আজ প্রাতঃস্মরণীয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - এর জন্মদিন । আমার পূজ্যপাদ পিতৃদেব স্বর্গীয় কুঞ্জবিহারী ঘোষ মশাই- এর মুখে এই মহামানবের জীবনের একটি বিশেষ ঘটনার কথা শুনেছিলাম । আজ সেটি নিবেদন ক'রে উভয়ের প্রতি প্রণাম জানাই ।
বিদ্যাসাগর তখন ' দয়ার সাগর ' রূপে জনমানসে অধিষ্ঠিত । একজন কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা সাহায্যপ্রার্থী হয়ে তাঁর গৃহে উপস্থিত ।
বিদ্যাসাগর তাঁর আগমনের হেতু জানতে চাইলেন ।
সেই ব্যক্তি দীনভাবে জানালেন -- তাঁর একটি অনূঢ়া কন্যা রয়েছে , অর্থাভাবে যার বিবাহ দিতে পারছেন না । তিনি অবগত হয়েছেন যে ঈশ্বরচন্দ্র এমতাবস্থায় অনেকের দায় উদ্ধারে সহায়ক হয়েছেন । তিনি কি এই কন্যাদায়গ্রস্তকেও কৃপা করবেন ?! তাহলে চিরকৃতজ্ঞ থাকবেন তিনি ।
নীরবে সব শুনলেন বিদ্যাসাগর ।উঠে ভিতরে চ'লে গেলেন ।
কিছু সময় অতিক্রান্ত হলো । সহসা আগন্তুক শুনতে পেলেন -- বাড়ির ভিতর থেকে উত্তপ্ত কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে ।
কণ্ঠ কার ?
স্বয়ং বিদ্যাসাগরের !
তিনি ভর্ৎসনা করছেন ।
কাকে ?
স্বীয় পত্নীকে !
কেন ?
তিনি প্রয়োজনের অতিরিক্ত দেশলাইয়ের কাঠি( সম্ভবতঃ উনন ধরাতে গিয়ে ) খরচ ক'রে ফেলেছেন ।
ভদ্রলোক আকাশ থেকে পড়লেন । এ কার কাছে এসেছেন তিনি ?! অতিরিক্ত দেশলাই কাঠি খরচের জন্য যিনি নিজের স্ত্রীকে এইভাবে ভর্ৎসনা করতে পারেন , তিনি নাকি তাঁকে দেবেন কন্যার বিবাহে অর্থসাহায্য ??
নাঃ ! ভুল শুনেছেন তিনি । এখানে তাঁর মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হওয়ার নয় ।
ভদ্রলোক উঠে নিঃশব্দে বেরিয়ে এসে প্রস্থানোদ্যম করলেন ।
এদিকে বিদ্যাসাগর ফিরে এসে পিছন থেকে ডাকছেন -- ও মশাই ! ও মশাই ! কোথায় যান ?
নিরুপায় ভদ্রলোক গুটি - গুটি পায়ে ফিরে এলেন ।
বিদ্যাসাগর অকৃত্রিম বিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করলেন -- এই যে বললেন আপনি অর্থাভাবে কন্যার বিবাহ দিতে পারছেন না ! আমি আপনার জন্য কিছু অর্থ নিয়ে এলাম ; আর আপনি চ'লে যাচ্ছেন ??
ভদ্রলোক সকাতরে করজোড়ে বললেন -- অপরাধ মার্জনা করুন । আমি ভাবলাম , আমার প্রার্থনা বোধহয় স্বীকৃত হবে না ।
বিদ্যাসাগর আরও অবাক হয়ে বললেন -- এ রকম ভাবনার কারণ ?!
ভদ্রলোক বললেন -- আপনি এইমাত্র যেভাবে মা - ঠাকরুণকে অতিরিক্ত দেশলাই কাঠি খরচ করার জন্য তিরস্কার করছিলেন , তা শুনে আমি ভরসা ক'রে উঠতে পারিনি যে আপনি আমায় টাকা দেবেন ।
বিদ্যাসাগর সদুঃখে হেসে ফেললেন । করুণার্দ্র স্বরে বললেন -- ঐ একটি - একটি দেশলাই কাঠি বাঁচাই ব'লেই এই টাকাগুলি আপনাদের দিতে পারি । অন্যথায় পারতাম না ।
পিতৃমুখনিঃসৃত মহাপুরুষের জীবনের এই কাহিনী শোনা অবধি বুকের মধ্যে গাঁথা হয়ে আছে । জীবনে তা যথাসাধ্য অনুসরণের চেষ্টা করি । কারণ -- মহাজন যেন গতঃ সঃ পন্থা ।।
