এই কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা । এটা কি তা আমি বলতে পারব না । নভেম্বর মাস, অল্প অল্প শীত পড়েছে । দুর্গাপুরের জঙ্গলময় রাস্তা গুলো কুয়াশাচ্ছন্ন। রাত তখন ক'টা হবে? এগারো টার আশেপাশে । একটা বিয়েবাড়ি থেকে ফিরছি। অনেকদিন বাদে বিয়েবাড়ি তে আনন্দ হুল্লোর একটু বেশি ই হয়েছে । মহামারী অনেক কিছু কেড়ে নিলেও আনন্দ কেড়ে নিতে পারে নি। তবু চেনা মানুষের হারিয়ে যাওয়ার কষ্ট গলায় কাঁটা বেঁধার মতো থেকে যায় । যাইহোক সেদিন খুব মজা করে বাড়ির পথে রওনা হয়েছি। আমার স্বামী মোটরবাইক খুব আস্তেই চালাচ্ছিল। চারদিকে শুনশান, রাস্তার কুকুর গুলো ও গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। হালকা কুয়াশার চাদর শহরটাকে ঢাকছে। প্রায় দু কিমি পথ অতিক্রম করেছি। আরও কিছু টা যেতে হবে। হঠাৎ সামনে থেকে একটা ডাম্পার এসে প্রায় আমাদের গা ঘেঁষে চলে গেল বেশ দ্রুত গতিতে । তীব্র আলোয় চোখ ঝলসে গেল, রাস্তার পাশে একটু দাঁড়ালাম। তারপর খানিকটা যেতে ই দেখলাম, একটা বন্ধ দোকানের নিচে একটি মেয়ে দাড়িয়ে আছে । কোনো স্টুডেন্ট বলে মনে হলো । কিন্তু অত রাতে সে একা কেন দাড়িয়ে আছে খেয়াল হতেই আমি আমার স্বামী কে কথাটা বললাম । সে কিন্তু কাউকে দেখেনি। কারণ সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিল। পাশের দোকান গুলো লক্ষ্য করে নি। যাইহোক ভাবলাম কোন্ শিক্ষক এত দেরি করে ছেড়েছে বা মেয়ে টি কার অপেক্ষাতে আছে একবার খোঁজ নি। তাই পিছনে আবার আমরা সেখানে গেলাম । কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার কাউকে দেখতে পেলাম না । অথচ আমি স্পষ্ট দেখেছি । আমার স্বামী বলল যে আমি সব ভুলভাল দেখেছি । অতরাতে কেউ থাকতেই পারে না । আর কথা না বাড়িয়ে আমরা বাড়ির পথ ধরলাম। মেনরোড ধরে কিছু টা যাবার পর বাঁ দিকে বাঁক নিয়ে ঘন জঙ্গলঘেরা রাস্তা দিয়ে কিছু টা গেলেই আমাদের বাড়ি । আমরা সেই রাস্তা ধরলাম। রাস্তায় কিন্তু কোনো আলো নেই । রাস্তার দুপাশে অব্যবহৃত কোয়াটার গুলি ভাঙ্গা চোরা অবস্থায় পড়ে আছে । জঙ্গলে ঢেকে গেছে । সেখানে শুধু বুনো শুয়োর আর বিষাক্ত সাপ থাকে । আমি একবার ঐ রাস্তাতে যেতে আপত্তি করেছিলাম কিন্তু রাত হয়ে যাচ্ছে তাই শর্টকাট রাস্তা ই বেছে নিলাম । এমনিতে চুরি-ছিনতাইয়ের ভয় নেই । কিছু টা যাবার পর দূর থেকেই আবার রাস্তার আলো চোখে পড়ল। আশ্বস্ত হলাম বাড়ির কাছাকাছি এসে গেছি বলে । হঠাৎ কি মনে হতে অন্ধকার রাস্তার পাশের কোয়ার্টার গুলি তে চোখ বুলাতে দেখলাম, কেউ যেন ফাঁকা কোয়ার্টারের ছাদে দাঁড়িয়ে আছে । আমি পেছন ফিরে আবার তাকিয়ে দেখি, যে দাড়িয়ে আছে তার পা প্রায় মাটিতে ঠেকেছে । মুহূর্তেই মেরুদণ্ড দিয়ে যেন শিহরণ বয়ে গেল, বুক ধরফড় শুরু হলো । তা সত্তেও আবার তাকালাম । তখন আমরা আলোর রাস্তায় পৌঁছেছি। কিন্তু দূর থেকেই সেই দৃশ্য দেখতে পেলাম । দু মিনিটে বাড়ি ফিরে দেখি আমি পুরো ঘেমে গেছি। হাত -পা ঠান্ডা ।ফ্যান চালিয়ে একটু বসলাম । আমার স্বামী কে দ্বিতীয়বারের কথাটা আর বললাম না।জানি বিশ্বাস করবে না । সেদিন সারা রাত আর ঘুম এলো না । পরদিন একটু জ্বর এল। আমার স্বামী বলল, এত ঠান্ডার মধ্যে এসে আবার ফ্যান চালিয়ে বসলে তাই এই অবস্থা !!!!
Tags:
বাংলা গল্প