সেই হাসি : কল্পনা মিত্র


আজ সুস্মিতার হাসিটা দূর থেকে দেবাঞ্জন প্রাণ ভরে দেখলো। কতদিন এই হাসিটা এমন করে দেখা হয় নি। এককালে এই হাসি দিয়েই ওর মনে জায়গা করে নিয়েছিল সুস্মিতা। আর আজ এতো কাছাকাছি  থেকেও এই হাসিটা তেমন করে দেখাই হয় না নাকি হাসি দেখতে ভুলেই গেছে সে কিংবা ওর এই হাসিটাকেই বেমালুম  ভুলতে বসেছে! ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে ছিল গাড়িটা। ড্রাইভারের সিটে কুশল। কুশলের গাড়ি। কুশলের এক ধাক্কায় ওর দৃষ্টি বিঘ্নিত হলো।"কি দেখছিস মোহিত হয়ে?" সাময়িক বিরতির পর আবার সে "আ‍্যাঁ"বলে ফিরে  দেখতে গিয়ে দেখতে পেলো না সুস্মিতাকে। দেখলো এক রূপবান ছেলেকে। ছেলেটাও কথা বলতে বলতে  হাসছে। তাহলে এই ছেলেটার সঙ্গেই কি সুস্মিতা কথা বলছিল! অন্য মানুষগুলোর আড়ালে ওকে আর দেখা যাচ্ছেনা।



"হুশ্ করে পাশ দিয়ে ব্ল‍্যাক কালারের মার্সেডিসটা বেড়িয়ে গেল পেছনের সিটে সেই ছেলেটা না! আর তার পাশে গোলাপি....হ‍্যাঁ হ‍্যাঁ সুস্মিতা! গোলাপি রঙ্গের কুর্তিটাই তো পরেছিল আর এটা ওকে মা বিয়ের আগে গিফ্ট হিসেবে ওর হাতে পাঠিয়েছিলেন! "




 -"তুই যা,আমি নামছি। আমার এখানে  একটু কাজ আছে।" সিট্ বেল্ট খুলতে খুলতে বললো দেবাঞ্জন আর কুশল কিছু বলার আগেই গাড়ির দরজা খুলে নেমে গেল সে। -"আরে এখানে  নামছিস কেনো..এখুনি সিগন্যাল  ছেড়ে দেবে.." নাঃ কোন উত্তর দিলো না, গাড়িগুলোর ফাঁক ফোঁকর দিয়ে ততক্ষণে চোখের আড়ালে  চলে গেছে  দেবাঞ্জন। গাড়িগুলোকে পাশ কাটাতে কাটাতে দেবাঞ্জন দেখলো নির্দ্দিষ্ট জায়গা থেকে অনেকটাই পিছিয়ে এসেছে। হুশ্ করে পাশ দিয়ে ব্ল‍্যাক কালারের মার্সেডিসটা বেড়িয়ে গেল পেছনের সিটে সেই ছেলেটা না! আর তার পাশে গোলাপি....হ‍্যাঁ হ‍্যাঁ সুস্মিতা! গোলাপি রঙ্গের কুর্তিটাই তো পরেছিল আর এটা ওকে মা বিয়ের আগে গিফ্ট হিসেবে ওর হাতে পাঠিয়েছিলেন! সুস্মিতার সাহস তো কম নয় মায়ের দেওয়া পোষাক পরে নোংরামি করছে! 

      -"দেবাঞ্জন এই দেবাঞ্জন" চমকে চোখ তুলে সামনের দিকে তাকালো দেবাঞ্জন। একমুখ হাসিতে উজ্জ্বল মুখ নিয়ে একটা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে সুস্মিতা হাত নাড়ছে আর এক হাতে অনেকগুলো প‍্যাকেট ঝুলছে। হ‍্যাঁ,সেই গোলাপি কূর্তিটাই তো পরনে। তবে মুখের ওই মনোমুগ্ধকর হাসিটা এখনো হাসছে!দেবাঞ্জন এগিয়ে গিয়ে কাঠ কাঠ গলায় প্রশ্ন করলো-"এখানে কি কোরছো?" উচ্ছসিতা সুস্মিতা, -"প্রচুর শপিং করলাম।" হাতের প‍্যাকেটগুলো উঁচু করে ওর সামনে ধরলো। 

      --" কার সঙ্গে ? হুম! আমি  দেখেছি...। তা সে সবটাই কিনে দিলো নাকি?"

 -"তুমি দেখেছো আমার সঙ্গে কে ছিল! তাহলে ডাকলে না কেন? অনেকদিন পর একটু মজা হতো।" সে কথার  উত্তর না দিয়ে দেবাঞ্জন আবার  প্রশ্ন করলো -"সেই কি সব কেনাকাটা  করে দিল?"

 --"কাম্ অন দেব, আজ আমার অ‍্যাকাউন্টে স‍্যালারি ঢুকেছে আর আমি কিনবো না! সিরিয়াসলি বলছি, বহুদিন পর এমন মজা করে কেনাকাটা করলাম অ-নে-ক দিন পর।"

 দেবাঞ্জনের নিরুত্তাপ উত্তর -"হুম সঙ্গে যদি মনের  মতন মানুষ থাকে তখন এমনই মজা লাগে।"

      --"ঠিক বলেছো।" 

-"তা সে কোথায় ?"

-"আসছে...একটু প্রাইভেট কেনাকাটা করছেন। তাই ওয়েট করছি। তা তুমি এইসময় এখানে কি করছো? এই মার্কেট প্লেসে?" 

-"প্রাইভেট মানে? তোমার জন‍্য গিফ্ট কিনছে বোধহয়। সারপ্রাইজ গিফ্ট নিশ্চয়?"

-"মে বি..! কিন্তু তুমি এখানে কেন এ সময়...অফিস যাওনি?"

--" ইনসপেকসানে বেড়িয়েছিলাম, কুশলের গাড়িতে, নেমে পরলাম " 

-""এখানে  কেন? "

-হুম্, তোমায় দেখে।"

-"বাঃ! কই ডাকলে নাতো আমাকে...!"

-"এমনি.."

-" ফিরবে আমাদের  সঙ্গে ?" 

-"এ‍্যাঁ!"

--"বলছি ফিরবে? ওঃ নো , এখন ফিরো না প্লিজ..এখনো আমাদের অনেক কাজ বাকি প্লিজ আর একবার অফিস যাও প্লিজ।"

দেবাঞ্জন মনে মনে বললো "হ‍্যাঁ,সে তো তোমার  অনেক কাজ বাকি বুঝতেই পারছি..সে গেছে গাড়ি  হাঁকিয়ে তোমার জন‍্য সারপ্রাইজ গিফ্ট কিনতে তারপর ফিরে তোমায় নিয়ে হয়তো লাঞ্চটাও সারবে।" মুখে বললো -" আজ তোমার কল্ ছিল না নাকি আজ ডিউটি অফ রেখেছো?" 

-"হ‍্যাঁ,আজ এই শপিং  করতে বেরোলাম বলে মেইল করে জানিয়েছি আজ ইভনিং এর আগে নো কল্ , নো ডিউটিজ্।"

পেছনের  দোকানটা যে কেক-প‍্যাস্ট্রির দোকান ছিল সেটা এতোক্ষণ খেয়াল করেনি দেবাঞ্জন। দোকানের কাঁচের দরজা খুলে গেল। বিরাট একটা কেকের ব‍্যাগ হাতে মা বেড়িয়ে এলো।

"বাবাঃ! মা কি করেছো এত্তোবড়...! তাই আমাকে বেড়িয়ে  আসতে বল্লে! জানতে আমি কিনতে দেবো না...।" সুস্মিতা এগিয়ে  গিয়ে মায়ের হাত থেকে ব‍্যাগটা নিল।

মা ছেলেকে দেখে বললেন- " ওঃ! তোকেও  ডেকেছে  বৌমা ?" দেবাঞ্জন কিছু  উত্তর দিতে যাচ্ছিল সুস্মিতা তার আগেই  বললো, -" না না ও তো অফিসের কাজে বেড়িয়েছিল..কুশলের গাড়িতে আমাদের দেখে নেমে পরেছে, এখুনি ক‍্যাবে করে অফিস ফিরে  যাবে।"

-"তা যায় যাক। বাড়ি ফিরে  লাভ নেই, আজ আমি আর বৌমা বাইরে লাঞ্চ করবো। তুই কি আমাদের সাথে খাবি?"

-দেবাঞ্জনের ইচ্ছে করছে নিজের গালে কষিয়ে  একটা চড় মারতে। মুখে বললো - "নাঃ,তোমরা তো আমাকে আর সাথে ডাকোনি। আমায় এখুনি অফিস  ফিরতে হবে।'

অন‍্যদিনের চাইতে একটু আগেই আজ বাড়ি ফিরলো দেবাঞ্জন। মনে খুব ইচ্ছে আজ মা আর বৌয়ের সঙ্গে  সময় কাটায়। দুপুরের নিজের  ভুলের জন‍্য সারাটাদিন নিজেকে ধিক্কার দিয়েছে সে। আজকের  ঘটনা তাকে সত‍্যি চমকে দিয়েছে। মায়ের সাথে সুস্মিতা..!ভাবা যায়না! তারপর আবার একসঙ্গে শপিং !  সেখানেই  শেষ নয় মায়ের বাইরে লাঞ্চ করা! আর সবচাইতে আশ্চর্য সুস্মিতার সেই প্রাণবন্ত মিষ্টি হাসি তাও আবার মায়ের সাথে ঘনিষ্ঠ   মেলামেশার পরিপ্রেক্ষিতে! এতো আশ্চর্য এই জীবনে কোনদিনও হয়নি সে। আজ ঘুম ভেঙে প্রথম কি দেখেছিল,কার মুখ দেখেছিল, অনেক ভেবেও মনে করতে পারলো না।

বসার ঘরে একটা নয় দু দুটো ফ্লাওয়ার ভাসে নানান রঙের গোলাপের সমাহার। গোলাপ সুস্মিতার প্রিয় ফুল আজ বেড়িয়েছিল তাই হয়তো সাধ মিটিয়ে কিনেছে ফুলগুলো। রান্নাঘর থেকে মিষ্টি গন্ধ আসছে, মা কিছু রাঁধছেন, উঁকি মারতে গেলে মা ঢুকতে দিলেন না বরং হাতে একটা মুড়ি চানাচুর মাখা বাটি ধরিয়ে দিয়ে বললেন,- " বৌমা ডাইনিং টেবিলের ওপর ফ্লাস্কে চা করে রেখেছে,পাশেই কাপ আছে ঢেলে খেয়ে নিস। বৌমার কল চলছে।" 

আধঘন্টার মধ‍্যে রান্নাঘরে কথা কাটাকাটি শুনে এগিয়ে গিয়ে আড়ালে দাঁড়াল দেবাঞ্জন। সুস্মিতার গলা -"তাই বলে তুমি হলুদ কেন দিলে?"

"কেন কি হয়েছে?"

-"পিজ্ পোলাও-এ কেউ হলুদ দেয়?"

-"আমি তো বাসন্তী পোলাও -এ হলুদ-ই দি বৌমা'

-"আমি দুধে জাফরান ভিজিয়ে রেখেছিলাম-"

-"বেশ করেছো,আমাকে তো আর বলোনি"।" মায়ের বক্র উত্তর।

-"বলছি তো বলতে ভুলে গেছি তোমাকে, তা বলে তুমি হলুদ দেবে! জানতাম না।"

-"যাও তো,আমাকে রান্না শেখাতে এসেছে-হুঃ!"

-"যাচ্ছি আর আসবো না একটা ভালো রান্নাকে দিলে তো মাটি করে আবার চেঁচাচ্ছো--"

-"যাও -যাও সব ব‍্যপারে শাশুড়ির ওপর দিয়ে যাবে  হুঁঃ!" মা গজগজ করছেন আর সুস্মিতা বেড়িয়ে আসছে। ঝট করে দেবাঞ্জন ড্রইং রুমে  ঢুকে টিভি চালিয়ে বসলো। ' সুস্মিতার সবটাতেই বাড়াবাড়ি! এই গরমে মা ঘেমে নেয়ে রান্না করছে আর ওনার কোন কৃতজ্ঞতা বোধ নেই! মা না হয় দিয়েইছে হলুদ। মা কি করে জানবে এসব? তুমি চাকরি করো তাই পয়সা খরচ করে জাফরান কেনো! তোমার তো অজানা নয় বাবা মারা যাওয়ার পর ছোট্ট আমাকে মা কতো কষ্টে মানুষ করেছেন। একটা  প্রাইভেট  স্কুলের সাধারণ ক্রাফট টিচার ছিলেন। সুস্মিতা, তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে মাকে কষ্ট পেতে দেবেনা। যদিও অফিস চেন্জ করে এখন ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছো তবুও যাই বলো, বড্ড নাক উঁচু তোমার,  একটুও মানিয়ে চলতে পারোনা। তাই কারোও সাথেই তোমার পটে না।" টিভির সামনে বসে মনে মনে দেবাঞ্জন সুস্মিতার ওপর ক্ষোভ ওগলাতে লাগলো। 

 তাদের ঘরে মা সুস্মিতার সঙ্গে কি নিয়ে কথা বলতে এলেন আবার ! নিজের ঘরে উঁকি মারলো দেবাঞ্জন।

 -"বৌমা পোলাওটা খারাপ হলো তো?"

-'কেন কি হলো মা!"

-"ওই যে হলুদ দিলাম ..."

-"না মা, তুমি যখন গা ধুতে গেলে আমি চুপি চুপি টেস্ট করেছি। এক্সেল‍্যান্ট হয়েছে, দারুণ  হয়েছে পোলাওটা,এক্কবারে আমার মায়ের মতন!" মায়ের গালটা টিপে সুস্মিতা বোল্লো,-" তোমার  রান্না সুপার।"

-" আর ওই যে দুধে ভেজানো জাফরানটা যে নষ্ট হলো....।"

- "না না আমি ওটা রসমালাইয়ের ওপর ছড়িয়ে  দিয়েছি। ডোন্ট ওয়ারি!"

- "এবার চলো বৌমা।"

-" না মা প্লিজ,আর পার্লারে যাবো না। তুমিও ক্লান্ত আমিও ক্লান্ত....তুমি নাহয় আমাকে আজ নিজের হাতে সাজিয়ে দাও তাহলেই হবে। দাাঁড়াও,আগে তোমার দেওয়া সাড়িটা পরে ফেলি।"

--"দূর! আমি  কি সাজাতে পারি! উঁউউ, ঠিক আছে আজ আমি তোমার চুলটা বেঁধে দেবো। আমাদের আমলের কিন্তু।"

কিছুক্ষণ পরে মা এসে দেবাঞ্জনকে ডাইনিং রুমে ডেকে নিয়ে  গেলেন। এখানেও ফ্লাওয়ারভাসে গোলাপ ফুল এটা তো আগে ছিলনা! টেবিলে  ট্রেতে বড় একটা কেক তাতে লেখা 'বৌমার শুভজন্মদিন' ।চমকে উঠলো দেবাঞ্জন চার বছরের প্রেমে এই ভুল তো কখনও হয় নি যা মাত্র নয় মাসের বিবাহিত জীবনে হলো! মোবাইলের রিমাইন্ডারে সেভ করা ছিল তো! দেবাঞ্জনের মনে পরলো  হানিমুনে গিয়ে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় ওরা যখন কাঠ জ্বালিয়ে আগুন পোয়াচ্ছিল তখন টুক করে জামার বুক পকেট থেকে ফোনটা দাউ দাউ আগুনে পরে গিয়েছিল। সেই রাতেই হোটেলে ফিরে সুস্মিতা অনলাইনে অনেক বেছে এই দামি ফোনটা কিনেছিল ওকে গিফ্ট করার জন‍্য। কলকাতায় ফিরেই ফোনটা হাতে পেয়েছিল দেবাঞ্জন।  বিয়ের পর ওই হানিমুন পর্যন্ত সুস্মিতাকে ভালোবাসার চোখে দেখেছিল সে কারণ ফিরে আসার পরপরই শুরু হয়ে গিয়েছিল শাশুড়ি বৌমার  লড়াই।

বিয়ের পর পর বাড়ি ভর্তি আত্মীয় স্বজন থাকার কারণে সুস্মিতাকে কোন কাজ করতে দেওয়া  হয় নি। অষ্টমঙ্গলের পরই ওরা হানিমুনে গিয়েছিল। বেশিদিনের জন‍্য নয়। অফিস থেকে আর ছুটি বাড়ানো সম্ভব হয়নি। সেই কয়টা দিন বেশ আনন্দে কেটেছিল। ফোনটা নষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে  সুস্মিতা নতুন ফোনটা গিফ্ট করাতে মনটা খুশী খুশী ছিল। ঝঞ্ঝাট বাড়লো বাড়ি  ফিরে আসার পর। বিয়ের পর ফাঁকা বাড়িতে এই প্রথম মা,দেবানঞ্জন আর সুস্মিতা। সুস্মিতা আরামপ্রিয় মেয়ে নয়, সে সবসময় শাশুড়ির হাতে হাতে কাজ করছিল। অফিসেও বেরোতে হবে তাই তাড়া আছে। দেবাঞ্জন আর সুস্মিতা একসাথে যাবে,যেখানে দুজনার গন্তব‍্যস্থল ওই সল্ট লেকেই তখন আলাদা যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠেনা। বিয়ের পরে শাশুড়ির সেবা খাওয়ার মানসিকতা সুস্মিতার কখনই নেই তাই বিয়ের আগে থেকেই ওয়ার্ক ফ্রম হোম করার সুবিধা পাবে এমন কোম্পানিতে ইনটারভিউ দিচ্ছিল। দেবাঞ্জনকে বলেছে ' দুজনেই  বেরোবো আর সন্ধ‍্যের পর অফিস থেকে একসাথে ফিরবো! তোমার মা তার জন‍্য সকালেও ব‍্যস্ত হবেন আবার ফিরলে চা জলখাবার এগিয়ে দেবেন সেটা করা যায় না, তাছাড়া, ওনার বয়স হয়েছে সারাদিন ওনাকে একলা রাখাও উচিত নয়। তাই ভাবছি এ চাকরিটা ছাড়বো। যেখানে  ওয়ার্ক ফ্রম হোমের সুবিধা পাবো সেই অফিসেই জয়েন করবো।  সেদিন বিপদটা ঘটলো আচমকা। রান্নাঘরে মাছ ভাজতে ভাজতে এসে ডাইনিং টেবিলে রাখা জগ থেকে জল ঢেলে খলো সুস্মিতা। দেবাঞ্জন বাথরুম থেকে শুনতে পেলো মা চেচাচ্ছেন -"ও কি! মেয়ে, তুমি হাত না ধুয়ে জাগে হাত দিলে যে বড়ো !"

--"হ‍্যাঁ তাতে কি হয়েছে ! তেষ্টা পেয়েছে তাই জল খেলাম।"

--"তাই বলে হাত না ধুয়ে! তোমার মা তোমাকে  কিছু শেখান নি। এর পর সুস্মিতা কি যেন উত্তর দিল.. সেটা ঠিক বুঝতে পারলো না দেবাঞ্জন।

সুস্মিতা একজন শিক্ষিতা চাকুরীজীবি  মেয়ে হঠাৎ সেই মান্ধাতা আমলের শাশুড়িসুলভ ভাষা শুনে বেশ আহত হলো। মনে মনে বললো "নেহাৎ নতুন বৌ বলে আজ কিছু বললাম না পরেরবার বলার সময় একটু ভেবে বোলো না হলে..।" দেবাঞ্জন এই সময়টা মায়ের মুখোমুখি  না হওয়ার চেষ্টায় বাথরুমের দরজা নিঃশব্দে ফাঁক করে উঁকি মেরে দেখে তবে নিজের ঘরে যাওয়ার  সাহস পেলো। আবার  কিছু একটা ঘটলো! কিন্তু কি ঘটলো তখন মা বললেন না, শুধু বললেন "অফিস থেকে ফিরলে বলবো।" তৃতীয় ভুলটা অফিস বেরোনোর মুখে ঘটলো। অফিস যাবে বলে জুতোর তাক থেকে জুতো নামিয়ে বাথরুমের বেসিনে হাত ধুয়ে এলো সুস্মিতা তারপর জুতোটা পায়ে গলিয়ে যে চটিট ছেড়েছিল সেটা হাতে করে তাকে তুলে অফিসের জন‍্য বেরোনোর উদ‍্যোগ নিতেই মা বললেন,-" হ‍্যাঁ গো মেয়ে, তুমি কি জুতো মাথায় করে ঘোরো?" সুস্মিতা অবাক হয়ে বোল্লো -" কি করলাম আমি?"

ব‍্যস শুরু হয়ে গেলো শাশুড়ি বৌমার বাক্ যুদ্ধ। তিতিবিরক্ত হয়ে দেবাঞ্জন একলাই অফিসমুখী হতেই মায়ের এক ধমকানিতে সুস্মিতা দেবাঞ্জনের পেছন পেছন বেরিয়ে গেল। অফিস থেকে ফিরে ওরা দুজনেই চেঞ্জ করে ড্রইংরুমে এসে বসলো। দেবাঞ্জন একটু অবাক হলো। অফিস থেকে ফিরলে মা এতোদিন কিছু না কিছু জলখাবার এগিয়ে দিতেন আজ দিলেন না। সুস্মিতা দেবাঞ্জনকে জিজ্ঞেস করলো "চা খাবে?" মা ধমকে উঠলেন -"তুমি রান্নাঘরে একদম ঢুকবে না।" দুজনেই  চমকে উঠলো। মা বললেন -"জানিস বাবা, আজ আমার  ভাত খাওয়া  হয়নি। অফিস যাওয়ার আগে সে কথাটা বলতে পারিনি। ভাত খেতে খেতে বৌমা উঠে ভাতের হাড়ি থেকে তোকে আবার ভাত দিল।" দেবাঞ্জন বললো -"আমি চেয়েছিলাম তাই...।"

-."কেন আমাকে তো বলতে পারতিস,আমি দিতাম।" সুস্মিতা বললো আমি কাছে ছিলাম তাই দিয়েছিলাম, কি হয়েছে তাতে?" মা ওর কথার উত্তর না দিয়ে ছেলেক বললেন-"ভাতের হাঁড়িটাকে মাছ,পেঁয়াজের ছোঁয়া করে দিল।" মায়ের গলা কান্নায় বুঁজ এল,

--"ওই ভাত আমি কি করে খাই বল্?"

সুস্মিতার উত্তর-"আমি তো এঁটো হাতে দিইনি আমি বাঁহাতে দিয়েছিলাম, তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে দেবাঞ্জন।"

-" ভাত খাওয়ার সময় বাঁহাতে গ্লাসের জল খেলে চুমুক দিয়ে,আমি দেখেছি।"

- - "আ‍্যাঁ" সুস্মিতা বাক‍্যহারা। মা চোখ মুছে গলা চড়ালেন - "বাবা, এই মেয়েটা যে বাঙালি  হিন্দু  ঘরের মেয়ে সেটা বিশ্বাস করতে পারছি না...কিছুই শিখে আসেনি নাকি কিছুই শেখানো হয়নি কে জানে।" দেবাঞ্জন বুঝতে পারছে সুস্মিতা অপ্রস্তুতে পরেছে। প্রশ্ন করলো "কি খেলে দুপুরে?"

-"চিঁড়ে দই"।সুস্মিতা বললো "মা আমি তোমাকে একটু লুচি আলুর দম করেদি এবেলা।"

--"না তোমাকে রান্না ঘরে ঢুকতে হবে না বাপু, ওই দিকটা আমি এতোদিন সামলেছি আজও সামলাবো।" সূুস্মিতা বললো,-" আমি শুতে গেলাম। খেতে ডেকো না।" মা গম্ভীর  গলায় বললেন "যা যা লাগবে বোলো আমি এগিয়ে  দেবো। আমারটা শেষ হলে তোমাদের রাতের খাবার গরম করে নিয়ো। বাবা, তোরাও নাহয় দুটো করে গরম লুচি জলখাবারের মতন খেয়ে নিস।" সুস্মিতা মায়ের  সাথে রান্নাঘরে চলে গেল। রাতের খাওয়া দাওয়া কাজকর্ম সেড়ে সুস্মিতা সেদিন নিজের ঘরে ঢুকলো অনেক পরে। তারপর ফোনে নিজের বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে ব‍্যস্ত হলো। তাঁরা ঠিক মতন ওষুধ খাচ্ছেন কিনা, আজ কি কি রান্না হলো, কাজের মাসী ঠিকমতো আসছে কিনা, কে কে এসেছিলেন এর মধ‍্যে, কে কি বললেন ইত্যাদি ইত্যাদি কথা বলতে বলতে সারাদিন পরিশ্রান্ত সুস্মিতার চোখে ঘুম ঢলে এলো। দেবাঞ্জন ভেবেছিল সুস্মিতাকে অনেক কিছু বলবে..বোঝাবে...মায়ের মতন চলার অনুরোধ করবে কিন্তু শুয়ে থাকতে থাকতে আর অপেক্ষা করতে করতে  সুস্মিতার আগেই সে ঘুমিয়ে পরলো।

পরেরদিন সকালেও সুস্মিতা ব‍্যস্ত হাতে মাকে সাহায্য করতে গিয়ে কিছুনা কিছু ভুল করলো। এই ভাবে দিনের পর দিন মায়ের চেঁচামেচি আর সুস্মিতার তর্ক  বাড়তেই লাগলো। রোজ অফিস থেকে ফেরার পর মায়ের সকালে ঘটে যাওয়া কর্মকাণ্ডের নালিশ আর সব শেষে একই কথা -" বাঙালি হিন্দু ঘরের মেয়ে কি করে হলো! কোন শিক্ষা নেই।" এই আফশোষ চলতেই থাকলো।  

নিজের বাবা- মায়ের প্রতি কর্তব্য করার জন‍্য প্রতি উইকএন্ডে সুস্মিতা একাই বাপের বাড়ি যেতো। দেবাঞ্জন মাকে একলা রেখে যেতে চাইতো না। সুস্মিতাও এই অন‍্যায় আব্দার করতো না।সেই কটা দিন মা একা হাতে ছেলের যত্ন নিতেন আর কথায়  কথায় বলতেন "এই বৌ নিয়ে সংসার করা অসম্ভব।" এরই মধ‍্যে সুস্মিতা সেই চাকরি ছেড়ে বাড়িতে বসে কাজ করার সুবিধা থাকার চাকরি ধরলো। দেবাঞ্জন ভেবেছিল অফিস বেরোনোর তাড়া কেন্দ্রিক ঝামেলাগুলো এবার বোধহয় মিটবে কিন্তু  না ঝামেলা বরং বাড়লো। এতোদিন মা একাই বলতেন -"এই বৌ নিয়ে সংসার করা অসম্ভব।" এখন সুস্মিতাও সোচ্চারে মায়ের সামনে বলতে শুরু করেছে "এই বাড়িতে আমার থাকা অসম্ভব,দেবাঞ্জন, তুমি থাকো আমাকে ছেড়ে দাও, আমি চলে যাবো।" এই তো গত সপ্তাহে কি তুলকালাম কাণ্ড! সুস্মিতা বলে "চলে যাবো।" মা বলেন -"তাই যাও, তোমাকে এখানে  থাকতে হবে না। আমি আমার ছেলের আবার বিয়ে দেবো,তুমি দূর হও তো তাড়াতাড়ি।" দেবাঞ্জন ভাবে সেই হানিমুনের মিষ্টি  দিনগুলোর কথা সে ভুলে গেছে কবেই। আজ এই অশান্তিতেই সে অভ‍্যস্ত হয়ে পরেছে। এরমধ‍্যে শুধুমাত্র কটাদিন তারা পরষ্পর রাতের অন্ধকার ঘরে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে ঘনিষ্ঠ  হয়েছে সেটা হাতে গুণে বলতে পারবে সে। 

পোলাওটা মুখে দিয়ে দেবাঞ্জনের মনে হলো হলুদের গন্ধ পাচ্ছে কিন্তু সুস্মিতা প্রশংসায় পঞ্চমুখ। মা নিজের হাতে সুস্মিতাকে পায়েস খাইয়ে দিলেন।সুস্মিতা প্রণাম করলে তাকে বুকে জড়িয়ে চিরসুখী হওয়ার আশীর্বাদ করলেন। দেবাঞ্জনের সবটাই  ম‍্যাজিক মনে হচ্ছে! কখনও মনে হচ্ছে সে ভুল দেখছে। সুস্মিতা আজ কি সুন্দর একটা জংলা ছাপা পিওর সিল্কের সাড়ি পরেছে! মা কি সুন্দর চুল বেঁধে দিয়েছেন, যদিও পুরনো দিনের স্টাইল তবে আজকের দিনে ওই স্টাইলটা অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। মাকে কখনো এতো সুন্দর করে নিজের চুল বাঁধতে দেখেনি দেবাঞ্জন। আজ মনে হলো মাও তো এককালে বাবাকে বিয়ে করে নতুন বৌটির সাজে সেজেছিলেন। মাও এককালে  যুবতী ছিলেন।  মায়ের হাসিতেও আজ সে উচ্ছলতায় ভরা উচ্ছাস  খুঁজে পেলো।

আজ সুস্মিতা অন‍্যদিনের চাইতে তাড়াতাড়ি  ঘরে এলো। বললো,- "মা আজ ভীষণ ক্লান্ত তাই শুইয়ে দিলাম। একটু মাথায় হাত বোলাতেই ঘুমিয়ে  পরলেন। দাঁড়াও আজ তোমার জন‍্য একটা গিফ্ট আছে। যদিও মা পছন্দ করেছেন। আচ্ছা বেশ, এই গিফ্টটা আমার আর মায়ের তরফ থেকে তোমার।" সুস্মিতা হাতে একটা প‍্যাকেট নিয়ে খুলতে যাচ্ছিল দেবাঞ্জন ওর হাতের প‍্যাকেট কেড়ে বিছানায় রেখে ওর দুটো হাত নিজের দুহাতের মুঠোতে ধরে বললো -"শুভ জন্মদিন সুস্মিতা, আমার এই উইস টা তেইশ ঘন্টা আগেই তোমাকে করা উচিৎ ছিল কিন্তু আমার  নতুন ফোনে রিমাইন্ডারে সেভ করা হয়নি তাই... সরি সুস্মিতা,এক্সট্রিমলি সরি।" সুস্মিতা হাসলো সে -- ই হাসি ! দেবাঞ্জন সুস্মিতাকে কাছে টেনে নিয়ে বললো "রহস‍্যটা কি আমাকে একটু বলো তো?" 

-"কোন রহস‍্য?"

-"মা আর তোমার সম্পর্ক তো ভালো ছিল না আর আজ দেখছি..."





"দীর্ঘদিন নিজের মতন করে সাজানো বাগানে  অন‍্য মালি হয়ে আমি ঢুকে পরেছিলাম। নতুন বাসনের সাথে পুরানো বাসনের ঠোকাঠুকি লাগার মতন ওই ঘটনাগুলো ঘটছিলো। আমি জানি না মাকে, মা জানেন না আমাকে.... "





-"দূর " সুস্মিতা সেই হাসি হাসতে হাসতে দেবানঞ্জনের  বাঁধনমুক্ত হয়ে বললো -"আমার আর মায়ের  সম্পর্ক কোনদিনও খারাপ ছিল  না। আসলে ওনার নিজের একার রাজত্ব ছিল এই সংসারটা।    দীর্ঘদিন নিজের মতন করে সাজানো বাগানে  অন‍্য মালি হয়ে আমি ঢুকে পরেছিলাম। নতুন বাসনের সাথে পুরানো বাসনের ঠোকাঠুকি লাগার মতন ওই ঘটনাগুলো ঘটছিলো। আমি জানি না মাকে, মা জানেন না আমাকে...পরষ্পরকে জানা আর বোঝার জন‍্য সময় তো লাগবেই। দুজনে একসঙ্গে ধৈর্যহারা হলে চলবে কেনো? দেখো মা বিধবা মানুষ, মাথায় ওপর তাঁকে শাসন করার কিম্বা দেখাশোনা করার কেউ ছিলোনা .... তোমাকে মা যতই 'বাবা' বলে ডাকুন না কেনো তুমি যে কখনো তাঁর সত‍্যিকারের বাবার মতন শাসন করে তাঁকে সংষ্কার মুক্ত করোনি বেশ বুঝেছিলাম।আজও যে তুমি দুধু-ভাতু খাওয়া মায়ের আদরের খোকাটি হয়ে থাকতে ভালোবাসো তা বেশ বুঝি। তাইতো মা সেই মান্ধাতার আমলের কুসংস্কার  নিয়েই  নিজের একার রাজত্বের রাণী হয়েছিলেন। আমি এলাম দুয়োরাণীর মতন। ফলে লেগেই যেতো ছুঁতোনাতায়। " 

এবার দেবাঞ্জনকে যত্ন করে বিছানায় বসিয়ে সুস্মিতা তার পাশে বসলো -" আমি বুঝলাম আমাকে মায়ের শুধু বৌমা হয়ে থাকলে চলবে না দরকার পরলে 'মা 'হতে হবে। বার বার হাত ধুতে ধুতে আমার  হাতের খাঁজে জ্বালা হলো, অফিসের ডাক্তার দেখালাম বললেন 'হাজা হয়েছ'। ওষুধ দিলেন। " দেবাঞ্জন ওর হাতটা নিজের হাতে তুলে নিয়ে বললো -"কই ,আমায় বলোনি তো।" সুস্মিতা সেই হাসি হেসে বললো,-" কি হবে তোমাকে বলে! সমস‍্যা আমার। তুমি যখন এতোদিনে পারোনি তখন পরামর্শদাতা হিসেবে সেই  আসনে তোমাকে বসাই কি করে...! সরি দেবাঞ্জন, কিছু মনে কোরো না, সংসারের মেয়েমহলের অশান্তিতে তোমাকে জড়াতে চাই নি। তারপর শোনো, আমি রাতে কাজকর্ম সেড়ে ওনার সামনে হাতের ফাঁকে ওষুধ লাগাতে লাগাতে ওনাকে বললাম,"মা তোমার হাতে হাজা হলে বোলো ওষুধ আছে লাগিয়ে দেবো।" মা ওনার  হাত দুটো বাড়িয়ে দিলেন। কি কাণ্ড  দুহাতের ফাঁকগুলো লাল মাংসলো! বুকে জড়িয়ে  বললাম ,-"কেন মা নিজেকে এতো কষ্ট দাও! বাবাতো অনেকদিন হলো চলে গেছেন। যদি পরজন্ম বলে কিছু থাকে তাহলে উনি হয়তো নতুন কেউ হয়ে নতুন জীবনে ভালোই আছেন...। তোমার ছেলেও মানুষ  হয়ে গছে, তাহলে এখনো নিজেকে কেন এতো কষ্ট দাও? " দেখি তাঁর চোখে জল বললেন -"এ থেকে বেরোতে পারিনা যে বৌমা,কেউ যে কখনো আমাকে এমন করে বোঝায় নি।" বললাম,-"বেশ বের করার দায়িত্ব  আমার।"একদিন ওনার ভাত খাওয়ার থালার  সাথে আমার এঁটো থালা ঠেকিয়ে চেঁচাতে লাগলাম  নিজেই। মা জিজ্ঞেস করলেন,-"কি হয়েছে?' -"দেখোনা কি কাণ্ড তোমার ভাত খাওয়ার থালাটা ফেলে দিতে হবে। আমার এঁটো থালার সঙ্গে ঠেকে গেলো যে।"  মা বললেন -"তাতে কি হয়েছে তুমি কি অচ্ছুৎ!" আমি বললাম তবে কি আমি?"  মা বললেন, -"তুমি আমার একমাত্র পুত্রবধূ।" বললাম -"ওই যে বলো, আমার সঙ্গে সংসার করা যায়না।" মা বললেন, -"দূর ওটা তো কথার কথা।" দেবাঞ্জন, বুঝে দেখো মা আর আমার যতই কথা কাটাকাটি হয় সবই 'কথার কথা'। এই যে পরশু আমি রেগে মেগে বললাম  -"আমি এই বাড়ি থেকে চলে যাবো "মা বললেন, -"যাবো যাবো বল যাও না তো আর! তুমি গেলে আমি বাঁচি।" বললাম -' যাবোই তো তবে পরশু যাবো তোমার  হাতের পায়েস খেয়ে তবে। তোমার ছেলে  বলেছে তোমার হাতের পায়েস নাকি জিভে লেগে থাকে। পরশু আমার জন্মদিনের পায়েসটা তুমিই বানাবে বলে দিলাম ।' ব‍্যাস মা সমস্ত প্ল‍্যান এঁটে ঝাঁপিয়ে পরলেন। এই হলো আমাদের শাশুড়ি-বৌমার সম্পর্কের রহস‍্য।"

দেবাঞ্জন আজ সকাল থেকে যে ঘটনা গুলোর সমাধানের রহস‍্য খুঁজে মরছিলো তা যে এতো সহজ আর সুন্দর তা ভেবেই অবাক হলো। সন্তান হয়ে এতো কাছে থেকে মায়ের প্রতি তার যে কর্তব্য করা উচিৎ ছিল তা সে কোনোদিনও করেনি, তার করা সেই খুঁতগুলো সুস্মিতা তার বুদ্ধি দিয়ে এতোসুন্দর ভাবে যেন ওষুধের প্রলেপ সহযোগে সাড়িয়ে তুলেছে। ব‍্যাপারটা দেবাঞ্জনের কাছে যৎসামান‍্য কখনই নয়। আসলে মায়ের জীবনের দুঃখ কষ্টগুলো সে কোনোদিনও জানার চেষ্টা করেনি। সুস্মিতা অন্তরে-বাইরে সর্বাঙ্গ সুন্দর! তাই তো কয়েক মাস ধরে সুস্মিতার ব‍্যাপারে ভুল বোঝায় পূর্ণ হেলায় হারানো দিনগুলোর পাশে তার হাসিমাখানো সৌন্দর্য উজ্জ্বলতম হয়ে অসীম অন্ধকারময় রাত্রির বুকে হাসির বন‍্যা ছড়ানো পূর্ণিমার চাঁদের  মতন প্রতিভাত  হলো।


 

Post a Comment

Previous Post Next Post