মেয়েবেলা : কল্পনা মিত্র


মেয়েটা কবিতা লিখতো মেয়েবেলায়,
ভালোবাসতো লিখতে কবিতা,
পুরষ্কৃতও হয়েছিল একাধিকবার !
আর সাধারণ ছাত্রীর মতন পড়াশোনায়
কোনো ফাঁকি ছিলনা, তার স্বপ্ন ভরা দুচোখে।

নিয়মের চাকায় বাবাকে কণ্যাদায় থেকে মুক্ত করে--
মেয়েটা বৌ হয়ে স্বামীর ঘরণী হল।
যুবতী মেয়েটা তখনো রঙ্গিন স্বপ্ন দেখে,
সুন্দর ফুলে ভরা বাগিচার স্বপ্ন....যার অর্থ 'সফলতা'!

দায়িত্ব, কর্তব্যে সফল নিয়মেতে বাঁধা কঠিন বেড়াটিতে
ভালো বৌমা, বৌদি ,নাতবৌ হয়ে ওঠার তাগিদে  নিত্য নতুন নতুন 
পরীক্ষা দিতে দিতে মেয়েটা এবার 'মা'এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হলো !
সংসার নামের যন্ত্রের চাকায় পিষ্ঠিত হলেও কোনদিন মাতৃস্নেহ থেকে  বঞ্চিত করেনি  কোলের শিশুটিকে।
ব্যস্ত গৃহিণী হয়ে নিজের অজান্তে কখন যে সে
স্বামীর কেবল শয্যাসঙ্গিনী হয়ে গিয়েছিল খেয়াল করেনি।

বছর গিয়েছে কেটে,
জন ভরপুর সংসারের নাট্যমঞ্চে 
কেবল সে আর স্বামী দুজনে রয়েছে টিকে।
ছেলেটা যে তার কর্মস্থলে পরিবার নিয়ে থাকে । 
কতোও কাজ গেছে কমে ।

জীবনের এই প্রৌঢ় বেলায়
অতিপরিচিত স্বামীটি যে তার  
নানা অছিলায় তার হাতটিকে ধরে থাকে। 
কি পাওয়ায় ছিল কিবা সে পেলো  
সেই হিসাব মেলাতে বসে সফল গৃহিণী নীরবে নিভৃতে চোখের জলটি মোছে........।
অবসর কালে প্রৌঢ়ার মনে
হারিয়ে যাওয়া ছন্দে ভরা কবিতারা উঁকি মারে !


প্রিয়ার কাব্য প্রীতিকে সন্মান করে জীবন সঙ্গী তার
কিছু কবিতার বই দিয়েছে যে উপহার....…।
খুঁজে খুঁজে ফেরে ছন্দের মিল....
ভাষা গুলো লাগে বড়ই জটিল..... 
বহু পরিচিত সেই ভাষা ও ছন্দ এই জীবনের বয়ে যাওয়া স্রোতে
হারিয়ে গিয়েছে সব-ই ।
মেয়েবেলার সেই পরিচিত যাকিছু  
তার-ই মতো আজ হয়েছে  প্রবীণ ! 
দাঁত ভেঙে যায় কবিতা পড়তে ! 
চুল ঘেঁটে যায় অর্থ বুঝতে….! 
নতুন নতুন শব্দ চয়ন !
যুগে যুগে ঘটা অগ্রগতির পাশে
সেদিনের সেই মেয়েটি যে আজ সত্যি প্রবীণা বটে।
ভাঙ্গা তাক্ বা কাঁচের সোকেসে
কিম্বা কুলুপ সাঁটানো দামি আলমারিটিতে 
সাজানো থাকতো রবীন্দ্রনাথ, শরৎ চন্দ্র......আরো কতো ও জন..…!! 
লঙ্কা-হলুদে রাঙ্গানো ব্যস্ত হাতে,
অল্প -কিংবা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিতদের কাছে
তাঁদের লেখনী ঘরের ছেলের মতো আজও বুঝি পায় সমান আদর !
প্রবীণার মন-অন্দর হতে সেই মেয়েবেলা উঁকি মারে।
দিনের  শেষেতে সূর্যি ডোবার কালে..
ব‍্যথিত নয়নে রমণী সখাকে বলে
"চর্চা করিনি কতো কতো দিন !! 
ফিরে পেতে চাই হারানো সেদিন , 
ধাপে ধাপে যাবো নিত‍্য নতুন
সময়ের স্রোত বেয়ে,
কঠিন যা কিছু হবে মসৃণ...।
বলো না গো আজ তাকি সম্ভব !
যদি না তা হয়,
এ জনম্ থেকে, নেবো যে বিদায় -
দিচ্ছি যে কথা
আসবো যে ফিরে
সপ্ন মাখানো সেই মেয়েবেলাটিতে, 
বন্ধুটি হয়ে থেকো পাশে পাশে।
পুতুল খেলার এ স়ংসারেতে।
স্বপ্ন আমার পূর্ণতা পাবে  .... 
জীবন বুঝি বা সার্থক হবে .....
দাও গো বিদায় দাও।"
অস্তরাগের আভায় রাঙ্গানো
বধূয়ার পানে চেয়ে 
অভয়-আশীষ মাখানো দুচোখে
প্রিয়ার চিবুক ধরে দুই হাতে 
সখা দেয় আশ্বাস
" একটি জীবনে রাখো
বিশ্বাস 
পরের জনমে নয়।
যা কিছু করেছো ,আজও যা-ই করো
একসাথে  তুমি সবে করি জড়ো ,
জেনো তুমি নিশ্চয়ই 
যা হওয়ার হবে এই জীবনেই,
ত‍্যাজো সব সংশয়
লেখো তুমি  নির্ভয়।




Post a Comment

Previous Post Next Post