" আমাদের গেছে যেদিন শুধুই কি গেছে , কিছুই কি নেই বাকি ? " ঈশার এই কথার উত্তরে সম্বিত ফিরতেই অপু বলে উঠলো , " তা কেনো ? সবই তো একই আছে , শুধু পাল্টে গেছে আমাদের অবস্থা।" মনে পড়ে গেলো কত স্মৃতি। হারিয়ে যাওয়া স্মৃতির ভারে ওরা আজ ম্রিয়মান।
অপুর মনে পড়লো প্রথম দেখার কথা , ঈশা আসলে অপুর সম্পর্কে আত্মীয় হয়। যেদিন ঈশা অপুদের বাড়িতে প্রথম এলো , প্রথম দেখাতেই দুজনেরই দুজনের প্রতি একটা ভালোলাগা তৈরি হয়ে গেল। সেই ভালোলাগা পরবর্তীতে ভালোবাসাও হয়ে গেল। ওরা নিজেদের আত্মীয়তার সম্পর্কের কথা ভুলে গিয়ে ভালোবাসার জোয়ারে নিজেদের ভাসিয়েও দিল। তবে একটা কথা ওরা জানতো যে , ওদের এই ভালোবাসা কোনোদিনই পরিণতি পাবে না ! তাই ওরা ঠিক করল যে, দুজনে এইভাবেই সারাজীবন প্যারালালভাবে থেকে যাবে। পরবর্তীতে দুজনে নিজেদের মতো করে সংসারে প্রবেশ করলেও , আজও ওরা দুজনই দুজনকে ভালোবাসে। নিজেদের সংসার জীবনের বাইরে গিয়ে ওরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকে। সম্প্রতি ওদের ভালোবাসার পঁচিশ বছর হয়ে গেলো। কোনোদিনই ওরা কেউ কাউকে নিজের করে পাবে না জেনেও একজন আরেকজনকে ভালোবেসে চলে।
এই পঁচিশটা বছর কোথা দিয়ে যে কেটে গেল কে জানে ! অপু হঠাৎই ঈশাকে বলে উঠল যে , " তোমার মনে আছে সেই প্রথম দিনের কথা ! উত্তরে ঈশা বলে উঠল , মনে থাকবেনা আবার ! তুমি বলতে পারবে কেন আর কবে থেকে আমায় ভালবাসলে ? ঈশার এই কথার উত্তরে অপু বলে এটাই তো আমি সবসময় ভাবতে থাকি , কিন্তু জানো, এর উত্তর আমারও জানা নেই। আসলে ভালবাসার যে কোন বাঁধাধরা নিয়ম নেই , আমাদের এই ঘটনা সেটাই প্রমাণ করে ।" এই বলে ঈশা থামলেও তার মনের ভেতরে জমে থাকা অভিমান সে উগরে দেয় অপুর ওপরে। আসলে ঈশা মনে করে অপু যদি আরেকটু উদ্যোগী হত , তবে তাদের এই সম্পর্ক অন্য মাত্রা পেত। আসলে চারিদিকে সব ভালোবাসাই যেখানে পূর্ণতা পায় , সেখানে ওদের ভালোবাসা কেন পূর্ণতা পেল না, সেই উত্তরই ঈশা সবসময় খুঁজে বেড়ায় !
এখনের সম্পর্ক বলতে আমরা যা দেখি , তাতে শুধুই চাওয়া - পাওয়ার হিসেব! ভালোবাসার ছিটে ফোঁটাও থাকে না। অথচ , এই সেদিন পর্যন্তও সম্পর্কগুলোর একটা মানে ছিল। তাতে চাওয়া - পাওয়ার হিসেব ছিল না বললেই চলে। আসলে চাওয়া - পাওয়ার থেকেও বড় ব্যাপার ছিল পরস্পর পরস্পরকে ভরসা করা , বিশ্বাস করা। যা আজকের দিনে একেবারেই বিরল। তাই তো আজ মতের অমিল হলেই দুজন দু দিকের পথ ধরে ! আজকের সম্পর্ক জানে না , কালকে থাকবে কিনা ! সম্পর্ক টিকে থাকে পরস্পরের মধ্যে বোঝাপড়া ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে। যা আজকের জেনারেশন ভাবতেই পারে না। তাই তো তারা ঈশা ও অপুর সম্পর্কের মত সম্পর্কগুলোকে বলে
" ন্যাকা রোমান্স "।