জেনারেশন গ্যাপ : ঈশিতা ভট্টাচার্য



বাইরে  যখন বৈশাখের প্রখর দাবদাহ চলছে,  ঠিক ঘরের ভেতরেও তখন  উত্তপ্ত হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সেখানে অবশ্য অধিকারের লড়াই চলছে। পুত্রবধূ শম্পা অধিকার ছেড়ে দিতে নারাজ। অবশ্য বিপরীতে থাকা মানুষটির  ( শাশুড়ি মা ) অবশ্য কোনো বিষয়েই কোনো বক্তব্য নেই। তাঁর একটাই চাহিদা, শুধু মানসিক শান্তি। কিন্তু সত্যিই কি তা পেতে পারবেন তিনি ? সেটাই দেখার !

    কষ্টার্জিত টাকায় অনেক আশা নিয়ে ছেলে অভিরূপ কে এক এক টা গণ্ডি পার করে ইঞ্জিনিয়ার করেছেন। একটু সুখের আশায় দিন গুনেছেন মি. ও মিসেস ব্যানার্জী। ভালো পরিবারের শিক্ষিতা চাকুরীরতা মেয়েকে ঘরের বউ করেছেন। এপর্যন্ত সব  ঠিক ই ছিল। বাধ সাধলো শম্পার অধিকারের লড়াই।

       প্রথম থেকেই শম্পা নিজ অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট। যেনো এই কাজ করতেই সে এই সংসারে এসেছে।  যেনো মনে হয়, এই  সংসারে ব্যানার্জী গিন্নির কোনো ভূমিকাই কোনোকালে ছিল না। যে স্বামীকে নিয়ে শম্পার অহঙ্কারের শেষ নেই , তাঁকে তৈরী করার পিছনে মায়ের অবদানকে অস্বীকার করতে চায় সে। বাড়ির সদস্যসংখ্যা চার থেকে বেড়ে পাঁচ হওয়ায় বৌমার মনে হলো ঠাকুমা , দাদুর প্রশ্রয় তার ছেলের আরও ক্ষতি করে দিতে পারে । এই ভেবেই  আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। 

      যে আশায় বুক বেঁধে একদিন মা - বাবা   এই ' অমৃত পুরী ' বানিয়েছিলেন , এক ঝটকায় তা নরকপুরী তে পরিণত হবে তা কি সত্যিই ব্যানার্জী মহাশয়রা ভেবেছিলেন ? 

     এদিকে প্রকৃতি ঋতু পরিবর্তন করে শারদীয়াকে আহ্বান  করছে।  অভিরূপ এর ছোটবেলার কথা মনে পড়ছে তার মার । কত আনন্দই না ছিল সেই সময় ! একমাত্র ছেলেকে নিয়ে তাঁদের গর্বের শেষ ছিল না। ছেলেও তো ছিল গর্ব করার মতোই। যেমন পড়াশোনায় , তেমনি ব্যবহারে। আদর করে ছেলেকে কখনও অভি , কখনও রূপ বলে ডাকতেন। মনে পড়ে গেলো , সেবারের পুজোয় ' শিমলা ' বেড়াতে  যাওয়ার ঘটনা।  সেই প্রথম এতদূরে ভ্রমণ। শিমলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য আজও তাঁদের মনে পড়ে যায়। সে সবই এখন স্মৃতি এবং তা বড়ই বেদনার।

       বয়স্ক মা - বাবাকে একা রেখে শম্পা ও অভিরূপ যেনো বেশ নিশ্চিন্ত আছে। কারণ তাদের সাথে যে শম্পার মা - বাবা আছেন!  এ যে পরম পাওয়া !! নিজের মা - বাবার জায়গায় শ্বশুর শাশুড়ি থাকবে , এতো ছেলেদের কাছে ' মেঘ না চাইতেই জল ' ।

    এদিকে ব্যানার্জী বাবু গত হয়েছেন। পারলৌকিক কাজকর্ম মিটে গেলে ছেলে - বৌমা স্বস্থানে ফিরেও গেলো। মা - র একাকিত্ব ঘোচানোর, তাদের অন্তত কোনো দায় নেই। সুখ দুঃখের স্মৃতি আঁকড়ে একা বসে আছেন  তাদের মা । ছেলেকে সমাজে যোগ্য জায়গা দিয়েছেন যে মা , আজ সেই ছেলের মনেই মার আর কোনো জায়গা নেই। কি অদ্ভুত ব্যাপার না ? 

      পুত্রবধূ শম্পাও  ভুলে গেছে  যে,  সে নিজে ঠাকুমা - দাদুর প্রশ্রয়ে ও একান্নবর্তী পরিবারে  বড় হয়েছে । তার ছেলের বেলায় ঠাকুমা - দাদুর জায়গায় দিদিমা - দাদু জায়গা পেলো। মা যখন কোনো কিছুতেই নেই , তবে জোর করে কিসের  অধিকারের লড়াই ? এই শ্বশুর - শাশুড়ি যখন অভিরূপ এর মতো এত যোগ্য ছেলে তৈরী করতে পারে , তবে নাতির বেলায় তার অন্যথা হবে , এই চিন্তাই বা কেনো বৌমার  মাথায় এলো ? এই সব ই কি  তাদের মনের বিকার নাকি ' জেনারেশন গ্যাপ '।




 

Post a Comment

Previous Post Next Post