' বাবা ' এই ডাকটা যেনো সবকিছু ভুলিয়ে দিয়ে বলে , " আমি আছি তো ভয় কিসের ? এগিয়ে যা পেছন ফিরিস না ! " এই ভরসার জায়গা থেকেই আমরা সব বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাই সাফল্যের দিকে। তিনি যতই গম্ভীর , রাশভারী হোক না কেনো , মনে যে বড়ই কোমল , তার প্রমাণ ও আমরা অনেকক্ষেত্রে পাই। তাঁকে আমরা আসল রূপে পাই , যখন কিনা একাধারে বাবা এবং মা দুয়ের ভূমিকাই তাঁকে নিতে হয় । কিন্তু বলাই বাহুল্য সে ক্ষেত্রেও কিন্তু তিনি অসামান্যতার পরিচয় দিয়ে থাকেন।
এই বিষয়ে একটি সত্য ঘটনার অবতারণা করি। আমার এক বন্ধু অনেক ছোটো বয়সে মাকে হারায়। কিন্তু এই সেদিন পর্যন্ত সে মা হারানোর ব্যথা অনুভব করেনি। কারণটা অবশ্যই তার বাবা। কোনোদিন সেই অভাবটা বুঝতে দেননি তিনি। চুল বেঁধে দেওয়া থেকে শুরু করে , বেড়াতে নিয়ে যাওয়া , ভালো ভালো রান্না করে খাওয়ানো মেয়ের সঙ্গে বন্ধুর মতো মেশা , কি করেন নি তিনি ! নিজের কাজের বাইরে তিনি মায়ের ভূমিকা নিতেন বাড়িতে। মেয়ে অসুস্থ হলে , সেবা যত্নের ও ত্রুটি রাখতেন না তিনি। এমনকি মেয়ের যাতে নজর না লাগে , তাই কোথাও যাওয়ার সময় মেয়ের নজর পুড়িয়েও দিতেন তিনি । কিছু মাস হলো তিনি প্রয়াত হয়েছেন। আমার বন্ধুর কথায় সে এবার সত্যি সত্যি মাতৃহারা হলো। কারণ খুব ই ছোটো বয়সে মা কে হারানোয় , মার কথা ওর সেভাবে মনেই পড়ে না।
আমার জানা এই সত্যি ঘটনার মতো এরকম আরও অনেক ঘটনাই আছে। অনেক ক্ষেত্রে বাবা নিজে না খেয়ে সন্তানের জন্য খাবার তুলে রেখেছে , হাতে অল্প টাকা এলে সন্তানের জন্য ভালো পোশাক কিনে এনেছে। নিজে যা হোক কিছু পরে কাটিয়ে দিয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মায়েদের কড়া শাসন থাকলেও ছেলে - মেয়ে বাবার কাছে গিয়ে আশ্রয় নেয়। কারণ সে যে পরম আশ্রয়ের ই জায়গা। তাই তো কাজের তাগিদে সারাদিন দেখা সাক্ষাৎ না থাকলেও মাঝরাতে বাবার স্পর্শ সবাইকেই আপ্লুত করে তোলে। যখন কোনো ছেলে বা মেয়ে বাবাকে সবদিক থেকে ছাড়িয়ে যায় , তখন বাবার আনন্দের শেষ থাকে না।
আজ এমন দিনে আমি এই লেখা লিখতে বসেছি , যেদিন টা আপামর বাঙালির আবেগের মানুষ , ভালোবাসার মানুষের চলে যাওয়ার দিন । তাঁর আরেকটা পরিচয় হলো তিনি পিতা হয়েও একাধারে পিতা ও মাতার ভূমিকা নিয়েছিলেন। অল্প সময়ের মধ্যে স্ত্রী বিয়োগের পরে তিনি তাঁর সন্তানদের বুক দিয়ে আগলে রেখেছিলেন। জীবনে মৃত্যু তাঁকে ঘিরে ধরলেও তিনি দমবার মানুষ ই ছিলেন না। প্রত্যেক সন্তানের ভালো মন্দ , তাদের শিক্ষা , স্বাস্থ্য , বৈবাহিক জীবন সবকিছু নিয়েই ছিল তাঁর বড় চিন্তা। জামাইদের ও তিনি নিজের সন্তানদের মতোই স্নেহ করতেন। তাই তো তাদের কোনো আচরণ ই তাঁকে বিপর্যস্ত করতে পারতো না। বড়ো বৌমাকে নিজের মেয়ে ছাড়া কিছুই ভাবতেন না। সন্তান - সন্ততিদের প্রতি এই দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ , তাঁকে আর পাঁচজন স্নেহশীল পিতার সমান করে তোলে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে আমাদের প্রাণের মানুষ , মনের মানুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে একজন বাবা কে এক ই সারিতে বসানো যায়।
পরিশেষে বলি , ' বাবা ' নামক মানুষটি আমাদের কে সবসময় ই বট গাছের মতো ছায়া প্রদান করে। তাই বলি অবাক হওয়ার কিছু নেই , যখন আমরা এই গম্ভীর , রাশভারী মানুষটিকে সহজ , সরল ভূমিকায় দেখি, আসলে মানুষটিতো তাই ই। আমরা দেখে অভ্যস্ত নই , তাই অবাক হই। ব্যতিক্রম বাদ দিলে , বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাবারা এরকম ই হয়। স্নেহশীল , কর্তব্যপরায়ণ বাবাদের কথা মাথায় রেখেই " শ্রাবন্তী মজুমদার ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এর সেই বিখ্যাত বাবা ও মেয়ের গান - কাটেনা সময় যখন আর কিছুতে ..... " এই গানটিতে ' বাবা ' যে কত ভূমিকা নিতে পারে একজন সন্তানের জীবনে, তা খুব ই সুন্দর করে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এর থেকে একটা কথা পরিষ্কার যে , সন্তানের জীবনে মায়েদের পাশাপাশি বাবাদের ভূমিকাও খুব একটা কম নয়।
