তোমরা যারা প্রেমের গল্প শুনতে ভালবাসো এ গল্প তাদের জন্য নয়। কারন, এটা ঠিক প্রেমের গল্প নয়। সমাজের চোখে যা ঠিক "অপবিত্র অপ্রেম" বা সোজা কথায় বলতে গেলে ব্যভিচার বা পাপ, এ হলো সেই গল্প।
এক ছিল মেয়ে। তার ছিল প্রেমে পড়ার স্বপ্ন। সেই মেয়ে ছিল কালো। মিশ কালো নয় বটে, তবে কালো তাকে এক কথায় সকলেই বলবে। অথচ, শুধু ওই রঙ টুকু বাদ দাও। এবার নিয়ে এসো তোমাদের রাজ কন্যাকে সামনে। হার মানবে সে। হ্যাঁ হ্যাঁ, জোর গলায় বলছি, সে হার মানবে। তোমাদের রাজকন্যা হার মানবে। আমাদের সেই কালো মেয়ের কী ছিল না। যেমন তার ঠোঁটে লেগে থাকত মিষ্টি চোরা হাসি, তেমনি ছিল সুরেলা গলা। আর তার চোখ দুটি যেন দুই স্বপ্নের দেশ। তুমি অনায়াসে সেখানে হারিয়ে যেতে পারো। সেই চোখের তারার পানে একবার যদি তোমার চোখ পড়ে, আর যদি তুমি তাতে ডুব দিয়েছ, তোমাকে সেই অথৈ জল থেকে তোলে কার সাধ্য।
সেই মেয়ে জানত না তার রূপের আগুনের খবর। সে জানত, যে সে হলো কালো মেয়ে। ওই যারা প্রজাপতির মতো ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়, সেই রূপা, শেলী, মীরা, ভাস্বতি, রেবা ওদের থেকে সে অনেক অনেক দূরে। তার জন্য কোনো রাজপুত্র তো দূরের কথা, কোনো মুর জাতির ছেলেও এই গ্রহে জন্মায় নি। তাই সে মনে মনে প্রেমের বাসনা নিয়ে পুষে রেখেছিল বুকের খাঁচায়।
আমাদের প্রবীরের নজর পড়েছিল তার উপর। প্রবীরের নামটা যখন এসেই গেল, তার কথা একটু বলি। প্রবীর হলো এক দুষ্টু ছেলে। ঘোষালদের লিচু বাগানে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে তার বাঁ পা টা গিয়েছিল ভেঙে। একবার নাগের পুকুর এক দমে পার করার বাজি ধরে তার প্রাণ যায় যায় হয়েছিল। সেই প্রবীর লেখাপড়া তেমন না করলেও স্কুলে নামটা তার কাটা যায় নি। তাই স্কুলের নিয়ম মেনে যে বছর সে নাইনে উঠলো আমাদের মেয়েটা সেই বছর উঠলো সেভেনে। প্রবীর নিজেও অবশ্য জানত না যে সেই মেয়ের গভীর চোখে সে ডুব দিয়েছে। শুধু জানত তার নাম হলো কলি। এক পাড়ায় একটা পুকুরের এপার আর ওপার মাত্র। পুকুর যে - নদী হলে তবু রবি ঠাকুরের নজর পড়ত। কিন্তু পুকুরের এপার ওপার নিয়ে যে কারো মাথা ব্যথা নেই। তাই তো শ্রাবণের বর্ষণে যখন পুকুর যখন জলে ভরে উঠত জলে, আর তার চারপাশের সবুজের দল হতো আহ্লাদে আট খানা, তখনও ওরা বুঝত না ওদের ভিতরে চলছে কেমন জোয়ার ভাঁটা।
আমাদের কালো মেয়েটাকে ছোট থেকেই দেখত প্রবীর। শুধু দেখত। যেমন সে দেখত ওই তালের সারি আর জাম গাছের পাতার বাহার। ঠিক সেই রকম। সেই ছোট্ট কলির একটু একটু করে বেড়ে ওঠা প্রবীরের নজর এড়িয়ে গেছিল। সে তেমন প্রাণ ভরে কখনো দেখেনি কলিকে। যেমন সে দেখত পুকুরের জলে মৃদু ঢেউ। একটু হাওয়া খেললেই কেমন খেলে যায় ঢেউ, সেই রকম ভাবেই দেখেও সে না দেখে ছিল কলির ছোট্ট শরীরের ঢেউ। কৈশোর কবে যে কলিকে একটু একটু করে জড়িয়ে ধরেছিল দেখেনি প্রবীর। যেদিন দেখল, সেদিন তার চোখ গেল আটকে। দৃষ্টি আর ফেরে না। বয়সে সে একটু বড় বটে। তবে তবে এমন বড় নয় যে চোখের শাসনে রাখবে পাড়ার ছোট্ট মেয়েটাকে। নিজের চোখ যদিও বা সরালো অনেক কষ্টে মন তার গেল বিঁধে কিশোরী কলির রূপের গভীরে। কলি কিছুই জানল না।
দিন যায়। মাস যায়। কলি আর ছোট থাকে না। সে ছোট থাকতে চায় ও না। সে একটু বড় হতে চায়। প্রবীরের চোখের তারার সঙ্গে তার দৃষ্টির মিলন হলো না বটে; তবে সে যে প্রবীরের অস্তিত্বের কিছুই জানত না তেমন নয়। সে যখন ভাবত তার কল্পনার প্রেমিকের কথা, চোখ বুঁজলে যেন সামনে ভেসে উঠত প্রবীরের মুখ। লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠত আমাদের কলি। তার স্বপ্নিল চোখে তখন যেন শুকতারার ঝলক।
এক বসন্ত পূর্ণিমায়, পাড়ায় লেগেছে বুড়ির ঘর পোড়ানোর হিড়িক। আকাশে উজ্জ্বল চাঁদ। পুকুরের পাড়ে তৈরি হয়েছে বুড়ির ঘর। অন্ধকার গাঢ় হতেই সেই বুড়ির ঘরে লাগানো হলো আগুন। বাচ্চারা চিৎকার করে বলল -
"আজ আমাদের নেরা পোড়া
কাল আমাদের দোল।
পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে
বলো হরিবোল।"
সবাই যখন চিৎকার করে ছড়া বলছে, কলি আর প্রবীর তখন দেখছে বুড়ির ঘরের আগুনের ঝলকানির সামনে কেমন লাগছে ওদের পরস্পরকে। প্রবীর সেদিন প্রথম দেখলো কলির চোখের যাদু ভাষা। আর কলি যেন শুনলো প্রবীরের না বলা কথা গুলো। কলির কানে সমস্ত হুল্লোড় ছাপিয়ে একটা কথাই যেন ভেসে আসতে চাইলো - "ভালবাসি কলি, আমি ভালবাসি"।
আগুনটা তখনো জ্বলছে দাউ দাউ করে। সকলের উল্লাস আর চিৎকার চলছে। আগুনের শিখা অনেক উঁচুতে উঠে গেছিল সেদিন। ভীতু কলির মনে একটু ভয় হচ্ছিল। মায়ের কাছে গিয়ে মায়ের হাতটা ধরে কলি বলল - মা, বড্ড ভয় করছে।
মা বলল - দূর পাগলী, ভয় কিসের?
কলি বলল - ওই যে আগুন কত উঁচুতে।
মা বলল - ঘরে যাবি?
- না।
- দেখো মেয়ের কান্ড। এদিকে ভয় করে। আবার ঘরেও যাবে না।
এরপর আগুন গেল নিভে। সকলেই ব্যস্ত হয়ে পড়লো বুড়ির ঘর থেকে পোড়া আলু বের করতে। সব কটা আলু বের করে সবাই মিলে হৈ হৈ করে সেই আলু খেতে থাকলো। সে এক বিচিত্র পরিবেশ। কিছুক্ষণ পর সবাই ঘরে ফিরলো। মায়ের হাত ধরে ফিরলো কলি'ও। কিন্তু, তার মনের আগুন নিভল না।
পরদিন ছিল দোল। সকলে খেলল রঙ। প্রবীর সেদিন সারা শরীরে রঙ মেখেছে। বুড়ির ঘরের এক গাদা কালো ছাই নিয়ে তাতে তেল মাখিয়ে কে যেন প্রবীরের মুখে লাগিয়ে দিয়ে গেছে। খুব রাগ হলো প্রবীরের। কিন্তু কিছু করার নেই। আজ যে দোল। মারামারি করার দিন এটা নয়।
কলি আজ দোল খেলেনি। মা বলেছিল খেলতে। ও বলল, শরীর ভাল লাগছে না। কিন্তু একটুও রঙ না মেখেও কলির মন সেদিন যেন পেয়ে গেছে বসন্তের ছোঁয়া। আজ সবেতেই সে দেখছে রঙ।
গল্পের শুরুতেই আমরা বলেছি, মেয়েটার ছিল প্রেমে পড়ার স্বপ্ন। ওদের বাড়ির পাশের পুকুরে যখন প্রবীর এলো স্নান করতে, তখন বেলা প্রায় গড়িয়ে গেছে। প্রবীরের ওই কালি মাখানো মুখের ছিরি দেখে তার সে কী হাসি। হাসতে হাসতে সে ছুটে গেল মায়ের কাছে। কিন্তু কেমন যেন ভয় হলো। সেই সময় সে নাইনে পড়ে। "এত বড়" মেয়ের এমন অকারণ হাসি মা হয়তো বরদাস্ত করবে না। তাই মায়ের কাছে গিয়ে সে গোপন করলো হাসি। লুকিয়ে আর্সির ফাঁক দিয়ে দেখলো পুকুরে স্নানের দৃশ্য।
সেবার পাড়ায় রবীন্দ্র জয়ন্তী। সারা পাড়া যেন মেতে উঠেছে। পাড়ার লোকেরা কলির মাকে বলল - বেশ তো গান করে তোমার মেয়েটা। আমাদের অনুষ্ঠানে করুক না একটা গান। রাজি হলো কলির মা। কলি গান করবে। খবরটা সেভাবে জানত না প্রবীর। অনুষ্ঠানে নাম ঘোষণা হতেই সে জানলো। সেদিন কলি গাইল -
"আমার পরান যাহা চায়"
গানের এত শত বোঝে না প্রবীর। গান তার কাছে লিচু চুরির মতো এমন কাজের কাজ নয়। সে কলির গান শুনলো বটে, তবে তার অর্থ কিছুই বুঝল না। সেদিন যেটা তার ভালো লাগলো সেটা হলো কলির মিষ্টি গলার স্বর। গান চলার সময় সে দেখেছিল কলির চোখ। তার চোখে চোখ পড়তেই কলি যেন থমকে যায়। কেটে যায় তাল। সমে এসে আর মিলতে চায় না গানের মুখ। প্রবীর এসবের কিছুই বোঝে না। সে শুধু চেয়ে থাকে কালো মেয়েটার চোখের দিকে। যেন যাদু আছে সেই দৃষ্টিতে।
প্রবীরের কাছের বন্ধু সোম। প্রবীর তাকে বলে কলির কথা। বলার মতো কিছুই তখন তৈরি হয়নি। তবু যেন সে বলে শেষ করতে পারে না। সোম বলে - কি বলতে চাস তুই?
- আরে সেটাই তো জানি না। খুব ভালো লাগে জানিস।
- মানে? তুই কী প্রেমে পড়লি?
- কি জানি ভাই। বলতে পারব না।
- তাহলে গিয়ে প্রপোজ কর একদিন।
- তোর কী মাথা খারাপ?
- কেন? এটা কী পাপ নাকি?
- আরে এই বয়সে এসব কথা বাড়িতে জানলে আমাকে দূর করে দেবে।
- তাহলে বলিস না।
কথা তাদের সেখানেই শেষ হয়।
ইতিমধ্যে প্রবীরের বাবার বদলির খবর আসে। ওরা চলে যায় শিলিগুড়ি। কলির প্রেমের সেখানেই সমাপ্তি ঘটে। গল্পটা এই ভাবে শেষ হয়ে যাবে সেটা বোধ হয় গল্পকার নিজেও জানত না। বাসন্তীর এই ছোট্ট গ্রামের দুই নবীন প্রেমিক প্রেমিকার প্রেম গড়ে ওঠার আগেই শেষ হয়ে যায়। এটা একদম সত্যি কথা। যতই খারাপ লাগুক এটা সকলকে মানতেই হবে। কারন সত্য নিষ্ঠুর হলেও সে সত্য।
কলির বয়স যখন উনিশ তখন ওর মামার বাড়ি থেকে এল এক বিয়ের যোগ্য পত্রের খবর। মেয়ের পড়াশুনা রইল পড়ে। কলির বাবা মা ধুমধাম করে ওর বিয়ে দিয়ে দিল। কলি বিয়ে করে নতুন বরের সাথে চলে গেল শ্বশুর বাড়ি শান্তিপুর। সে শুনেছিল পাত্র ভালো চাকরি করে। পরে জানলো পঞ্চায়েত সমিতির অফিসের কেরানী। তাতেই তার বাবা মা মনে করলো অমূল্য রতন। কিন্তু কয়েক মাস যেতে না যেতেই রতনের মুখোশ খুলে গেল। রাতে সে আকন্ঠ মদ খেয়ে বাড়ি ফেরে। শ্বশুর বাড়িটা যেন একটা জেলখানা বলে মনে হয় কলির। তার শাশুড়ি তাকে শিখিয়ে নিয়েছে সব কাজ। ওদের প্রচুর চাষ বাস আছে। ধান সিদ্ধ থেকে ধান ভাঙা পর্যন্ত সব কাজ তাকে করতে হয়। মাত্র দুই বছরের মধ্যে কলিকে প্রসব করতে হলো সন্তান। তখন তার বয়স একুশ। সব দিক সামলাতে গিয়ে কলি হলো নাজেহাল। কলি এখন ছেলের মা। সংসারের সব ঘাটের জল খেয়ে সে যেন ভুলেই গেল তার ছিল একটা অতীত।
কলির ছেলেটা এখন ছয় বছর বয়সী। সে স্কুলে পড়ে। কলি নিজেই তাকে পড়ায়। সংসারে তাদের অভাব নেই। কিন্তু কলির জীবনটা যেন এক যন্ত্রণার পাহাড় হয়ে উঠেছে। সে যেন মুক্তি চায় এই বন্দী দশা থেকে। বাপের বাড়ি যাওয়ার কথা সে নিজেই তুলল শাশুড়ির কাছে। শেষ পর্যন্ত শ্বশুরের চেষ্টায় তার ছুটি মিলল। ছেলেকে নিয়ে সেবার গ্রীষ্মের ছুটিতে কলি গেল বাপের বাড়ি। সদর ঘাট থেকে নৌকা চড়ে কলি যেন মুক্তির স্বাদ প্রাণ ভরে নেওয়ার চেষ্টা করলো। সুন্দরবনের নোনা বাতাস তার কানে কানে বলে দিয়ে গেল, সব যেমন ছিল তেমনই আছে - কেবল কলি গেছে বদলে।
কলি মনে মনে আর্তনাদ করে উঠলো। না, সে বদলায়নি। সে সেই আগের কলিই আছে। কিন্তু, নদীর ঢেউ গুলো যেন হাসতে হাসতে একে অন্যের গায়ে ঢলে পড়তে থাকলো। ওরা যেন কলিকে বিদ্রুপ করছে। নৌকার এক কোণে এক মুখ দাড়ি ওয়ালা একটা লোক বসে আছে। তার দৃষ্টি যেন নদীর পাড়ের গোটা জঙ্গল টাকেই গিলতে চাইছে। এই জঙ্গল কলির খুব চেনা। ছোট থেকে সে এই জঙ্গলের পাশেই বেড়ে উঠেছে। তারা একে বলে বাদা বন। বাইরের কত মানুষ এখানে আসে ঘুরতে। লোকটা মুখ ফিরিয়ে পশ্চিম থেকে পুবে র দিকে তাকালো। কলির চোখ যেন একটা চেনা কিছুর খোঁজ পেলো। কে লোকটা? সেই দৃষ্টিও ঘুরতে ঘুরতে কলির চোখের উপর এসে থামলো। কি যেন বলতে চায় লোকটা। চোখ সরায় না। কলি মাথা নীচু করে। পরপুরুষের দিকে এভাবে তাকানো শোভনীয় নয়। গ্রামের লোকেরা দেখলে খারাপ বলবে।
নৌকা এসে ভিড়লো ঘাটে। পারানির পয়সা দিয়ে ওরা ঘাট ছাড়লো। লোকটা এগিয়ে আসে কলির দিকে। একদম সামনে আসে। কলির ছেলেটা ভয় পেয়ে মায়ের হাতটা শক্ত করে ধরে। লোকটা সামনে এসে বলে, "কলি না?"
একটু ঘাবড়ে যায় কলি। এবার ঠিক চিনেছে সে। সেই দুষ্টু ছেলেটা। এক গাল দাড়িতে মুখ ঢেকে ও নিজেকে আড়াল করতে পারে নি। কলি ভাষা খুঁজে পায় না।
প্রশ্ন আসে - কেমন আছ কলি?
"কলি আর নেই", জবাব দেয় কলি। সংসারের ঘানি টানতে টানতে সে এখন কলুর বলদ।
একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে লোকটা বলে - আমি যে সেদিন বলতে পারিনি কলি। আজ শুধু একটা কথা বলব।
- কি?
- আমি কিন্তু আর কারো হতে পারিনি।
- প্রবীর দা!
- হ্যাঁ কলি। মনটা শুধু একজনকেই দেওয়া যায়। এই গ্রামের স্কুলে পড়াই। একা থাকি। মা বাবা গত হয়েছেন। তবে সেই বাড়িতে আর থাকি না। হাটখোলা র কাছে একটা ঘর করেছি। সেখানেই থাকি।
- কলি এবার কেঁদে ওঠে ফুঁপিয়ে। "আমি যে শেষ হয়ে গেলাম প্রবীরদা"।
- কিছুই শেষ হয় না। যেখানে শেষ হয় সেখান থেকেই আবার শুরু হয়।
প্রবীর হাতটা বাড়ায় কলির দিকে। কলি তার শীর্ণ হাতটা এগিয়ে দেয়। সেটা শক্ত করে ধরে প্রবীর।
এবার নিজেকে সামলাতে পারে না কলি। কান্না ভেজা গলায় সে বলে, "সেদিন কেন বললে না বলো?"
- বড্ড ছোট ছিলাম কলি। ভাবলাম ফিরে এসে তোমাকে পাব। তখন সব বলব। কিন্তু, ফিরে এসে শুনলাম আমার কলির পথ এখন ভাগ হয়ে ঘুরে গেছে অন্য দিকে। আর কখনো সেই পথ আমার সঙ্গে মিলবে না।
এবার কলি তার হাত খানা বাড়িয়ে চেপে ধরলো প্রবীরের হাত। মুখে সে বলল, "আবার যদি নতুন করে সব শুরু করি?"
প্রবীরের মুঠো আলগা হয়ে আসে। সে বলে, "দুটো পথ দুই দিকে বাঁক নিয়েছে। সেই দুটো পথকে মেলাতে যাওয়ার চেষ্টা বৃথা। আমার পথ ঘরের কাছেই এক ঝোপের পাশে, এক চেনা পরিসরে মিলে মিশে আছে। তোমার পথ যে নতুন দিশা খুঁজে নিয়েছে। সেই পথ ছেড়ে তোমার আসা চলে না। তোমার ভবিষ্যত তোমার হাত শক্ত করে ধরে আছে কলি। আর আমার ভবিষ্যত তোমার স্মৃতির বোঝা। এটা নিয়েই না হয় বাঁচলাম।
সেদিন কলি আকুল হয়ে কাঁদলো। সে বোধ হয় শত কষ্টেও কখনো এই ভাবে কাঁদে নি। হঠাৎ মুখটা ফিরিয়ে নিয়ে সে এক রকম দৌড়েই যেন দূরে চলে গেল।
প্রবীর তাকে আটকালো না। তার চলে যাওয়া পথের দিকে এক দৃষ্টে চেয়ে রইল প্রবীর। সে জানে, ভিতরে যতই উথাল পাথাল হোক, এই সত্য তাকে মেনে নিতেই হবে। এটাই যে বাস্তব। তার প্রেম জীবনের চলার পথে একটা অসমাপ্ত গল্প হয়েই টিকে রইল।