কদর : মধুমিতা পাল


ঘরের মধ্যে চারবন্ধুর জোর আড্ডা চলছে। মাঝে মাঝেই এরকম আড্ডা বসে শতরূপের বাড়ীতে।ওর মতে এতে যে অক্সিজেন পাওয়া যায় তাতে কাজের উৎসাহ কয়েকগুণ বেড়ে যায়।


গান ছাড়া কী আর আড্ডা জমে-----এই বলে শতরূপ পুরানো মিউজিক প্লেয়ারটা বের করে গান চালিয়ে দেয়।

এটা এখনও এত সুন্দর রেখেছিস? সাউন্ডটাও তো দারুণ-----বলে ঋভু।

হুঁ হুঁ বাবা, কদর করতে জানতে হয়। ভালোবাসার জিনিসকে যত্নে রাখলে সারাজীবন একইরকম থাকবে।-----ঋভুর উত্তরে কথাগুলো বলে শতরূপ।


ঠিক সেসময় চা আর গরম গরম কাটলেট নিয়ে ঘরে ঢোকে শিবাঙ্গী।

ওর দিকে তাকিয়ে রাজেশ বলে-----

সব ভালো জিনিসের কদর সবাই করতে জানে না রে। মিউজিক প্লেয়ারটা বন্ধ কর, বরং শিবাঙ্গীর একটা গান শুনি। অনেকদিন হয়ে গেল ওর গান শুনিনি।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শিবাঙ্গী বলে----

দূর গান, কতদিন রেওয়াজই করা হয়নি। সংসারের চাপে ওসব কবেই চুকে-বুকে গেছে। তোমরা বরং গান শুনতে শুনতে গল্প গুজব করো আমি শ্বশুর মশাইকে চা টা দিয়ে ছেলেকে টিউশান থেকে নিয়ে আসি।


 শিবাঙ্গীর দীর্ঘশ্বাস শতরূপের চোখ এড়ায় না। ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে শতরূপ ভাবে, বিয়ের এই কয়েক বছরের মধ্যেই শিবাঙ্গী কেমন যেন শুকিয়ে গেছে।আগের সেই লাবণ্য চঞ্চলতা আর নেই। সত্যিই তো বহুদিন হয়ে গেল শিবাঙ্গী আর গানও গায়নি, রেওয়াজও করেনি। অথচ একসময় এই শিবাঙ্গীর গান ছিল শতরূপের ভীষণ প্রিয়। শুধু শতরূপ কেন যেই শুনতে সেই প্রশংসা করত।দুএকবার ও গানের কথা শিবাঙ্গীকে বলেছে,তবে সময় নেই বলে প্রতিবারেই এড়িয়ে গেছে।আসলে যতদিন গেছে ততই সংসারের সব দায়দায়িত্ব শিবাঙ্গীর উপর চাপিয়ে দিয়ে ও নিজের অফিস আর বন্ধুবান্ধব নিয়ে আছে। সত্যিই ভালো জিনিসের কদর সবাই করতে পারে না।

Post a Comment

Previous Post Next Post