সুখনীড় : ঈশিতা ভট্টাচার্য

 
          দুই মেয়ে নিয়ে মুখার্জীর দার গর্বের সংসার। নাতনীদের নিয়ে ঠাকুমা - দাদুর ও বড় আনন্দ। শর্মিলা ও পামেলা সত্যি ই গর্ব করার মতোই মেয়ে। রূপে গুনে অতুলনীয়া। ওদের মিষ্টি ব্যবহারের জন্যই তো এতো নাম ডাক। বড়ো স্নাতকোত্তর ও ছোটো স্নাতক স্তরে ব্যস্ত।সুখের দিনগুলো সবার  জীবনে  যেমন কম থাকে , ওদের ও অন্যথা হলো না। এপ্রসঙ্গে বলে রাখি , পেশায় শিক্ষক বলেই হয়তো বাড়ির পরিবেশটা অন্যরকম ছিল। যাই হোক , কালের নিয়মে শর্মিলার জীবনে একজনের আবির্ভাব ঘটলেও , পুরো ব্যাপারটা ছিল একতরফা। উল্টোদিকের কোনো হেলদোল ই ছিল না। সে ছিল বড়োলোক বাবার একমাত্র ছেলে। তার নজর যে , শর্মিলার মতো রুচিশীল হবে , এতো ভাবাই যায় না।না হলে এরকম একটি প্রস্তাব কেউ ফিরিয়ে দেয় ? এতে অরিন্দমের জীবনে কত বড় ক্ষতি হলো জানা নেই। তবে মিষ্টি শর্মিলা আস্তে আস্তে শুকিয়ে গিয়ে কঠিন রোগে আক্রান্ত হলো। বলা বাহুল্য অলকেশ দার " সুখনীড় " ( বাড়ির নাম ) দুঃখের বাসায় পরিণত হলো। স্ত্রী শিখা বৌদির  তো মেয়ের চিন্তায় খুব ই খারাপ অবস্থা। কি করে যে সুস্থ করে তুলবেন মেয়েকে সেই ভাবতে থাকলেন।আর সেই ভাবনা থেকেই তারা   ঠিক করলেন যে , এই বাড়ি ছেড়ে  অন্য জায়গায় চলে যাবেন , তাহলে যদি , মেয়ে সুস্থ হয় ! কথামত " সুখনীড় " ছেড়ে তারা চার কামরার ফ্ল্যাট এ চলে গেলেন। নামের স্বার্থকতা যখন থাকলো ই না , তখন আর নিজের বাড়ি নয়। এই ছিল তাদের বাড়ি পরিবর্তনের কারণ। 


কিন্তু  যার জন্য এত কিছু , সে কি সত্যি মনের দিক থেকে  সুস্থ হলো ? না ! এতো সুস্থ হওয়ার ও নয়। কারণ অরিন্দমের মতো বড়োলোকের ছেলেদের কাছে যেটা খেলার বিষয় , শর্মিলার মতো এই ধরনের  কোমল মনের মানুষের কাছে তা খুব ই স্পর্শকাতর বিষয়। কিছু বছর পরে পামেলা বিয়ে করে বিদেশ চলে গেলে শর্মিলা আরও রুগী হয়ে ওঠে। Dr. এর পরামর্শে তাকে "মেন্টাল অ্যাসাইলাম "-  এ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে নাতনীর শোকে দাদু , ঠাকুমা দুজনেই ইহলোক ত্যাগ করলে অলকেশ দা ও বৌদি আরও ভেঙে পড়েন।


এতো কিছু ঘটনার যে দুজন কেন্দ্রবিন্দু , একজন এর অবস্থা  তো দেখা গেলো , কিন্তু আর একজন ? সে কিন্তু দিব্যি আছে। যার কাছে টাকা ছাড়া আর কোনো কিছুর ই মূল্য নেই, তার কাছে একটা মেয়ের মনের মূল্য থাকবে ? না , তার ভালোবাসার মূল্য থাকবে ?


অন্যদিকে মা শিখা বৌদি  কেনো শর্মিলার সাথে কথা বলে বিষয়টা জানতে পারলো না ? তাহলে তো কিছু অন্তত করা যেত। " সুখনীড় " এ সুখ , আনন্দ , আল্লাদ সব ই ছিল। কিন্তু সব থেকে যা জরুরী পরস্পরের মধ্যে সবকিছুর আদান - প্রদান তাই বোধহয় ছিল না। যা অনেকের বাড়িতে এখনও নেই। মা বাবার সাথে সন্তানের যে আত্মিক যোগাযোগ , সেখানে কোনো গোপনীয়তা থাকতেই পারে না। কিন্তু সত্যিই কি আমরা সেটা মেনে চলি ? দেখা যাবে যেখানে এইসব নেই , সেই বাড়ির পরিবেশ টাই আলাদা। মা বাবাদের সবসময় ছেলেমেয়ের পাশে থাকা উচিৎ। যে সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখায় " মা " ! জীবনের আলো বা পথ তো সেই মা - ই দেখাবে ! নাহলে তারা একা একা চলবে কি করে ? হোঁচট খেয়ে পড়ে যাবে যে ? এমনিতে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে ওষুধ লাগালে কমবে । কিন্তু জীবনের পথে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে উঠে দাঁড়াতে পারবে তো ? এটা মনে হয় সত্যি সবার ই ভাবার বিষয় !!!!



Post a Comment

Previous Post Next Post