বালুচিস্তানের এক ছোট্ট গ্রামের খুব সাধারন একটি পরিবারের মেয়ে মুনিবা। স্বপ্ন ছিল আকাশছোঁয়া, কিন্তু তার এই স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাই নিজের ভাগ্য। মাত্র আঠারো বছর বয়সেই বাবা মায়ের পছন্দ মত ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি করানো হয় তাঁকে, কিন্তু তার এই বৈবাহিক সম্পর্ক সুখের হয়নি মোটেই। বিবাহের ঠিক দু'বছর পরে মুনিবা একটা গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি সম্পূর্ণভাবে উল্টে যায় মুনিবার স্বামী নিজের প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হলেও মুনিবা নিজেকে রক্ষা করতে পারেনি। ফলস্বরূপ সে ভীষণ রকম ভাবে আহত হয়। শুরু হলো এক নতুন যুদ্ধ পর্ব যেখানে মুনিবার প্রতিপক্ষ মুনিবা নিজেই। এই দুর্ঘটনা তার কাছ থেকে কেড়ে নিল তার সমস্ত কার্যক্ষমতা, হুইলচেয়ার হয়ে উঠল তার নতুন সঙ্গী কিন্তু এরপর যখন সে জানতে পারল তার মাতৃত্বের স্বাদ আর কোনদিনও পূরণ হবে না সেই দিন যেন তার মাথায় পাহাড়প্রমাণ আকাশ ভেঙ্গে পড়েছিল।
শুরু হলো নতুন এক যুদ্ধ যে যুদ্ধে মুনিবা তার স্বামীকে পাশে পায়নি। এই লড়াইয়ে টিকে থাকার লড়াই হয়ে উঠেছিল দিনদিন। শুধুমাত্র মনের জোরকে সম্বল করে শুরু হলো স্রোতের বিপরীতে হাঁটার লড়াই। সমস্ত বাধাকে জয় করতে শুরু করলো একে একে। এই দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছিল তার ডান হাতের কর্মক্ষমতাকে কিন্তু মুনিব বাম হাত দিয়েই সাদা ক্যানভাস কে রঙিন করতে শুরু করলো। একটি সদ্যজাত পুত্র সন্তানকে দত্তক নিয়ে সে তার মাতৃত্বের স্বাদ কেউ পূরণ করল। এই সন্তান আমার কিংবা আপনার কারোর উপেক্ষিত একজন, যাকে শুধুমাত্র জন্ম দিতে পেরেছে মা আর হতে পারিনি। কথাগুলো শেষ হতেই দর্শক আসন থেকে শুধু করতালি শব্দ ভেসে আসছে। মুনিবা আজ সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেছে।সবকিছু হারিয়ে নতুন করে আবার সব কিছুকে ফিরে পেয়েছে। তার ক্যানভাসের রং ছড়িয়ে পড়েছে সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে, মাতৃত্বকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে আত্মহারা হয়েছে সমগ্র পৃথিবী। জীবনকে নতুন আঙ্গিকে দেখবার দৃষ্টি সে পেয়েছে আজ। আসলে আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই এই রকম একজন করে মুনিবা লুকিয়ে আছে। যাকে আমরা দেখতে পাই না, দৈবক্রমে যদি দেখতে পেয়েও যাই তখন আমরা তাকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করি। আসলে এই সমস্যা জড় লুকিয়ে রয়েছে আমাদের মধ্যেই অর্ধেক জল ভর্তি গ্লাস দেখলে সবার প্রথমে আমাদের চোখ পড়ে যায় গ্লাসের অর্ধেক ফাঁকা অংশের দিকে, ভর্তি অংশের দিকে কিন্তু একেবারেই নয়।

