বিরহের বেদনা : শান্তনু রায়


বর্ধমান নিবাসী হয়েও স্বপ্নের শহর আমার শিলিগুড়ি। যাওয়া হয়ে ওঠেনি কখনও, তবুও অনুভব কত চির বসন্তে ঢাকা শিলিগুড়ি যেন এক প্রাচীন বন্ধনে ডাকছে আমায়।


এক বন্ধুর সুবাদে শিলিগুড়ি থেকে একটি ইন্টারভিউ র ডাক এল আমার। বেকার বসে বসে দিন কাটছিল আমার তাই শিলিগুড়ি দিকে রওনা দিলাম জিনিস পত্র গুটিয়ে---ভালো চাকরি, নামী কোম্পানি, বেতন টাও ভালোই। তবে ইন্টারভিউ না শিলিগুড়ির প্রতি ভালোলাগা আমায় এতটা উৎসাহ দিল বুঝতে পারিনি।

রিজার্ভেশন টিকিট ছিল তাই তাড়াতাড়ি না করে ধীরে স্থিরে   ট্রেনে উঠে বসলাম। একদম জানলার ধারের সীট। ট্রেন চলতে শুরু করলে একটা ফুরফুরে হাওয়া --- চোখ বুজিয়ে দেওয়া একটি নির্মল উন্মাদনা। কখন যে ট্রেন চলতে শুরু করবে --- অস্থির হয়ে উঠল মনটা।

কিছু পরে দেখি আমার সামনের সীটে একটি পরিবার উঠে এসে বসল। একটি মেয়ে -- বছর কুড়ি বয়স হবে -- মিষ্টি দেখতে তাকে -- প্রকৃতি যেন সব সৌন্দর্য ঢেলে তাকে সাজিয়েছে। চোখের চাওনি যেন সাগরের ঢেউ --- একটি একটি করে বুকের পাজরে এসে ধাক্কা খাচ্ছে। সঙ্গে আর একজন ভদ্রলোক -- বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি হবে --- অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী ব্যক্তির ভাব তার মধ্যে স্পষ্ট। একজন ভদ্রমহিলা --- সাক্ষাৎ লক্ষ্মী প্রতিমা।

অবশেষে ট্রেন চলতে শুরু করল। বিকাল পেরিয়ে সন্ধ্যার ঘনাঘনি। ট্রেনের জানলা দিয়ে মিষ্টি হাওয়া আর অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য --- সব কিছু মন ভরিয়ে দেয়। তবুও খোলা প্রকৃতির মাঝে দুচোখ আটকে থাকছিল না। বদ্ধ ট্রেনের কামরায় চোখ ফিরে আসছিল বারবার --- সামনের সীটে বসা বছর কুড়ির তরুণীর দিকে। ঈশ্বর যতটা সৌন্দর্য দিয়ে তাকে তৈরি করেছেন ততটা আমার কালো নিষ্পাপ দুটি চোখ --- হালকা গোলাপি চুড়িদার আর মিষ্টি মুখের ভাব মনকে দিশেহারা করে দেয়।

ভদ্রলোক আমাকে উদ্দেশ্য করেই বললেন -- কোথায় যাবে তুমি?

স্বপ্নের শহরে যাবার যে উদ্যম আমার মনের মধ্যে ছিল তা আগেই শেষ হয়ে গেছে। নিরুৎসাহে বললাম --- জলপাইগুড়ি।

মনে হচ্ছিল ঈশ্বর আমাকে তাঁর সৃষ্টির সুন্দর প্রতিচ্ছবি তরুণী কে দেখবার মাত্র কয়েক মুহূর্ত সুযোগ করে দিয়েছেন --- এই জন্মে শুধু কয়েক মুহূর্ত। তারপর সব স্মৃতি হয়ে যাবে। তাই নির্দয় মুহূর্তগুলিকে কিছুতেই হারাতে ইচ্ছা করছিল না। জানি না তরুণী কখন নেমে যাবে তার গন্তব্যে।

ভদ্রলোকের মুখে কোনও বিরক্তির ছাপ নেই। বুঝলাম স্বামী-স্ত্রী-কন্যা মিলে অনেক দূরেই যাত্রা করবেন তিনি। তাই আসর কিছুটা জমাতে চাইছেন।

ভদ্রলোক বললেন--- জানলার ধারের সীট কিন্তু খুব ভালো --- মিষ্টি মিষ্টি হাওয়া, ঘুম চলে আসে চোখে। তা তোমার বাড়ি কি জলপাইগুড়ি তে?

ইচ্ছা ছাড়া যখন উত্তর দিতে হচ্ছে তখন আমিও আসরের ভাগ নিতে রাজী হলাম। চারিদিকে আধার নেমে গেছে। কয়েক মুহূর্তের জন্য জোনাকিরা গাছের ডালে বসে আলো দিচ্ছে। ভদ্রলোক টিকে বললাম ---- আমার বাড়ি বর্ধমান, শিলিগুড়ি তে একটি ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছি। এর আগে কখনও যাওয়া হয়ে ওঠেনি। 

সহাস্যে ভদ্রলোক জবাব দিলেন --- আমার ও একই অবস্থা। তবে ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছি না, শিলিগুড়ি প্রথম যাচ্ছি। ব্যবসার কাজে যে টুকু বেরানো হয় সেটুকুই --- কাজের চাপে কোথাও যাওয়া হয় না। বিয়ের পর একবার হ্যানিমুন করতে গেছি পুরীতে। ব্যাস। আর কোথাও না। এবার ভাবছি কাজ কর্ম থেকে মুক্তি নিয়ে ঘুরে ঘুরে বেড়াব। জীবন টাকে উপভোগ করতে হবে।

ভদ্রলোককে বেশ একাকী মনে হল। সব কিছুর মধ্যে থেকে ও যেন একা। আমি বললাম -- জীবন টা একটি ছোট গল্পের মত, কখন যে শেষ হয়ে যায় বোঝা যায় না। কিছু পাতা ছিড়ে যায় আর কিছু অস্পষ্ট হয়ে রয়ে যায়। যেটুকু সময় আছে আনন্দে কাটানোই ভালো। তা আপনার বাড়ি কোথায়? আর শিলিগুড়ি যাত্রাই বা কেন?

----- আমার বাড়ি গড়িয়া তে, শিলিগুড়ি যাচ্ছি মেয়েকে নার্সিং কলেজে ভর্তি করার জন্য। মেয়ের আমার পড়াশোনায় দারুণ মেধা। অনেক যত্নে মানুষ করেছি। তবে তুমি সুন্দর কথা বলো। আর আমি মনের কথা বলার আর শোনার সময় খুব কম পাই। তবে আজ বেশ ভালোই লাগছে।

তরুণী এতটাই ধীর স্থির যে মুখের কোনো অভিব্যক্তির প্রকাশ পেলাম না। ভদ্রলোকেই জিজ্ঞাসা করলাম -- কোন কলেজে ভর্তি করবেন??

ভদ্রলোক ব্যাগ থেকে কাগজ পত্র বের করে বললেন --- আনন্দলোক নার্সিং কলেজ। বয়স বাড়ছে তো তাই আর কিছু মনে রাখতে পারছি না। তুমি কি করো?

---- কিছু না। শুধু স্বপ্ন জমানো আছে হাজার।

এমন মিশুকে মানুষ খুব কম দেখা যায়। কোনো অহংকার নেই কোনো সংকোচ নেই --- মুক্ত বর্ষন যেন মাটির স্পর্শে বিচরন করতে লাগল।

তরুণীর নামটি জানতে খুব ইচ্ছা করছিল কিন্তু জিজ্ঞাসা করার মতো সাহস ছিল না। মুহূর্তেই যেন একটা পরিবার পেয়ে গেলাম। সব কিছুই যেন আগে থেকেই সৃষ্টি ছিল। রক্তের বন্ধন ছাড়াও আপন হওয়া যায় মনের বন্ধনে।

রাত বেশ ভালোই হল। খাবারের জন্য যা আয়োজন ছিল সব কিছুই খেয়ে নিলাম।

ভদ্রলোক তাঁর স্ত্রীকে খাবার গুলি বের করতে বললেন। খাবারের অনেক আইটেম ছিল। ভদ্রমহিলা সযত্নে খাবার গুলি সাজিয়ে দিলেন মেয়ে ও স্বামীর উদ্দেশ্যে। তাদের যে টুকু আছে সব টুকু তেই বেশ তৃপ্তি ছিল। মনের আনন্দ শরীর কে সুস্থ রাখে যা তাদের জীবনে ছিল পরিপূর্ণ।

খাওয়া শেষ করে সকলেই শুয়ে পড়লেন। আমিও আমার সীটে ব্যাগ টিকে মাথার নীচে রেখে শুয়ে পড়লাম। তরুণীর নাম না জানা পর্যন্ত ঘুম আসা সম্ভব ছিল না। অনেক নামই আন্দাজ করতে লাগলাম। বাস্তবে কি হবে বোঝার উপায় ছিল না। আমার পাশের সীটে তরুণী শুয়ে ছিল। বাইরের প্রকৃতি চাদে আলোকিত হলেও ট্রেনের ভিতর অন্ধকার নেমে এল। তরুণীর দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে ছিলাম --- বুঝতে পারছিলাম আমার দৃষ্টি তাকে ব্যাকুল করছে ---- তবুও তার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে পারিনি। ঈশ্বর যে আমায় কয়েক মুহূর্ত তরুণী কে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। কিভাবে চোখ ফিরিয়ে নেব। কিভাবে চোখে নেমে আসবে ঘুম।

বর্তমান যুগ উন্নত প্রযুক্তিতে অনেক আপডেট হয়েছে। তরুণীর নাম টুকু জানতে পারলে তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখার সুযোগ থাকতে পারে। স্বল্প বন্ধন চির অটুট রাখলে ক্ষতি কি। যদি নাম জানতে পারি নিউজ পেপারে বিজ্ঞাপন দেব ---- আমার সরসীকে খুজে দিও একবার। না হলে আনন্দলোক নার্সিং কলেজে ছুটে যাব তার দুচোখে ডুব দিতে। নয়তো আমি অবাধে একটি নাম দিয়ে মনিমালাকে মনের দোসর করে রেখে দেব। কোনও টাই বাস্তব সম্মত ছিল না। চেয়ে দেখি তরুণী নিশ্চিন্তে নিদ্রা যাচ্ছে। তার নিদ্রাচ্ছন্ন মুখটিও দেখতে ইচ্ছা করছিল বারবার।

বাইরে প্রবল বৃষ্টি শুরু হল। মাঝরাতে ট্রেন থামছেও অনেক দূর দূর স্টেশনে। আমার চোখ দুটি হাত দিয়ে চাপা রাখতেই মনে হল ট্রেনের বাইরে রিজার্ভেশন সীট অনুযায়ী প্রত্যেকের নাম দেওয়া আছে। দুরন্ত গতিতে উঠে এসে গেটের মুখে দাড়িয়ে ট্রেন থামার অপেক্ষা করতে লাগলাম। অপেক্ষার সময় যেন কিছুতেই কাটছিল না। ট্রেন থামলে গেট খুলে বাইরে বেড়িয়ে দেখি রিজার্ভেশন লিস্টটি বৃষ্টির জলে ধুয়ে বিক্ষত অবস্থায় কিছু কাগজের টুকরো বিষন্ন হাওয়াই উড়ছে। কাগজের উপর হাত বুলিয়ে ট্রেনে মাথা রাখতেই ট্রেন ছেড়ে দিল।

ট্রেনে উঠে নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে রইলাম। ক্লান্তি কখন নিদ্রা হয়ে আমার দুচোখের পাতায় মিশে গেছে বুঝতেই পারিনি।

ক্লান্তি টুকু কাটলেই ঘুম ভেঙে গেল। ছিটে ফোটা বৃষ্টি জানলা দিয়ে মাথায় এসে পড়ছে। উঠে বসে রইলাম তরুণীর মুখের দিকে চেয়ে। চারিদিকে ভোরের আলো ফুটেছে। একটা শুভ্র সতেজ সকাল যেন আমার জন্য তৈরি হয়ে আমাকেই দুর্বল করে দিল। ব্যাগ থেকে একটি কাগজ বের করে বড়বড় করে লিখলাম --- তোমার চোখের পলকে বিশ্বাসের ভোরে একটি শুভ্র সতেজ সকাল তোমায় উপহার দিলাম। 

কাগজ টিকে তরুণীর সীটের পাশে আটকে দিলাম। 

সকাল হলে সকলেই ঘুম থেকে উঠে পড়ল। আমিও এক কাপ গরম চা কিনে চুমুক দিয়ে হৃদয় উষ্ণতা কে বাড়িয়ে নিলাম। সব কিছু যেন এবার শেষ হবার পালা। ট্রেন অবশেষে এনজিপি স্টেশনে এসে থামল। সবাই নিজের জিনিস পত্র গুটিয়ে নামতে শুরু করল। ভদ্রলোকটিও ব্যাগ গুছিয়ে আমায় উদ্দেশ্য করে বললেন --- আবার দেখা হবে তোমার সঙ্গে, পৃথিবীটা অনেক ছোট ---- তবে জানি না কবে কোথায় ---- তোমার ইন্টারভিউ জন্য অনেক শুভেচ্ছা। 

তরুণীও ঘুম থেকে উঠে চোখ মুখে জল দিয়ে এসে সীটে বসতেই আমার লেখা কাগজ টি লক্ষ্য করলে। এবার ও তার মুখের অভিব্যক্তির প্রকাশ পেলাম না। সারাক্ষণ তরুণী একটি কথাও বলেনি --- যেন জোর করে তাকে বিয়ে দিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। একে একে অনেকেই নামতে শুরু করল ---- নতুন যাত্রীরা উঠে এসে সীট পূরণ করল। ভদ্রলোক টিও সপরিবারে ট্রেন থেকে নেমে চলে গেলেন। আমি তখন ও বসে থাকলাম। মনে হল এক প্রাচীন বন্ধনকে কেউ জোর করে ভেঙে দিচ্ছে ---- বুকের হৃৎপিণ্ড টা কেউ বের করে এনে খেলা করছে। শুধু যার প্রতি এত অনুভব তাকে কোনও মায়ায় জড়াতে দেখলাম না। নিশ্চিহ্ন মুখ করে আমার জীবন থেকে নিশ্চিন্তে চলে গেল। প্রতিটি মুহূর্ত স্মৃতি হয়ে মনে ধাক্কা খাচ্ছে।

মাথা নিচু করে আমি সীটে বসেছিলাম। একাকীত্ব আমায় জড়িয়ে ছিল। মনটা হা হুতাস করলেও চোখ বুজে মনটা কে শক্ত করে ব্যাগ কাধে নিয়ে উঠতেই তরুণীর সীটে বসা নতুন যাত্রীটি আমায় একটি কাগজ দিয়ে বললেন ---- এই কাগজটি মনে হয় আপনার, উড়ে এখানে চলে এসেছে।

কাগজ টি হাতে নিয়ে দেখলাম তাতে লেখা রয়েছে ---- হয়তো তুমি আমায় কিছু বলতে চেয়েছ। বলতেই পারতে।

বুঝতে পারলাম এটি আমায় উদ্দেশ্য করে লেখা। নতুন যাত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাড়াতাড়ি করে ট্রেন থেকে নেমে বেড়িয়ে এলাম তরুণীর খোঁজে। স্টেশন তন্নতন্ন করে খুজলাম --- কোথাও পাইনি। স্টেশনের একটি জায়গায় প্রচন্ড ভিড়। কাছে গিয়ে একটি ও চেনা মুখ দেখলাম না। অবশেষে স্টেশন থেকে বেড়িয়ে এলাম।

আনন্দলোক নার্সিং কলেজের ঠিকানা যোগার করে একটু স্বস্তি পেলাম। সূর্য মধ্য গগনে ছুইছুই। গাড়ি ধরে সোজা আনন্দলোক নার্সিং কলেজে পৌঁছলাম। তরুণীর নামই জানি না। সমস্ত বিল্ডিং ভালো করে খুজেও কোথাও পেলাম না। গার্ডম্যান অবৈধ প্রবেশের জন্য আমায় ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিলেও বাইরের গেটে অপেক্ষা করতে লাগলাম। বুকে ভরসা ছিল নিশ্চয়ই একবার দেখা হবে। বেলা গড়িয়ে পড়লে কলেজের এক স্টাফ কে জিজ্ঞাসা করলাম --- কলেজ এডমিশন কি চলছে? 

----- ভর্তি প্রক্রিয়া অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। 

তরুণীর দেখা পেলাম না

হার মেনে নিতে বাধ্য হলাম। তাড়াতাড়ি ইন্টারভিউ অফিসের ঠিকানা দেখে সেখানে পৌঁছলাম। সেখানে জানতে পারি ইন্টারভিউ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। হতাশ মনে অফিস থেকে বেড়িয়ে এলাম। স্টেশন ফিরে যেতে অনেক রাস্তা। গাড়ি করে আসাই যেত --- তবু সেই দীর্ঘ রাস্তা একা হাটতে শুরু করলাম। রাস্তা দিয়ে ঘনঘন গাড়ি ছুটতে শুরু করল। হাজার হাজার মানুষ নিত্য কাজে ছুটে বেড়াচ্ছে। সবার আড়ালে অচেনা মুখের মাঝে আমি চেনা মুখটি খুজতে শুরু করলাম। মনে হচ্ছিল আমি যেন এই পৃথিবীর বাইরের কেউ যার নিজের কোনও দুনিয়া নেই। রাত হয়ে গেল। অবশেষে স্টেশনে এসে পৌঁছলাম। ট্রেন পরের দিন তাই সারা রাত স্টেশনে কাটাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি সীট দেখে বসে রইলাম। ক্লান্তি তে চোখ দুটি বুজে আসলেও নীরবে আচ্ছন্ন হতে পারিনি। আমার চোখ দুটি কে স্মৃতি মাখা তরুণীকে পাহারা দিতে বলেছি। চোখ বন্ধ করলে যে আধার নামে ---- আধার কালোই আমার প্রেয়সী কে হারিয়ে ফেলতে পারি।

আকাশ জুড়ে বৃষ্টি নেমেছে। নিশ্চিন্তে বসা জায়গা দিয়ে অবিরত জল ছুটছে। তাই উঠে গিয়ে স্টেশনেই একটি আচ্ছাদিত জায়গায় বসলাম। মুখ তুলে চাইতেই দেখি সেই তরুণী বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বৃষ্টির ফোটা গুনছে আর সেই ভদ্রলোক যেন আমার দিকেই আসছেন। কিছুক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে রইলাম আমি। 

আমি কিছু বলতে যাবার আগেই ভদ্রলোক বললেন --- মেয়ে আমাদের ছেড়ে থাকতে চাইল না তাই ফিরে যাচ্ছি।

হাসি খুশি মানুষ টাকে কাদতে দেখলাম। আমারই ক্ষণিকের দেখা যখন বিরহ হয়ে আমার মনে দাগ কাটল বুঝলাম বিরহের বেদনা কতখানি------ ভদ্রলোক কিভাবে তাঁর কন্যা কে ছেড়ে থাকবেন।

শেষ বারের মত সাহস নিয়ে ভদ্রলোক কে বললাম --- আমি আপনার মেয়েকে একটি কথা বলতে পারি? 

 ------ হুম, কেন পারো না। বলো- ও তো তোমার বন্ধুরই মত। শুধু কোনও প্রশ্ন করো না। উত্তর পাবে না। 

----- কিন্তু কেন? 

------ ও যে কথা বলতে পারে না কিন্তু শুনতে পায় সবই ---- তুমি বলতে পারো।

বুক ফাটিয়ে চিৎকার করে অনেক কিছুই বলতে ইচ্ছা করছিল কিন্তু সবই যেন কেমন থেমেথেমে গেল। নীরব চোখের দিকে শুধু চেয়ে রইলাম ---- বেদনার অশ্রু আমার গাল বেয়ে নামতে লাগল। তরুণীকে কিছুই বলতে পারিনি ---- তবে তার আর নাম জানা হল না। 

বাইরের বৃষ্টিটা থেমে গিয়েছিল ঠিকই কিন্তু মনের বৃষ্টি আজও ঝড়ে পড়ে।

Post a Comment

Previous Post Next Post