স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে লেখা কিছু কথা ২০২১ : ঈশিতা ভট্টাচার্য



    একদিন ছোট্ট তোজো তার বাবাকে বললো যে, বাবা আজ থেকে আমি স্বাধীন । আমার ব্যাপারে তোমাদের আর প্রয়োজন নেই। কথাটা শুনে অপূর্ব হেসে উঠলো। বললো তাই নাকি ? তা তোমার ব্যাপার কি শুনি ? তোজো বললো তোমাকে বলবো কেনো ? বললাম না এটা আমার ব্যাপার, তোমাদেরকে বলা যাবে না। আমি একা ম্যানেজ করবো। এবার অপূর্ব সত্যি ভাবতে লাগলো যে , তোজো এই স্বাধীনতা শব্দটা শুনলো কোথায় আর তার এরকম ব্যাখ্যা ই বা করলো  কি করে ? কেউ কি ওকে কিছু বুঝিয়েছে ? স্ত্রী সৃজাকে কথাটা বলতেই ও বললো যে , তোজো র স্কুলের মিস নাকি স্বাধীনতা দিবস উদযাপন নিয়ে কিসব বলেছে , তারপর থেকেই তোজো বাড়িতে  এইসব বলা শুরু করেছে। 


    এখন প্রশ্ন হলো , স্কুলের মিস এর কথা শুনে   এইটুকু একটা বাচ্চা যদি স্বাধীনতা উপভোগ করতে চায় , তাহলে বড়রাই বা কেন চাইবে না ? কিন্তু সমস্যাটা  হলো , স্বাধীনতা উপভোগের নামে কিছু মানুষ যে  স্বেছাচারী হয়ে ওঠে তা সত্যিই কাম্য নয়।

 

  পরবর্তীতে বলি , স্বাধীনতার ৭৫ বছরে পা রেখে আমরা কি জোর গলায় বলতে পারি যে, আমরা স্বাধীন ? স্বাধীনতা মানে  উন্মুক্ত পোশাকে একা একা ঘুরে বেড়ানো নয় , মুখে ইংরেজী ভাষায় অনর্গল কথা বলা নয় আবার  স্বাধীনতা মানে অপরের প্রতি উগ্রতা , অহংকার দেখানোও নয়। স্বাধীনতা মানে চিন্তা ভাবনায় স্বাধীন হওয়া।অর্থাৎ মনে স্বাধীন হওয়া। অপর কে স্বাধীনভাবে বাঁচতে দেওয়া। অবশ্যই  মত প্রকাশের অধিকারী হওয়াও স্বাধীনতার ই অঙ্গ। যা এখনও অনেক মানুষ ই পেরে ওঠে না। আর যারা পারে , তাদের দিকে আঙুল তুলে কটূক্তি করা  হয় । নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস , কোনো বিষয়ে সঠিক ধারণা , এসব হলেই যে কেউ যে কোনো বিষয়ে স্বাধীন মত প্রকাশ করতে পারে। 


    স্বাধীনভাবে নিজের মত দিতে পারেননি বলেই তো এখনও আফশোষ হয় নীতাদেবীর। অল্প বয়সী মেয়েদের দেখেন আর ভাবেন তিনিও যদি এদের মতো  নিজের ক্যারিয়ারের অজুহাত দেখিয়ে নিজেকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে না বাঁধতেন অর্থাৎ বিয়েতে মত না দিতেন , তাহলে তাঁরও গ্র্যাজুয়েট  হওয়াটা হতো। আজ ছেলে বউ , মেয়ে জামাই নিয়ে ভরা সংসারে তাঁর স্বাধীনতা কই ? সবাই তাঁকে মান্য করলেও স্বাধীনভাবে বাঁচা তাঁর আর হওয়া হলো না। তাই তো অবসন্নতায় ভরা জীবনের কথা ভাবতে বসলে তাঁর মনে হয় যে, স্বাধীনতা এনেছিল যাঁরা , তাঁরা কি সত্যি ই এটা ভেবেছিল ?


 যতই আমরা নারী স্বাধীনতার কথা বলি না কেনো স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও আমরা নারীরা সত্যি কি স্বাধীন ? পুরুষদের সাথে এক করে দেখতে সত্যি ই আমাদের কোথাও কী আটকায় না ?  যেসব নারীরা এসবের পরোয়া করে না , সমাজ তাদেরকে খুব একটা ভালো চোখে দেখে না। তাহলে স্বাধীনতার অর্থ হলো বিদেশিদের থেকে নিজেদের মুক্ত করে নিজেদেরই শৃঙ্খলে নিজেদের আবদ্ধ করা ! যদি সত্যি ই তাইই হয় , তবে এই স্বাধীনতা বৃথা। 


শেষে বলি , শুধুমাত্র নিজে স্বাধীন হওয়া নয় , অপরকেও স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়াতে হবে। সেদিনই আসবে সত্যিকারের " স্বাধীনতা "।

Post a Comment

Previous Post Next Post