাশ ঘরে ঢুকতেই মৃদু হেসে তিথি বলে, "দিদির শরীরটা ভালো নেই, ফোন করেছিল"। 

        পলাশ আজ তিথির দিদিকে ফোন করে কায়দা করে জেনে নেয় যে কাল রাতে সে তিথির কাছে ফোন‌ই করেনি। বুঝতে বাকি থাকেনা পলাশের। আজ দোকান তাড়াতাড়ি বন্ধ করেছে পলাশ। তিথির জন্য অনেক কিছু এনেছে বাজার থেকে। রাতে শুতে গিয়ে জড়িয়ে ধরে তিথি কে। পলাশের চোখের কোনে জল। আর এই জল তার ভালোবাসাকে আটকে না রাখতে‌ পারার জন্য।

  

       আগেই প্যাকেট থেকে খুলে রাখা তিথির পছন্দের 'ডেয়ারী মিল্ক সিল্ক' খাইয়ে দেয় তিথি কে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তিথির চোখ ঝাপসা হতে থাকে; গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে সে।

    

              এখন রাত তিনটে। এর মধ্যে ঘুম ভেঙ্গে যায় তিথির। ততক্ষণে পলাশ‌ও সব রেডি করে ফেলেছে। চোখ মেলে তিথি দেখতে পায় পলাশ সিলিং ফ্যানের সাথে একখানা দড়ি ঝুলিয়েছে। কথা বলতে গিয়ে তিথির শুধু গোঙানির আওয়াজ শোনা যায়। মুখে আগে থেকে রুমাল ঢুকিয়ে রেখেছিল পলাশ। ঘরের এক কোণে চেয়ারে বসে রয়েছে তিথি, ওঠার খুব চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। একটা বেশ শক্ত দড়ি দিয়ে তিথি কে বেঁধে রাখা হয়েছে। পলাশ হাসতে হাসতে তিথির সামনে যায়।

"খুব ভালোবাসি হিয়া, আমি কখনো ভাবিনি আমার সাথেও কেউ এরকম করতে পারে"- বলতে বলতে তিথির মুখের রুমাল বের করে দেয় পলাশ। ভয় পায় তিথি, কাঁপতে কাঁপতে বলে, "আত্মহত্যা করা মহাপাপ, তুমি এসব করবে না"। পলাশ শুধুই হেসে চলেছে..."ও তাই বুঝি? তাহলে আত্মহত্যা করবো না, কি বলো? আচ্ছা, আত্মহত্যা না করে শুধু হত্যা করলেও কি পাপ হবে?"

  

     একটা গন্ধ আসছিলো কিছুক্ষণ থেকে। তিথি খেয়াল করে পাশে একটা ছোট্ট ড্রাম, ওর থেকেই পেট্রোলের গন্ধ আসছে। পাশে একটা দেশলাই। ঘাম ছুটে আসে তিথির। ও ভাবতে পারেনা; "এ কি করে সম্ভব? তবে কি আমাকে বেঁধে রেখেছে পেট্রল দিয়ে পুড়িয়ে মারবে বলে? তারপর সেই দড়িতে নিজে ঝুলে পড়বে?"

   

      "বাঁচতে চাও বুঝি? তোমাকে বেঁধে রেখেছি ঠিকই কিন্তু তোমার হাত দুটো খোলা আছে। হাতের পাশের দেশলাই জ্বেলে দড়ির বাঁধন খুলে পালিয়ে যেতে পারবে; তবে সময় খুব কম।"- গম্ভীরভাবে পলাশ বলে। বাঁচার তাগিদে দিকবিদিক জ্ঞান হারিয়ে তিথি দেশলাই জ্বালে। বাঁধন খুলে যায়, তিথি দরজার দিকে দৌড় দেয়। দরজা লক্ করে রেখেছিল পলাশ; অনেক চেষ্টা করেও তিথি খুলতে পারে না।

 

   তিথির চোখে পড়ে যে দড়িতে দেশলাই জ্বেলে সে বাঁধন খুলেছে, তার একটা অংশ দাউদাউ করে জ্বলতে জ্বলতে পলাশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তিথি যখন ঘুমোচ্ছিল, পলাশ দড়ির এদিকটায় ভালো করে পেট্রল দিয়ে ভিজিয়ে নিয়েছিলো। আর দড়ির অনেকটা অংশ নিজের গায়ে বেশ করে জড়িয়ে নিয়েছিলো।


   "তিথি, আমি জানি আত্মহত্যা মহাপাপ। আমি সেই পাপের ভাগীদার হতে চাইনি। কিন্তু কাউকে হত্যা করা যে তার চেয়েও অনেক বেশি বাজে কাজ। তোমার জ্বালানো দেশলাই আজ আমার মৃত্যুর কারণ হবে; তুমি আমাকে হত্যা করলে।" বলতে বলতে চোখে জল চলে আসে পলাশের। এছাড়া পলাশের আর কোনো রাস্তা ছিল না। ভালোবেসে ঠকে গিয়ে ক্ষতবিক্ষত হয়েও আপন করে নিয়েছিল তিথি কে। কিন্তু সে আবার ঠকিয়েছে। বাবার সন্মানহানি হয়েছে।

   

      মা'র কথা মনে পড়ে পলাশের। ভাইও এখন অনেক বড়ো হয়েছে; বাবা-মা কে ঠিক সামলে নিতে পারবে...আর ভাববার সময় পায়না পলাশ। এতদিন তার অন্তর্দহন হচ্ছিলো, আজ পূর্ণ দহন হবার দিন। দেহ জ্বলছে পলাশের, চিৎকার করছে পলাশ। এ চিৎকার যন্ত্রনার হতে পারে না, এ যেন উল্লাস। চিৎকার আরও একজন করছে, কিন্তু সেটা আতঙ্কের। তিথির সামনেই জ্বলতে থাকে পলাশের পুরো শরীর... চোখের সামনে আগুনে ঝলসে যাওয়া দেখে চিৎকার করতে করতে অজ্ঞান হয়ে যায় সে। 

      

     ভোর হয়ে গেছিলো, পুলকবাবুর উপরের ঘর প্রায় পুড়ে ছাই, পলাশ আর নেই। ঝলসে যাওয়া একটা কঙ্কাল উদ্ধার করা গেছে মাত্র। সকালের দিকে ফোন আসে হসপিটাল থেকে...সামনে থেকে পলাশকে আগুনে পুড়তে দেখে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে হার্ট ব্লক হয়েছিল তিথির। মারা গেছে সে ও। 

      

       পুলকবাবুর বাড়িতে আজ অনেক কিছুর মৃত্যু ঘটলো; ছেলের, বৌমার, ভালোবাসার আর তার সাথে সাথে সম্পর্কের...

Post a Comment

Previous Post Next Post