সেলফোনের রিং বাজতেই শাড়ি পড়তে পড়তেই দেখলো ট্রুকলারে লেখা অ্যাডভোকেট তপন চৌধুরী ধরলো ধৃতি ।-- হ্যালো।
(ফোনের ওপার থেকে ) ম্যাডাম, প্রয়াস সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি আজ অন্যভাবে হচ্ছে। আমাদের এক সদস্যের দূর্ঘটনা ঘটেছে। তাই আমরা গাড়ি নিয়ে নিজেরাই পৌঁছে দেবো জগদ্ধাত্রী প্রতিমা, আলোকসজ্জা ও প্যান্ডেল প্রদর্শনের পুরস্কারগুলো ক্লাবে ক্লাবে। পরবর্তীতে কখনো আপনাকে ডাকবো।
ধৃতি জানালো-- ও কে।
মনে মনে ধৃতি বুঝলো, ডাল মে কুছ কালা হ্যায়।
যোগাযোগ করেছিল যে ভানু সিংহ তার সঙ্গে বেলা এগারোটাতেও কথা হয়েছে। সে বাইরে আছে। বলল- আমি আপনার বায়োডাটা পৌঁছে দিয়েছি ম্যাম। আপনি কিছু পুরস্কার তুলে দেবেন। আর স্বরচিত কবিতা পাঠ করবেন। ওরা আপনার সম্মান দক্ষিণা দিতে পারবে না। তবে আপনাকে যথাযথ সংবর্ধনা দিয়ে বরণ করবে।
ধৃতি উত্তর দিয়েছিল - টাকার দরকার নেই। আমি যাচ্ছি।
তিনটেয় অনুষ্ঠান আর বেড়োনোর মুখে এই নিষেধ সংবাদে ধৃতির শুধু মন খারাপ নয়, আত্মসম্মানেও
লাগে। অনেক বলে কয়ে তার জীবনসঙ্গীকে পাকিস্তান ভার্সেস সাউথ আফ্রিকার ক্রিকেট ম্যাচ দেখা ফেলে যেতে রাজী করিয়েছিল ধৃতি। বলেছিল-ছবি তুলবে তুমি। আমি ফেসবুকে টাইম লাইনে পোস্ট দেবো।বৌমাকে বলে শাড়ির সঙ্গে ম্যাচ করে হার-দুল পড়েছে। ছেলে বলেছে-ফেরবার পথে বিরিয়ানি আনতে। এখন সব পরিকল্পনা সাজ-গোজ বানচাল হলো। মন মেজাজে চাপ পড়লো ধৃতির।
লিখতে ও গল্প পড়তে মন বসলো না। ভানু সিংহকে বিষয়টি হোয়াটসঅ্যাপে জানালো । সে দেখছে না দেখে যার কাছে থেকে ভানু ধৃতির নতুন ফোন নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করেছিল সেই শঙ্খকে ফোন করলো। শঙ্খ জানালো হ্যাঁ ম্যাডাম। আসুন সেই যে প্রয়াসের খবর ছবি আপনার নবদিগন্ত পত্রিকাতে প্রকাশিত করতেন সেই সংস্থার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিকেল চারটেতে। আমার বাবাও যাবেন।
ধৃতির কাছে বিষয়টি পরিস্কার হলো। সাংস্কৃতিক জগতে মানুষে মানুষে ঈর্ষা অতিরিক্ত। সবাই সবাইকেই টপকাতে চায় ! নির্লজ্জ চক্ষুলজ্জাহীন শিক্ষিত সমাজ! ধৃতির এই অভিজ্ঞতা নতুন নয়। স্পষ্ট কথা বলার জন্য শত্রুর অভাব নেই ধৃতির।
আর এই উকিল! উকিলদের কাজই তো মিথ্যাকে যুক্তি দিয়ে সত্যি করা। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেব সাধে কি ডাক্তার আর উকিলের অন্ন খেতেন না ! মেজাজ খারাপ করে অগত্যা টি ভি দেখতে থাকে ধৃতি, মনে তার ক্ষোভ আর যন্ত্রণা মিলেমিশে একাকার।