দিদিভাই ও দিদিভাই আমাতে সাজিয়ে দে না লে ! ছোট্ট তিতলির গলার আওয়াজে পিছন ফিরে রঞ্জা দেখে তার সাত বছরের ছোট বোন কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। রঞ্জা তিতলিকে শান্ত করার মতো করে বলে ওঠে আরে দাঁড়া আগে সন্ধ্যে হোক , তারপর তো সাজিয়ে দেবো। বোন তো মানতেই চায়না। তুই আমাতে আদে সাজিয়ে দে , তাপর তুই সাববি। এই নিয়ে কিছুক্ষণ সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর রঞ্জা সাজিয়ে দিতে রাজি হলে তিতলির আর আনন্দ দেখে কে ! কিছুক্ষণ পর দুই বোন সেজেগুজে ষষ্ঠীর বোধন দেখতে পাড়ার প্যান্ডেলে গিয়ে হাজির হলো। দুই বোনকে দেখে পাড়ার সবাই জিগ্গেস করে , কি রে তোরা একা কেনো ? বাড়ির বাকিরা আসবে না ? কথা শুনে আধো আধো গলায় তিতলি বলে ওঠে , ওলা আসছে তো ! শুনেই সবাই হো হো করে হেসে ওঠে।
বলা বাহুল্য তিতলি, ভালো নাম সুরঞ্জনা ভট্টাচার্য, বয়স মাত্র দুই। তার দিদি রঞ্জা , ভালো নাম নীলাঞ্জনা ভট্টাচার্য, সে কলেজ ছাত্রী। সে আবার ছোট্ট তিতলির জেঠুর মেয়ে। বয়সের ফারাক থাকলেও রঞ্জা তার ছোট্ট বোনটিকে বেশ সমীহ করে চলে। বাড়ির সবাইই প্রায় একই নিয়মেই চলে কারণ সবাই যে তার অনুগত। অন্তত সে তাই মনে করে। সেই কারণেই এতবড়ো দিদিকেও সে তার কথামতো চলতে বাধ্য করে। এতেই তার আনন্দ।
বোধন হয়ে গেলে এবার তিতলির বলে বসে আমি আলও ঠাকুল দেখতে যাবো। অগত্যা বাড়ির সবাই গাড়ি নিয়ে হৈ হৈ করে বেড়িয়ে পড়ল তিতলির কথা রাখতে। হঠাৎ করে তিতলি গাড়িতে গান ধরল ' শিশিরে শিশিরে শারদ আকাশে ' ওর আদো আদো গলায় গান টি অন্য মাত্রা পেলো। বাড়ির সবাই তো আনন্দে আত্মহারা। অনেকরাত পর্যন্ত ঘুরেও সে যেনো ক্লান্তই হয় না। শেষে বাড়ি ফেরার সময় তার আর হুঁশই নেই। কারণ সে তখন ঘুমের দেশে।
পুজোর কদিন ঠাকুর দেখা , বাইরে খাওয়া এইসব নিয়ে তিতলি বেশ আনন্দেই কটা দিন কাটিয়ে দেয়। এরপর তিতলির আসল মজা ছিল বিজয়া সম্মিলনী নিয়ে। কারণ সেখানে সে যে নাচ করবে ! সে এক অন্য উন্মাদনা তার। বিজয়ার পরের দিন অর্থাৎ অনুষ্ঠানের দিন দুপুরের খাওয়ার পর্ব মিটিয়ে এক রাউন্ড বিউটি স্লিপ দিয়ে সে মেতে ওঠে নাচের সাজগোজ নিয়ে। অনুষ্ঠানে সে 'আয় তবে সহচরী ' গানের সাথে নাচবে। এতটুকু বয়সে এত সুন্দর পারফরম্যান্স তাও আবার একা , সবাই দেখে ধন্য ধন্য করে । তিতলি নিজেও খুবই আনন্দ করেই নাচ করে। এইটুকু বয়সেই ও যে এত সুন্দর নাচতে পারে তা সত্যি ভাবা যায় না। এই আনন্দের রেশ নিয়ে সে বাড়ি ফেরে।
পরের দিন ঠাম্মির কাছে তার প্রশ্নের ঝুড়ি নিয়ে সে বসে। প্রথমেই তার প্রশ্ন , আচ্ছা ঠাম্মি দুগ্গা ঠাকুল একবার ই কেনো আছে ? বাব্বার আছতে পালে ? তাহলে আমলাও বাব্বার আনন্দ করতে পারি ! তার দ্বিতীয় প্রশ্ন, গণেশ ঠাকুলেল বউ হলো কলা বউ , কার্তিল ঠাকুর বউতে আনেনি কেনো ? এইরকম নানা প্রশ্নে ঠাম্মিকে জেরবার করতে থাকে তিতলি। ঠাম্মিও একটার পর একটা উত্তর দিতে থাকে।
শিশুমনে নানা কৌতুহল তো থাকবেই। তাই তো সে 'শিশু'। ঠাম্মির থেকে পাওয়া সব প্রশ্নের উত্তর তার মনোমত না হওয়ায় সে এবার যায় তার প্রিয় দিদিভাই এর কাছে। দিদিভাইয়ের থেকে আশাপ্রদ উত্তর পেয়ে সে আনন্দে সারাবাড়ি নাচতে থাকে। তার বক্তব্য দিদিভাই সব জানে , ঠাম্মি কিচ্ছু জানে না। আসলে নিজের প্রাণের চেয়ে প্রিয় দিদিভাইকে সবার থেকে উৎকৃষ্ট প্রমাণ করাই যে তার আসল উদ্দেশ্য। তাই তো ঠাম্মির থেকে উত্তর পাওয়ার পরেও দিদিভাইয়ের থেকে আরেকবার সব উত্তর আদায় করে নেওয়ার জন্যই যে তিতলির তার কাছে আসা সেটা রঞ্জা বেশ ভালোই বুঝতে পারে। ছোট বোনের কাছে নিজের এরকম উৎকর্ষতা , রঞ্জাকে বেশ মজা এনে দেয়। এরকম নানা মজা - আনন্দের মধ্য দিয়েই পুজো চলতে থাকে। পুজো নিয়ে বড়দের থেকে বাচ্চাদের আনন্দ সবসময়ই বেশি থাকে। তাই তো পুজো শেষ হয়ে লক্ষীপুজোর ঘণ্টা বেজে উঠলেও পুজোর রেশ কিন্তু কমতেই চায় না। এবছরের থেকেই পরের বছরের প্ল্যান শুরু হয়।
