মেয়েদের কথা ভাবতে বসলেই , প্রথমেই যে কথাটা সবার আগে মনে আসে , তা হলো , মেয়েরা অবলা। তাদের , না আছে , তীক্ষ্ণ বুদ্ধি , না আছে ঘরে - বাইরে সবদিক সামাল দিয়ে চলার ক্ষমতা ! তাই তো পুরুষের এতো দাপট !পুরুষের দাপটের কাছে অনেক সম্ভ্রান্ত মহিলাদেরও হার মানতে হয়েছে। এঁরা হলেন সেইসব মানুষ , যাঁরা নিজেদের গুণের দ্বারা ক্ষয়ে যাওয়া সংসারের হাল একা হাতে ধরে রেখেছেন। কিন্তু ঔদ্ধত্য বা দাপট না দেখাতে পারায় পুরুষের সাথে সমান ভাবে পাল্লা দিতে হয়ত পারেনি। তাই তো দীর্ঘদিনের অবহেলা , বঞ্চনা কে দূরে সরিয়ে দিয়ে মেয়েরা সব ব্যাপারে এগিয়ে আসার ক্ষমতা দেখায়। এটা অনেকটা দীর্ঘদিনের না পাওয়া থেকে যেমন সব কিছু একাই ভোগ করার ইচ্ছে জাগে , যেমন করে উগ্রপন্থার জন্ম হয় , কতকটা সেরকম।
"দেবতাদের অনুরোধে মা দুর্গা রণচন্ডী রূপ ধারণ করেছিলেন। কিন্তু মহিলা সকল নিজের নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে নিজের কার্য্য সিদ্ধিতে বদ্ধপরিকর। "
অনেকেই শুনলে অবাক হবে যে দীর্ঘদিনের না পাওয়ার ক্ষোভ , বঞ্চনা এসব থেকেই কিন্তু উগ্রপন্থী মনোভাবের জন্ম হয়। কেউ জন্ম থেকে এই মনোভাব নিয়ে জন্মায় না। সবাই সব পাচ্ছে , শুধু একশ্রেণীর মানুষ কিছু পাচ্ছে না , একই পৃথিবীতে থেকেও। এই যন্ত্রণাই মানুষ কে সমাজ বিরোধী করে তোলে । ঠিক একটা সময় চার দেওয়ালের মধ্যে যাদের আটকে রাখা হতো , এবং সব ব্যাপারে পুরুষই ছিল শেষ কথা, এই যন্ত্রণার জায়গা থেকেই আজকের নারী সমাজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তারা তাদের অবস্থার প্রতিবাদ করতে শিখেছে। নারী স্বাধীনতার নামে জয়ধ্বনি তুলে তারা সব ব্যাপারে অগ্রগণ্য ভূমিকা নেওয়ার চেষ্টা করছে। ফলতঃ এই অবস্থা থেকে মেয়েরা নিজেরাই কাটিয়ে বেরিয়ে এসেছে বহুদিন।
এতে ফল হয়েছে উল্টো । কিছু মহিলা এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করেছে। তারা না মানে বাড়ির শাসন, না মানে সমাজের নিয়ম ! আসলে সমাজের উন্নতি করতে গিয়ে তারা অচিরেই সমাজটাকে অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
জন্মগতভাবে মহিলারা অনেক বেশি এগিয়ে পুরুষের থেকে। আর সেই ক্ষমতা কে কাজে লাগিয়ে মহিলা সমাজের একাংশ সমাজে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ভুলে গেলে চলবে কেনো , আমরা হলাম মা দুর্গার জাত। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া, এটাই মেয়েদের অবশ্য কর্তব্য। সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নয়, সমাজের মধ্যে থেকেই, সব রকম নিয়ম নিষ্ঠা পালনের মধ্য দিয়ে নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করে যেতে হবে। সর্বোপরি নিজের পরিবার তথা গোটা সমাজের দেখাশোনার ভার নিতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না , পুরুষ বরাবরই বহির্মুখী কিন্তু মহিলাদের অন্তর্মুখী স্বভাবের জন্যই সমাজ তথা পরিবার টিকে থাকতো।
আজ যে পরিবার প্রথা ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে, তার কারণ হিসেবেও সেই মহিলা সমাজের নামই বারেবারে উঠে আসে। সঙ্গের পুরুষটিকে সঙ্গী করে কাজকর্ম ভাগাভাগি করে নিয়ে এগিয়ে চলা, সেও মহিলাদেরই কাজ। নাহলে একাই ধৈর্য্য ধরে , নিষ্টা সহকারে সব দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। কথায় বলে মহিলারা একাই একশো। অনেক ক্ষেত্রে আমরা তার প্রমাণ ও পাই। কিন্তু যখন তাদের বাড়বাড়ন্ত নজরে পড়ে , এবং যখন সত্যি তা মাত্রা ছাড়িয়ে যায় , তখন খুব খারাপ লাগে এটা ভেবে যে, আমিও তো এই মহিলা সমাজের ই একজন। ইদানিং মহিলাদের আচার - আচরণ নিয়ে সবাই সোচ্চার। যা পরিবার তথা সমাজের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। একটা বিষয় এ ব্যাপারে বলে রাখা প্রয়োজন , সমাজে মহিলাদের ওপর বিভিন্ন সময়ে যে বিভিন্ন অত্যাচার হচ্ছে , তা কিন্তু মহিলাদের দমিয়ে রাখার একটা চেষ্টারই নামান্তর বলা যায়। এইভাবে আমরা মেয়েরা আসলে পুরুষদেরই জিতিয়ে দিচ্ছি।
এটা নিয়ে ভাববার সময় মনে হয় এসে গেছে। দুঃখের বিষয় এই যে , তারা জানেই না যে তারা কি সর্বনাশ করছে ? যখন হুঁশ ফিরবে তখন সব শেষ হয়ে যাবে। কথিত আছে যে , দেবতাদের অনুরোধে মা দুর্গা রণচন্ডী রূপ ধারণ করেছিলেন। কিন্তু মহিলা সকল নিজের নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে নিজের কার্য্য সিদ্ধিতে বদ্ধপরিকর। এতে বাকি মহিলা সমাজের মাথা হেঁট হলো কিনা তাই নিয়ে ওদের খুব একটা মাথাব্যথা নেই। কারণ তারা যে ধ্বংসলীলায় মেতেছে। এটাই তো চিন্তার বিষয়। মহিলাদের বলা হয় পরিবার তথা সমাজের কারিগর ,সেই তারাই যদি এতো ধ্বংসাত্মক হয় , তবে সমাজ টিকবে কি করে ?
সকলের কাছে আবেদন , প্রত্যেকে নিজের নিজের আচরণ সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল হলে আমরা এই বিপর্যয় অবশ্যই কাটিয়ে উঠতে পারবো। মনে রাখতে হবে , হার - জিত নয় , পরিবার তথা সমাজের উন্নতির জন্য পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আজকের বাচ্চা যে কালকের নাগরিক সেও যেনো এইভাবেই উদ্বুদ্ধ হয়। মহিলারাই মহিলাদের চরম শত্রু , এই ধারণার ও পরিবর্তন করতে হবে। আমরা যারা পুরুষদের দাপট সহ্য করি না , আমাদের এইসব ভুল আচরণের জন্য আসলে কিন্তু আমরা তাদের কেই জিতিয়ে দিই। এব্যাপারে ও আমাদের ওয়াকিবহাল থাকতে হবে।
একটু সঠিক ভাবে চললেই আমরা এই সমাজটাকে অবক্ষয়ের হাত থেকে উদ্ধার করতে পারবো।

