একটি মেয়ের জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা, তারপর এগিয়ে চলা সবটাই হয় পরের তরে। অন্তত বেশিরভাগ মানুষ ই তাই মনে করে। তাই তো সেই মেয়েটি যখন দুঃসাহসিক কোনো কাজ করে বসে তখন সবাই আমরা খুব ই অবাক হই। বলতে গেলে প্রথমটায় বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয়। আজ এরকম ই এক মেয়ের কথা বলবো।
জন্মগত প্রতিবন্ধকতা মেয়েটিকে আটকে রাখতে পারেনি। বরং সবকিছুতে , সবার কাছে না শুনতে শুনতে তার জেদ আরো বেড়ে গিয়েছিল। নিয়মমতো প্রথমে শৈশব ও পরে কৈশোর পেরিয়ে সে যখন যুবতী অবস্থায় পৌঁছল, তখন তারই বয়সী আর পাঁচজনের থেকে সে মানসিকভাবে অনেক এগিয়ে ছিল। আসলে যারা চোখে কম দেখে , বা দেখেই না। তারা কিন্তু আর পাঁচজনের থেকে অনেক বেশি জগৎসংসার দেখতে পায়। অন্ধ বলে তাকে যারা দয়া ,করুণা দেখায় তারা যে অনেকক্ষেত্রেই লোক দেখানো কাজ করে , সেটা সেই ব্যক্তি ছাড়া আর কেউই বুঝতে পারে না। এই মেয়েটিও প্রতিবন্ধী থাকাকালীন তার প্রতি বেশিরভাগ মানুষের আচরণ যে লোক দেখানোই ছিল , তা এই মেয়েটি খুব ভালোই বুঝতো। তাই তো আর সবার থেকে সে নিজেকে মানসিকভাবে অনেক শক্ত - পোক্ত করে তুলেছিল।
তার এই বেড়ে ওঠার সময়ে একেকবার একেকরকম সমস্যাকে কাটিয়ে সে এগিয়ে গেছে তার অফুরান স্বপ্নকে লক্ষ্য করে। অল্পবিস্তর বাধা যা অন্যদেরকে পর্যুদস্ত করলেও এই মেয়েটিকে কিন্তু করতে পারেনি। যেকোনো সমস্যাকে সমস্যা বলে না ভেবে সমাধানের রাস্তা বের করার চেষ্টাই করে গেছে সে বরাবর। প্রাক বিবাহ ও বিবাহোত্তর জীবনের সমস্যা , যা আপাতদৃষ্টিতে দেখলে বৃহত্তর সমস্যা বলে মনে হবে , মেয়েটি একা লড়ে গেছে তার জন্য। এই সংগ্রামে তার পাশে কেউ ছিল না এমনকি তার ভালোবাসার মানুষটিও নয়। ছিল তার শিক্ষা , অদম্য মনের জোর আর যেকোনো কিছুকে ভয় না পেয়ে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ও ক্ষমতা।
বিবাহের পূর্বে মেয়েটির একজন ভালোবাসার মানুষ ছিল। কিন্তু পরিবারের চাপে তাকে আর পাওয়া হয়ে ওঠেনি। এই যন্ত্রনা তাকে সবসময় কুঁড়ে কুঁড়ে খেলেও বর্তমান ভালোবাসার মানুষটির প্রতি তার কোনো খামতি ছিল না। কিন্তু হায় সেই মানুষটি বুঝলে তো ! তার মন অন্যজায়গায় বাঁধা।
ছোট থেকে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠলেও স্বামীর সুখ না পাওয়া মেয়েটিকে সাময়িকভাবে অসহিষ্ণু করে তুলেছিল। সেই অবস্থা ছেড়ে এসে সে এখন জীবনের মধ্যাহ্নে পৌঁছেছে। এখন আর কারোর অবহেলাই তাকে টলাতে পারে না। নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে এসে সে এখন অন্য মনের মানুষ হয়ে উঠেছে। পেছন ফিরে সে আর দেখতে চায় না। সব কর্তব্যকর্ম ঠিকমতো পালন করে সামনের দিকে এগিয়ে চলাই তার কাছে শ্রেও মনে হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হলো এরকম ঘটনা অনেকের জীবনেই ঘটে। তারা সবাই কি এই মেয়েটির মতো লড়াকু তৈরি হয় ? জীবনযুদ্ধে সবাই কি বিভিন্ন বাধা কাটিয়ে এইভাবেই এগিয়ে চলে ? পাশে কাউকে না পেয়ে একা একা যে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছনো যায় , তাও কি সবাই সম্ভব বলে মনে করে ? শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ইরাবতীকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করেছিল বলেই সে তার জীবনের আগত সব বাধাকে তুচ্ছ জ্ঞান করতে পেরেছিল। তাই সবাইকেই বলি , যে বা যারা শারীরিকভাবে সুস্থ সবল হয়েও মানসিকভাবে খুব ই দুর্বল , তারা শুধুমাত্র ইরাবতীর মতো নিজেদের শক্ত মনের মানুষ হিসেবে তৈরি করতে হবে। মনে রাখতে হবে জীবন একটাই। তাই তাকে উপভোগ করার সম্পূর্ণ অধিকার প্রত্যেকের আছে। সেই অধিকারের প্রশ্নে কারোর কোনো আপত্তি বা বাধাকে মূল্য দেওয়াই চলবে না। যতই আমরা বলি না কেন , " সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে "। এসব অন্য ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এমনিতে নিজের জীবনকে চালানোর প্রশ্নে সব বাধাকে উপেক্ষা করে জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যেতেও হবে আবার জয়লাভও করতে হবে। তার জন্য চাই অদম্য মনের জোর , যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে স্থির রাখা। সেখানেই হবে ' ইরাবতী'র জয়।
